জলবায়ু

জলবায়ু তহবিলে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি চীনের

ওয়াশিংটন সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে হাত মিলিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় আর্থিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন
<p>Presidents Obama and Xi at a previous summit meeting in Beijing in November 2014. Friday&#8217;s announcement builds on the Sino-US climate agreement from late last year (Image by Chuck Kennedy / White House)</p>

Presidents Obama and Xi at a previous summit meeting in Beijing in November 2014. Friday’s announcement builds on the Sino-US climate agreement from late last year (Image by Chuck Kennedy / White House)

কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় অভিযোজন সক্ষমতা বাড়াতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রায় তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে চীন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ দেশুগুলোকে সহযোগিতার ক্ষেত্রে কোনো একক দেশ থেকে এটিই প্রথম বড় ধরনের আশ্বাস।

ওয়াশিংটন ডিসি’তে এক যৌথ বিবৃতিতে ঝি জিং পিং ও বারাক ওবামা এ বছরের শেষে প্যারিসে সই হতে যাওয়া জলবায়ু চুক্তিকে আরো অর্থবহ করে তোলার অভিপ্রায়ে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। গত বছর নভেম্বরে দেয়া এক ঘোষনার উপর ভিত্তি করে এই ঐক্যমতে পৌছাতে সম্মত হয় দুই দেশ। গত বছরের ওই ঘোষনায় চীন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরন সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাবে এবং যুক্তরাষ্ট্র ২০২৫ সালের মধ্যে গ্রীন হাউজ গ্যাস নিঃসরনের মাত্রা ২৬ – ২৮% হ্রাস করবে।

মূলত চলতি মাসের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্র-চীন আঞ্চলিক সরকারের মধ্যে পারস্পরিক প্রতিশ্রুতির উপর ভিত্তি করে এই ঘোষনাটি দেয়া হয়েছে। তখন বলা হয়েছিল গ্রীন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ বৃদ্ধি এবং স্বল্প-কার্বন প্রযুক্তি বিনিময়ে একে অপরকে সহযোগিতা করবে।

গত শুক্রবারের যৌথ ঘোষনায় আরো যেসব বিষয়ে দু’পক্ষ সম্মত হয়েছে তা হচ্ছে: – কার্বন নিঃসরন হ্রাসে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে সেসব বিষয়ে একে অপরের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরির লক্ষ্যে একযোগে কাজ করা যাতে এসব ক্ষেত্রে আরো স্বচ্ছতা আনা যায়।

হোয়াইট হাউজের একটি ফ্যাক্টশিটে বলা হয়েছে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে পার্থক্য নিরুপনের মতো জটিল একটি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় অগ্রগতি হয়েছে।

– সময়ের সাথে সাথে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার গুরুত্বের বিষয়টি নিয়ে সহমত হয়েছে যার মধ্য দিয়ে আগামী শতাব্দীতে বিশ্ব অর্থনীতিতে ‘লো কার্বন এনার্জি’র (স্বল্প কার্বন এনার্জি) দিকে ধাবিত হওয়া।

– আগামী ২০১৭ সালের মধ্যে ন্যাশনাল এমিশনস ট্রেডিং সিস্টেম (জাতীয় নিঃসরণ বাণিজ্য ব্যবস্থা) চালুর বিষয়ে চীনের প্রতিশ্রুতি। এই ব্যবস্থায় চীন বিদ্যুত উৎপাদন, স্টীল, সিমেন্টসহ অন্যান্য শিল্পকে সম্পৃক্ত করবে। পাশাপাশি ‘গ্রীন ডিসপ্যাচ’ ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে দেশটির বিদ্যুত গ্রীডে স্বল্প কার্বন উৎস ব্যবহার করা হবে।চীনের এই পদক্ষেপগুলোর সাথে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্লিন পাওয়ার প্ল্যানের’সামঞ্জস্য রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র তার ক্লিন পাওয়ার প্ল্যানের মাধ্যমে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুত ও জ্বালানী সেক্টরে কমপক্ষে ৩২% কার্বন নিঃসরন কমিয়ে আনার ব্যাপারে আশাবাদী। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই ‘হেভি-ডিউটি ভেহিকেল এফিসিয়েন্সি স্ট্যান্ডার্ড’ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে যা আগামী ২০১৬ সালের মধ্যে চূড়ান্ত হবে এবং বাস্তবায়ন হবে ২০১৯ সাল থেকেই। এছাড়া দুই দেশই ক্ষতিকর হাইড্রো ফ্লুরো কার্বন’র (HFCs) ব্যবহার হ্রাস করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা দু’দেশের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে তবে তারা মনে করেন এই উদ্যোগের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য দেশেরও সম্পৃক্ত থাকা উচিত যারা ব্যাপক আকারে কার্বন নিঃসরন করছে।  ‘প্যারিসে একটি কার্যকরী ফল পেতে হলে কেবল যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের এই উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। অন্যান্য বড় কার্বন নিঃসরনকারী দেশগুলো এই জি-২ (চীন ও যুক্তরাষ্ট্র) উদ্যোগকে যথেষ্ট মনে করে পিছিয়ে গেলে চলবে না। নিরাপদ জলবায়ুর প্রত্যাশা রচনায় ইউরোপের বিভিন্ন উদ্যোগ ও ক্ষতিগ্রস্থ দেশের কথাও শুনতে হবে।’নিজের মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে একথা বলেন লিজ গ্যালাঘের। তিনি ইথ্রিজি’র (E3G) একজন বিশেষজ্ঞ।

