পানি

নৌপথে পর্যটকদের সমগ্র সুন্দরবন ঘুরে দেখার সুযোগ দিতে সম্মত ভারত ও বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান যৌথ নদী ব্যবস্থাপনায় সহায়তার পাশাপাশি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনে পর্যটকবাহী নৌযান পরিচালনায় একটি চুক্তি সইয়ের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে প্রতিবেশী দেশ দু’টির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার পথ আরো গভীর হবে বলে মনে করা হচ্ছে
বাংলা
<p>Spotted deer in the Sundarbans [image by gordontour/Flickr]</p>

Spotted deer in the Sundarbans [image by gordontour/Flickr]

দুই দেশের মধ্যে পর্যটকবাহী নৌযান পরিচালনায় শীঘ্রই একটি চুক্তি সইয়ের বিষয়ে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। এই চুক্তিটি সইয়ের মধ্য দিয়ে দু’দেশের পর্যটকদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনে নৌপথে পরিভ্রমণ করার সুযোগ উন্মোচিত হবে।

এরই মধ্যে উভয় দেশ এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে। খুব শীঘ্রই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় এই চুক্তিটি সই হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশের নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা দ্যথার্ডপোল.নেটকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবছর ফেব্রুয়ারিতে ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে সফরের কথা ছিল। তবে এই সফর কিছুটা পিছিয়ে গেছে বলে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

‘এ মুহুর্তে আমরা একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিজার (এসওপি) অর্থাৎ সাধারণ পরিচালনা পদ্ধতি প্রণয়নের কাজ করছি, এই প্রক্রিয়াটির মধ্য দিয়ে সুন্দরবনের দুই অংশেই পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করবে। একই সাথে এর মাধ্যমে এসব জাহাজ চলাচলেল জন্য নৌ-পথগুলোও চিহ্নিত করা হবে।’ দ্যথার্ডপোল.নেটকে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রফিকুল ইসলাম।

সমঝোতা স্মারক থেকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, জাহাজগুলো পর্যটকদের নিয়ে সুন্দরবনের বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন অংশে ভ্রমন করবে। তবে এ মুহুর্তে পর্যটকদের জাহাজ থেকে নামার কোনো অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। ভ্রমনকালীন সময়ে তারা কেবল জাহাজেই অবস্থান করবেন এবং সেখান থেকেই তারা সুন্দরবনের সৌন্দর্য্য উপভোগ করবেন। আর এই জাহাজগুলো পরিচালনা করবে দু’দেশের বেসরকারী পর্যটন সেবা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

নৌ-পথ এবং গন্তব্য

এই চুক্তির আওতায় ভারতের কোলকাতা বন্দর থেকে বাংলাদেশের মংলা বন্দর পর্যন্ত আসা ও যাওয়ার প্রচলিত যে রুটটি রয়েছে সেটিকেই প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে।  এই রুটটিই আভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন ও বাণিজ্য প্রোটকলের আওতায় উভয় দেশ দীর্ঘদিন যাবত ব্যবহার করে আসছে। এই রুটে মূলত পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ চলাচল করে থাকে। তবে নৌ-পর্যটনকে আরো বেগবান করতে এই রুটটিকে সেইন্ট মার্টিনস দ্বীপ ও কক্সবাজার পর্যন্ত সম্প্রসারিত করার পক্ষে বাংলাদেশ।

তবে দু’দেশের মধ্যে নৌ পর্যটন চালুর আগে আরো বেশ কিছু প্রক্রিয়া নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা প্রয়োজন। অতিরিক্ত সচিব মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এখনও পর্যন্ত আমরা এই নৌ-রুটে কী ধরনের জাহাজ চলাচল করবে, কতগুলো জাহাজ চলবে এবং সপ্তাহে কতদিন এসব জাহাজ চলাচল করবে সেসব বিষয় এখনও চূড়ান্ত করতে পারিনি। পাশাপাশি উভয় দেশেই এখন পর্যন্ত  ‘পোর্ট অব কল’ নির্দিষ্ট করা হয়নি।

স্বাগত জানিয়েছে জল ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা

বাংলাদেশ স্থাপত্য ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জলসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক আতাউর রহমান মনে করেন এই চুক্তির মধ্য দিয়ে দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার পথ আরো সম্প্রসারিত হবে। তিনি বলেন, আমার মনে হচ্ছে এই ধরনের কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে দু’দেশের সব নদীগুলোতে যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হবে যা একসময়ে বেশ প্রচলিত ছিল। আর এটি চালু হলে নদীগুলোতে নৌচলাচলের জন্য পর্যাপ্ত জলের প্রবাহ নিশ্চিত করতে দুই সরকারই যৌথ ভাবে কাজ করবে বলে আমার বিশ্বাস।

