পানি

লবণাক্ততা আর দূষণে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ মাছের প্রজনন ক্ষেত্র

দেশের অন্যতম মাছের প্রজনন ক্ষেত্র ও স্থানীয় মৎসজীবীদের জীবিকার উৎস হালদা নদী এখন জলবায়ু পরিবর্তন, উজানে বাঁধ নির্মানের কারনে সৃষ্ট পানির স্বল্পতা আর দূষণে বিপর্যস্ত
বাংলা
<p>হালদা নদীতে মাছের প্রজননকালীন সময়ে ডিম সংগ্রহে ব্যস্ত স্থানীয় মৎসজীবীরা (ছবি: মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন) </p>

হালদা নদীতে মাছের প্রজননকালীন সময়ে ডিম সংগ্রহে ব্যস্ত স্থানীয় মৎসজীবীরা (ছবি: মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন)

৬০ বছরের বৃদ্ধ মৎসজীবী সুনীল দাস তার জীবনের প্রায় পুরোটা সময় কাটিয়েছে হালদা নদীর উপর নির্ভর করে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে হালদা নদী যা কার্প জাতীয় মাছের অন্যতম প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত। ২০১০ সাল পর্যন্ত সুনীল দাসসহ আরো প্রায় দুই হাজার জেলে ৯৮ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীটিতে মাছ ধরার কাজ করতো। কিন্তু ধীরে ধীরে অতিরিক্ত মৎস আহরনের কারনে সরকার ২০২০ সালে এই নদীটিকে স্থায়ীভাবে মৎস অভয়ারণ্য ঘোষণা করে। তবে অভয়ারণ্য ঘোষণার পরেও দেশের বিভিন্ন মৎস খামারের জন্য মাছের ডিম আহরণ করতে নদীতে জেলেদের অনুমতি প্রদান অব্যাহত রাখা হয়। কিন্তু বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন, মিঠা পানির স্বল্পতা, দুষণ আর লবণাক্ততার কারনে  মাছ ও মাছের ডিম বলতে গেলে হারিয়েই যাচ্ছে।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা হালদা নদী ক্রমাগত সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা, ঘূর্ণিঝড়, নদীর উজানে বাঁধ নির্মান, অতিরিক্ত বালু উত্তোলন আর দূষনে মারাত্বকভাবে বিপর্যস্ত।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির (এইচআরআরএল) তথ্য মতে ২০০১ সালে হালদা নদী থেকে ৪৭,০০০ কিলোগ্রামের বেশি মাছের ডিম আহরণ করে সেখানককার জেলেরা। অথচ চলতি বছর একই নদী থেকে আহরিত হয় মাত্র ৮০০০ কেজি ডিম।

দ্য থার্ড পোলের সাথে আলাপকালে সুনীল দাস নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, দুই দশক আগে কেবল এক মৌসুমেই তিনি ৫ কেজি মাছের ডিম সংগ্রহ করতে পারতেন। কিন্তু এবছর দুটি নৌকা ব্যবহার করে প্রানান্ত চেষ্টার পরেও তার আহরনের পরিমান মাত্র ২৫০ গ্রাম।

তিনি বলেন, আমাকে এখন বাধ্য হয়ে এই পেশা পরিবর্তন করতে হয়েছে। বর্তমানে আমি দিনমজুরী আর রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি।

ফি বছর সাইক্লোনের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছেলবণাক্ততা

বঙ্গোপসাগরে অতি সম্প্রতি জন্ম নেয়া ঘূর্ণিঝড় ইয়াস হালদা নদী থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দুরে আঘাত হানে। কিন্তু প্রবল জলোচ্ছ্বাসের ফলে সাগর থেকে ব্যাপক পরিমানে নোনা পানি হালদা নদীতে প্রবেশ করে। এইচআরআরএলের তথ্য মতে এই ঘূর্ণিঝড়ের পর হালদা নদীতে লবণাক্ততার মাত্রা ০.৫ থেকে ৩৬.৯ পিপিটিতে পৌছায়।

২০২১ সালের মে মাসে গবেষকরা হালদা নদীতে লবণাক্ততার পরিমান নির্ণয় করে। সেসময় নদীতে লবণাক্ততার  পরিমান ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৮০ গুন বেশি। সাধারণত মিঠা পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা থাকে ০.৫ পিপিটি। বর্তমানে হালদা নদীর উচ্চ লবণাক্ততা নদীতে থাকা মাছের পোনা উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত প্রতিকূল। 

হালদা নদীর কাছেই আরেকটি শহরের নাম হাটহাজারি। সেখানে বসবাস করা অপর এক মৎসজীবি পরিমল দাস বলেন, আসলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মিঠা পানির নদীগুলো ধীরে ধীরে অতিরিক্ত লবণাক্ত হয়ে পড়ছে। এর ফলে নদীগুলো মাছের বেঁচে থাকাসহ উৎপাদন মারাত্বকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