ইথ্রিজি একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান যারা জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে গবেষনা পরিচালনা করে থাকে।

জলবায়ু তহবিল সংক্রান্ত চীনের এই প্রতিশ্রুতিকে জাতিসংঘের জলবায়ু আলোচনার ক্ষেত্রে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে, যদিও জি -৭৭ ও বিআরআইসিএস (ব্রিকস) প্রেক্ষাপটে দেশটির সুষ্পষ্ট প্রভাব রয়েছে। উল্লেখ্য, গত বছর প্রায় একই ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

চীনের নতুন এই প্রতিশ্রুতি তার আগের এ সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতির চেয়ে অনেক বেশি। ৩.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থ সাহায্যের এই ঘোষনা গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতির চেয়েও অনেক বেশি। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ওই সহায়তার বিষয়টি এখনও তাদের কংগ্রেসে আটকে আছে। এ তথ্য জানান গ্রীনপিসের জলবায়ু কর্মী লি শুয়ো।

ইতিবাচক ইঙ্গিত

বেসরকারী বিনিয়োগকারীদের নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে চীনের গত শুক্রবারের দেয়া ঘোষনাটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এসবব বিনিয়োগকারী বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে ব্যাপক ভিত্তিতে পরিবেশ দূষণ ও কার্বন নিঃসরন করছে। চায়নাডায়লগের সাথে আলাপকালে লি বলেন, সমগ্র বিশ্বের প্রতি চীনের পক্ষ থেকে এটি একটি অত্যন্ত শক্তিশালী বার্তা। এর অর্থ হচ্ছে চীন কয়লার মতো অন্যান্য অপরিশোধিত ফসিল ফুয়েল ব্যবহারের পথ পরিহার করে নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহারের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

চীনের কেন্দ্রীয় সরকার এরই মধ্যে স্বল্প কার্বন জ্বালানী ব্যবহার এবং জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। গত জুনে জাতিসংঘে এই পরিকল্পনা জমা দেয়া হয়। এছাড়াও সাউথ- সাউথ ক্লাইমেট ফান্ডে’র পরিকল্পনার উদ্দেশ্যে গত ডিসেম্বরে লিমায়ও নিজের জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনা পেশ করে চীন।

অবশ্য জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে বিপদগ্রস্থ দেশগুলো জানতে আগ্রহী যে পৃথিবীর বড় বড় কার্বন নিঃসরনকারী দেশগুলো জলবায়ু তহবিল গঠন ও ব্যয় কীভাবে করা হবে তা জানতে আগ্রহী। ২০০৯ সালে কোপেনহেগেন জলবায়ু সম্মেলনে উন্নত দেশগুলো ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর একশ’ বিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এ মুহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র এই তহবিল বৃদ্ধিও দাবী জানিয়ে আসছে।

কার্বন বাণিজ্য

জাতিসংঘে জমা দেয়া নিজস্ব জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কর্ম পরিকল্পনায় ২০১৭ সাল থেকে কার্বন বাণিজ্যের আগ্রহের কথা তুলে ধরেছিল চীন। এ মুহুর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ চুক্তি হওয়ার ফলে তা আরো ত্বরান্বিত হবে মনে করেন থমসন রয়টার্স পয়েন্ট কার্বন’র গবেষক হংলিয়াং চাই। তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো চীনের ক্যাপ-অ্যান্ড- ট্রেড নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেন রাষ্ট্রপতি ঝি।

তার মতে, গ্রিন ডিসপ্যাচ পদ্ধতি সংক্রান্ত যে প্রস্তাবনা চীন দিয়েছে তা আসলে দেশটির বায়ু শক্তি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন এবং বিদ্যুত নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের প্রতি এক ধরনের ইতিবাচক মনোভাবেরই বহি:প্রকাশ।

 

এই লেখাটি প্রথমবারের মতো প্রকাশিত হয় চায়নাডায়লগ.নেট

অনুবাদ: নুসরাত জাহান

 

Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.

Strictly Necessary Cookies

Strictly Necessary Cookie should be enabled at all times so that we can save your preferences for cookie settings.

Analytics

This website uses Google Analytics to collect anonymous information such as the number of visitors to the site, and the most popular pages.

Keeping this cookie enabled helps us to improve our website.

Marketing

This website uses the following additional cookies:

(List the cookies that you are using on the website here.)