তবে পর্যটকবাহী জাহাজের কারনে যাতে সুন্দরবনের কোনো ধরনের ক্ষতি না হয় সরকারের পক্ষ থেকে সে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে মনে করেন তিনি।

অধ্যাপক আতাউর বলেন, ‘চুক্তি সইয়ের আগে উভয় দেশেরই উচিত নৌ পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনে কী ধরনের দূষণ, (যেমন -শব্দ দূষণ) হতে পারে তা নিরুপন করা। পাশাপাশি এখানকার জীববৈচিত্র্য যাতে কোনো ধরনের হুমকির মধ্যে না পড়ে সে বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চুক্তিতে তা সম্পৃক্ত করা।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে সুন্দরবন সংলগ্ন নদীগুলোর মধ্য দিয়ে কয়লা ও তেলবাহী জাহাজ দূর্ঘটনা ও জাহাজডুবীর ঘটনায় বনের জীববৈচিত্র্য মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। গত জানুয়ারির শুরুর দিকেও একটি কয়লাবাহী জাহাজ সুন্দরবনের খুব কাছাকছি ডুবে যায়।

আরো জানতে পড়:সুন্দরবনে ফের জাহাজ দূর্ঘটনা!

সুন্দরবন ও পর্যটন

সুন্দরবনের আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে রয়েছে এই বনের ৬০ শতাংশ, আর বাকি ৪০ শতাংশ রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এই ম্যানগ্রোভ বনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, গাঙ্গেয় ও ইরাবতী ডলফিন, ইন্ডিয়ান মেছো বাঘ, ইন্ডিয়ান ভোঁদর ও চিত্রা হরিণসহ নানা প্রজাতির বিরল প্রানীয় আবাস রয়েছে। এছাড়াও এখানে প্রায় ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ ও ২৬৯ প্রজাতির বন্যপ্রানী রয়েছে।

বাংলাদেশ ও ভারত, উভয় দেশেই সুন্দরবন একটি অত্যন্ত জনপ্রীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। তবে যেহেতু, সুন্দরবনটি দু’টি দেশের সীমান্তের মধ্যে অবস্থিত, তাই পর্যটকরা কেবল সুন্দরবনের একটি অংশই ঘুরে দেখতে পারেন।

 

নৌ-পরিবহনের জন্য চলমান প্রোটকল রুট

বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশই আভ্যন্তরীন নদ-নদী ও উপকূলীয় নৌ-পথে পন্য পরিবহনের জন্য দু’টি চুক্তি ও প্রোটকল সই করেছে। আভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন (ট্রানজিট) বাণিজ্য প্রোটকলটি ১৯৭২ সাল থেকে চলমান রয়েছে। এই প্রোটোকলের আওতায় পণ্যবাহী মাঝারি ও বড় ধরনের জাহাজ দু’দেশের ৮টি রুট দিয়ে চলাচল করে থাকে।

বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তথ্য অনুযায়ি এই প্রোটকলের আওতায় ২০১৫-২০১৬ সালে দু’দেশের মধ্যে সবমিলিয়ে ২,৬৫১ বার জাহাজ চলাচল করেছে। এসব জাহাজে ফ্লাই অ্যাশ, কয়লা, স্টিল কয়েল এবং লৌহ আকরিক পরিবহন করা হয়।

এদিকে ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের সময় দু’দেশের মধ্যে অপর একটি উপকূলী নৌ-পরিবহন চুক্তি  সই হয়। এই চুক্তির আওতায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো বাংলাদেশ ও ভারতের উপকূলীয় বন্দরগুলো ব্যবহার করতে পারবে। এর মধ্য দিয়ে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সাথে ভারতের যোগাযোগ আরো বৃদ্ধি পাবে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরের সময় আরো একটি চুক্তি সই হতে পারে। এই চুক্তি সই হলে ভারতের জাহাজগুলো বাংলাদেশের প্রধান দু’টি সমুদ্র বন্দরও ব্যবহার করার সুযোগ পাবে।

 

আবু সিদ্দিক ঢাকায় কর্মরত একজন সাংবাদিক। আবু সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম [email protected]

Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.

Strictly Necessary Cookies

Strictly Necessary Cookie should be enabled at all times so that we can save your preferences for cookie settings.

Analytics

This website uses Google Analytics to collect anonymous information such as the number of visitors to the site, and the most popular pages.

Keeping this cookie enabled helps us to improve our website.

Marketing

This website uses the following additional cookies:

(List the cookies that you are using on the website here.)