হাটহাজারীতে কর্মরত সরকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিন দ্য থার্ড পোলকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদীতে মাছের স্বাভাবিক উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকারের যাবতীয় কর্মকাণ্ড পুরোপুরি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তিনি বলেন, এনিয়ে আমাদের সকল প্রচেষ্টা বিফলে গেছে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে মাছের খামারগুলো মাছ চাষের ক্ষেত্রে হালদা নদীর মাছের ডিম ও পোনা এবং নদীর পানির উপরে নির্ভরশীল। কিন্তু পানিতে লবণাক্ততার প্রভাবে এর উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে। মাছের পোনা আহরণকারী অপর এক মৎসজীবী রাখাল দাস বলেন, আমরা বংশ পরম্পরায় হালদা নদী থেকে মাছের পোনা আহরনের কাজ করে আসছি। কিন্তু এবছর নদীতে লবণাক্ততার পরিমান এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে মাছের পোনা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

গবেষকরা অবশ্য মাছের পোনা ও ডিমের স্বল্পতার জন্য তাপমাত্রা বৃদ্ধিকেও দায়ী করছেন। স্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান  সেন্টার ফর পিপল অ্যান্ড এনভাইরন-এর পরিচালক আব্দুর রহমান রানা বলেন, স্বাভাবিক অবস্থায় মাছের প্রজনন ও ডিম উৎপাদনে সহনীয় তাপমাত্রা হচ্ছে ২৫ থেকে ২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। কিন্তু বর্তমানে এখানে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে ৩০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়াও অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারনে নদীতে মিঠাপানির প্রবাহও হ্রাস পেয়েছে।

চট্টগ্রাম ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যুয়ারেজ অথরিটি (ওয়াসা) নগরীতে বসবাসকারীদের  জন্য হালদা নদীর পানি সরাবরাহ করে থাকে। ফলে সংস্থাটি প্রতিদিনই নদীর পানির লবণাক্ততার পরিমান নিরুপন করে থাকে। ওয়াসার তথ্য মতে, ২০০৪ সালে এই নদীতে সর্বোচ্চ লবণাক্ততার পরিমান ছিল ৪০০ পিপিএম। আর ২০২১ সালের প্রথম পাঁচ মাসে হালদায় সর্বোচ্চ লবণাক্ততার পরিমান ছিল ৪,০০০ পিপিএম।

ঘূর্ণিঝড়ের সময়ও নদীতে লবণাক্ততার পরিমান বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর হালদায় লবণাক্ততার পরিমান ছিল ১১,৫০০ পিপিএম। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে নদীতে শুষ্ক মৌসুমে (জানুয়ারি থেকে মার্চ) লবণাক্ততার পরিমান  নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায় এবং এটি বর্ষা মৌসুমেও অব্যাহত থাকে। গবেষকদের মতে প্রতিবছর এই ধারা অব্যাহত থাকছে।

বাংলাদেশের ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ সালিমূল হক দ্য থার্ড পোলকে বলেন, আমাদের নদীগুলোকে বাঁচাতে হলে এখনই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় আমাদের কাজ করতে হবে।

নদীর উৎপাদনশীলতা বনাম মানুষের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড

হালদা নদীটি মূলত মাছের জন্য আদর্শ প্রজননস্থল ও পোনা উৎপাদনের জন্য একটি উৎকৃষ্ট মিঠা পানির নদী। এই নদীটি একটি অশ্ব ক্ষুরাকৃতির নদী হওয়ার কারনেই এটি মাছের পোনা উৎপাদনের জন্য একটি আদর্শ নদী। নদীর গতিপথে নানা বাঁক থাকার করনে এটি সব ধরনের বড় বড় ঢেউ থেকে চাপমূক্ত থাকে, যার ফলে মাছের পোনা নিরাপদে থাকে। কিন্তু স্থানীয়রা তাদের নিজেদের নৌ চলাচলের সুবিধার্থে নদীর এই বাঁকগুলোকে ভেঙ্গে চলার পথ তৈরি করছে। যার ফলে এরই মধ্যে নদীটির দৈর্ঘ্য ২৫ কিলোমিটারেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে। আর বাঁকগুলো হারিয়ে যাওয়ায় মাছের পোনার আবাসস্থল সংকুচিত হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচআরআরএল-এর সমন্বয়ক মঞ্জরুল কিবরিয়া বলেন, বিভিন্ন পাহাড়ি স্রোতধারা আর খালে একের পর এক স্লুইস গেট ও বাঁধ দেয়ার ফলে হালদা নদীর উজানে ৩৫ শতাংশ পানির প্রবাহ হ্রাস পেয়েছে। তিনি বলেন, উজান থেকে পানির প্রভাব কমে এলে নদী সবসময়ই বঙ্গোপসাগরের জেয়ারের পানি দ্বারা সেই ঘাটতি পূরণ করে।

