২০১৭ সালের আগস্টে বিহারে ভয়াবহ বন্যার পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে একটি বিমান সমীক্ষা পরিচালনা করেন। সে সময় রাজ্যের প্রায় তিন হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। বন্যা কবলিত সেসব এলাকা দেশটির জাতীয় রাজধানী দিল্লির মোট আয়তনের দ্বিগুণ ছিল। সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে, এই দুর্যোগে ৮১৫ জন নিহত হয় এবং প্রায় ৯০০,০০০ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। রাস্তা, রেললাইন ও ছাদে বসবাস করা ছাড়া অনেকেরই কোনো উপায় ছিল না।
এতসব কিছু আকাশ থেকে দৃশ্যমান হলেও প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার জরিপ থেকে যে বিষয়টি তখন চোখে পড়েনি তা হচ্ছে দুর্যোগের ফলে ওই এলাকার কিশোরী ও নারীদের ওপর সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতার ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি।
আরারিয়া জেলার হেমা দেবী*, এমনই এক ভয়াবহতার শিকার একজন কিশোরী। তার গ্রামযখন বন্যায় প্লাবিত হয় তখন সে আর তার মা জাতীয় সড়কের পাশে একটি অস্থায়ী তাঁবুতে থাকতে বাধ্য হয়েছিল। এ ধরনের পরিস্থিতি সেখানে প্রায় প্রতিটি বছরই ঘটে থাকে। সেবার ২০১৮ এর ফেব্রুয়ারীর বন্যার কয়েক মাস পরে, এক ব্যক্তি হেমার মায়ের কাছে গিয়ে ৫,০০০ টাকা হাতে দিয়ে তার মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়।
আপাতদৃষ্টিতে এই বিয়েকে একটি ভালো জীবনের সম্ভাবনার মতো মনে হয়ছিল হেমাদের পরিবারের কাছে, কারন হেমার জন্য তার শৈশব ছিল অনেক কঠিন। অসুস্থ মায়ের যত্ন নেয়ার পাশাপাশি পরিবারের জন্য উপার্জন করতে মাত্র ১১ বছর বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিল হেমা। দ্য থার্ড পোলকে হেমা বলেন, “আমার মা ভেবেছিলেন তিনি একজন ভালো মানুষ এবং আরারিয়াতে থাকেন (তাই বিয়ের পর তারা কাছাকাছি থাকা যাবে)।”
কিন্তু হেমার মায়ের সেই ধারণা ছিল ভুল। আরারিয়ায় মাত্র এক মাস থাকার পর, হেমার স্বামী তাকে নিয়ে যায় চণ্ডীগড়ে, যেখানে সে হেমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। পালিয়ে যাওয়ার আগে ছয় মাস ধরে এই নির্যাতন সহ্য করে হেমা। হেমা বলেন, “আমি রেলস্টেশনে পৌঁছে লোকজনকে জিজ্ঞেস করলাম ট্রেনটি কোথায় যাচ্ছে। আমি পূর্ণিয়া স্টেশনে (আরারিয়ার কাছে) যাওয়ার একটি ট্রেন খুঁজে পেয়ে তাতে চড়ে বাড়ি ফিরে এলাম।” ফিরে আসার পর, হেমাকে তার মায়ের কাছ থেকে কটু কথা শুনতে হয়েছিল, তবে এখন আর তা শুনতে হয়না। হেমা এখন হাইওয়ের পাশে একটি দোকান চালয়ে উপার্জন করে এবং সে আর কখনো বিয়ে করতে আগ্রহী নয়।