A sluice gate at the mouth of a canal connected to the Halda River
হালদা নদীর সাথে একটি খালের সংযোগস্থলে নির্মিত স্লুইস গেট (ছবি: সামসুদ্দিন ইলিয়াস)

এছাড়াও হালদার বতর্মান অবস্থার জন্য অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত বাঁধগুলোকেও দায়ী করেন মঞ্জরুল কিবরিয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন নদীর বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা পেপার মিল, তামাক প্রস্তুতকারী কারখানা এবং অন্যান্য অনেক শিল্প কারখানার দূষণে নিয়মিত নাকাল হচ্ছে হালদা। এসব কারখানার সৃষ্ট নানা দূষণ প্রতিনিয়ত নদীর পানিকে দূষিত করে। মঞ্জরুল কিবরিয়া বলেন, ওয়াসা এই নদী থেকে দৈনিক ১৮০ মিলিয়ন লিটার (এমএলডি) পানি উত্তোলন করে যার মধ্যে ২৫০ এমএলডি পানি হালদা প্যারালাল ইরিগেশন প্রকল্পে সরবরাহ করা হয়। পানি উত্তোলনের এই মাত্রা শুষ্ক মৌসুমেও অব্যাহত থাকে। অথচ নদীটি এরই মধ্যে দীর্ঘ সময় থেকেই প্রবাহ সংকটে রয়েছে।

এছাড়াও চট্টগ্রাম নগরীর বর্জ্য ব্রাক্ষন শাই, খন্দকীয়া, কৃঞ্চখাল এবং কোয়াইশ খালের মাধ্যমে হালদা নদীতে অপসারিত হয়। প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বাস চট্টগ্রাম নগরীতে, অথচ সেখানে কোনো স্যুয়েরেজ ব্যবস্থা নেই। ফলে প্রতিদিনই এই নগরীতে সৃষ্ট বর্জ্য কর্ণফূলী ও হালদা নদীতে গিয়ে পড়ছে। 

গুরুত্বপূর্ণ মাছের প্রজনন ক্ষেত্র এখন হুমকিতে

মঞ্জরুল কিবরিয়া বলেন, হালদা নদী মাছের প্রজননের জন্য একটি উৎকৃষ্ট আঁধার কারণ এই নদীর অবয়ব, রাসায়নিক ও জৈবিক গুনাগুনগুলো মাছের প্রজননের জন্য আদর্শ পরিবেশ। বিশেষ এই গুনাবলীর কারনে বর্ষা মৌসুমে কার্প জাতীয় মাছেদের জন্য এই নদীটি প্রাকৃতিকভাবে একটি আদর্শ প্রজনন ক্ষেত্র।

এইচআরআরএল এর তথ্য মতে হালদা নদীতে ২৪ ধরনের জলজ প্রানীর প্রায় ৭৬টি প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায়। এগুলোর ভিতরে এরই মধ্যে পাঁচটি প্রজাতি পুরোপুরি হারিয়ে গেছে, যেমন চিতল মাছ, বরালি মাছ, ঘর পোয়া, আইড় মাছ ও কৈ মাছ।

গবেষকরা বলছেন বতর্মানে আরো ২১ প্রজাতির মাছের হারিয়ে যাওয়ার প্রবনতা দেখা যাচ্ছে। তবে এই মাছগুলো পুরোপুরি বিপন্ন কিনা তা জানতে আরো বেশি গবেষণা প্রয়োজন। এই মাছগুলো হচ্ছে সার্ডিন জাতীয় মাছ, তেলি ফাসা, ঢেলা, দেপালি, পাবদা ইত্যাদি।

বাংলাদেশ সরকার ২০২০ সালে হালদা নদীকে মৎস ঐতিহ্য অঞ্চল হিসেবে   ঘোষণা  করে সেখানে ১২ ধরনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে। এর মধ্যে রয়েছে বালু উত্তোলন, পানি উত্তোলন, মাছ ধরা, ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল, বাঁধ নির্মান এবং যে কোনো ধরনের বর্জ্য। এইসব কর্মকাণ্ড নজরদারীতে রাখতে দেশের নৌ পুলিশ এরই মধ্যে নদীর বিভিন্ন স্থানে সিসিটিভি স্থাপন করেছে।

দায়িত্বশীল সরকারী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, নদীটিকে নিরাপদ রাখতে আমরা ২০১৮ সালে ১৭৭টি অভিযান পরিচালনা করে দোষীদের শাস্তি দেয়া থেকে শুরু করে নৌকা ও ড্রেজার মেশিন জব্দ করেছি। 

 River police deployed to patrol the Halda River
হালদা নদীতে নজরদারীতে নৌ পলিশ (ছবি: সামসুদ্দিন ইলিয়াস)

এছাড়াও সরকার নদীটির অশ্ব ক্ষুরাকৃতির বাঁকগুলো সংরক্ষনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে যাতে মাছের প্রজনন ক্ষেত্রেগুলো রক্ষা করা যায়। ২০১৫ সালে মৎস ও পশু সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হালদা নদীর গার্দুয়ারা বাঁকটি সংরক্ষনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। পাশাপাশি অন্যান্য বাঁকগুলোকে সুরক্ষিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

মঞ্জরুল কিবরিয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের আরেক পানি বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক  বিশ্ববিদ্যালেয়র প্রফেসর এমিরিটাস ড. আাইনুন নিশাতও নদীর প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে নদী থেকে সব ধরনের স্লুইস গেট ও বাঁধ অপসারনের পরামর্শ দিয়েছেন।

মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সমালোচনা

কিবরিয়ার মতে, মাছ ধরার উপরে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে হালদা নদীতে এক ধরনের ভারসম্যহীনতা সৃষ্টি হয়েছে।

সরকারের সংরক্ষণ নীতির মধ্য দিয়ে মূলত চারটি মাছের প্রজাতিকে সুরক্ষার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, এগুলো হচ্ছে মৃগেল, কালিবাউস, কাতল ও রুই মাছ। জেলেরা এই মাছগুলোর ডিম আহরণ করে থাকে যেগুলো পরে পোনা উৎপাদনের পর মাছের খামারগুলোকে সরবরাহ করা হয়। সরকার এই প্রজাতির মাছগুলোকে সংরক্ষণ করার জন্য হালদা নদীতে মাছ ধরার উপরে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

কিবরিয়া বলেন, এই চার প্রজাতির মাছ ছাড়া অন্য কোনো ধরনের ও মাছ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকায় যে ভারসম্যহীনতা তৈরি হয়েছে তা অন্যান্য মাছের ক্ষেত্রেও সমস্যা সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, যেহেতু এই চার প্রজাতির মাছ ছাড়া অন্য কোনো মাছ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তাতে দেখা যায় এই প্রজাতির বাইরে অন্য প্রজাতিগুলো বছরে বেশ কয়েকবার প্রজনন করে। ফলে যেসব প্রজাতি বছরে একবার প্রজনন করে সেই মাছের সাথে বছরে একাধিকবার প্রজননকারী মাছের খাদ্যের সংকট সৃষ্টি হয়। তার মধ্যে ঢালাওভাবে সব ধরনের মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ না করে যেসব মাছ বছরে একাধিকবার প্রজনন করে থাকে সেই মাছগুলোও আহরনের সুযোগ দেয়া উচিত। এটি করতে হলে স্থানীয় সম্প্রদায়ের সহায়তায় সহব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে  এটি করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। এর ফলে নদীতে মাছ ও অন্যান্য জীববৈচিত্রের মধ্যে ভারসম্য সৃষ্টি হবে।

চট্টগ্রাম জেলা মৎস কর্মকতা ফারহানা লাভলী বলেন, মাছের পোনা সংরক্ষণের স্বার্থে সরকার হালদা নদীতে মৎস আহরনের উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যদি অন্যান্য মাছ না ধরার ফলে নদীতে কোনো ধরনের ভারসম্যহীনতা তৈরি হয় তাহলে অবশ্যই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পূনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে এজন্য গবেষণা অত্যন্ত জরুরী।

তবে এটি মনে রাখতে হবে যে আমরা এখনই যদি মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করি তাহলে মৎসজীবীরা মাছের পোনাসহ সব ধরনের মাছ ধরা অব্যাহত রাখতে। তখন মৎসজীবীরা আমাদের নির্ধারিত চার প্রজাতির বাইরে অন্য কোনো মাছ ধরছে কিনা সেটি সঠিকভাবে নজরদারী করা কঠিন হয়ে পড়বে।

সুনীল দাসের স্বপ্ন শহরে জীবিকার খোঁজে নিত্য না ছুটে তার মূল পেশা মাছ ধরায় ফিরে যাওয়া। তিনি বলেন, যদি আবার মাছ ধরার সুযোগ আসে আমি আমার জাল নিয়ে আবার নদীতে ফিরে যাবো। এই মাছ ধরার জাল বংশ পরম্পরায় আমাদের অন্ন সংস্থান করেছে। তার আশা সবকিছু আবার আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

অনুবাদ: মোর্শেদা আক্তার পরী