একটি দুর্যোগের পরে, এই ধরনের সহিংসতার বর্ধিত ঝুঁকি এবং হেমার অভিজ্ঞতা অস্বাভাবিক নয়। এমনকি এটি ২০১৭ সালের আগস্ট এর মতো বন্যার ঘটনাগুলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বিহারের আরারিয়া এবং কাটিহার জেলা পরিদর্শন করার সময়, অনেকেই জানিয়েছেন যে এই অঞ্চলে প্রতি বছর বন্যা হয়। এ কারণে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। এই ধরনের হুমকি বিহার বা ভারতের বড় অংশে সীমাবদ্ধ নয়। জলবায়ু পরিবর্তন বন্যার মতো দুর্যোগের মাত্রা এবং তীব্রতা বাড়িয়েছে এবং নারীদের জীবনে তার অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশ্ব জুড়ে, বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে জলবায়ু জনিত বিপর্যয় নারী ও কিশোরীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বাড়িয়ে তুলছে।
বন্যা ছেলেদের অগ্রাধিকার বাড়ায়
ভারতে মৌসুমী বিপর্যয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাপক অভিবাসনের দিকে পরিচালিত করে। পুরুষরা, প্রায়ই কাজের জন্য দেশের অন্যান্য অংশে চলে যায়। আর অন্য দিকে অল্প আয়ের সুযোগে নারীরা পিছিয়ে থাকে। এইভাবে, ছেলেদেরকে আয়ের উৎস হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যেখানে মেয়েদের প্রায়ই বোঝা হিসাবে দেখা হয়। এর পেছনে একটি বড় কারণও রয়েছে যে মেয়েদের বিয়ের জন্য বাবা-মাকে যৌতুক দিতে হয়। ছেলেদের প্রতি এই পছন্দের কারণে, ছেলেদের জন্ম দেওয়ার জন্য নারীদের উপর অতিরিক্ত চাপ রয়েছে এবং নারী ও কিশোরীদের প্রতি বৈষম্য ও সহিংসতা বেড়েই চলেছে।
কাটিহার জেলার দেবীপুর গ্রামের নারী বিনা দেবীর অবস্থাও একই রকম। সংবারে এমন চাপের কথা বলেন বিনা দেবী। তিন ছেলের মা বীনা দেবী বলেন, ছেলে না হলে তিনি প্রায় মারাই যেতেন, কারণ পরিবারের জন্য কোনো উপার্জনকারী ছিল না। পাঁচ বছর আগে, তার স্বামীর মৃত্যুর পর, তার বড় ছেলে মাত্র ১০ বছর বয়সে পরিবারকে সাহায্য করার জন্য দেশান্তরিত হতে বাধ্য হয়। তার বয়স এখন ১৫ বছর, এবং এখনও সে তার দুই ভাই, এক বোন আর মাকে সাহায্য করে।
বিহারে বন্যা সংশ্লিষ্ট জেন্ডার সংবেদনশীলতা নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে বেশি কন্যা সন্তানের পরিবারগুলি এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। যখন পুরো গ্রাম পানিতে ডুবে যায়, তখন এলাকার পরিবারগুলি প্রায়ই তাদের কুঁড়েঘরকে টিকিয়ে রাখতে এবং তাদের স্থাবর রক্ষা করার জন্য একটি কাঠামো তৈরি করে, যাকে মাঁচান বলা হয়। সমাজে এটি পুরুষদের কাজ বলে বিবেচিত, যেখানে নারীরা শারীরিকভাবে সক্ষম হলেও তাদের কাজ করতে দেওয়া হয় না। এইভাবে, এই ধরনের পরিবার, যেখানে শুধুমাত্র নারীরা আছে, তারা বন্যা থেকে বাঁচতে অপেক্ষাকৃত উঁচু ভূমি ও অস্থায়ী শিবিরে বসবাস করতে বাধ্য হয়।
বন্যার পর বাড়িঘর পুনর্নির্মাণকেও পুরুষদের কাজ হিসেবে দেখা হয়। শুধুমাত্র নারীদের পরিবারকে পুরুষ আত্মীয়দের উপর নির্ভর করতে হয় বা গ্রামের পুরুষদের এই কাজের জন্য মজুরী দিতে হয়। দেবীপুর গ্রামের নারীদের মতে, এই কাজের জন্য একজন শ্রমিক নিয়োগ করতে প্রতিদিন ৩৫০ টাকা খরচ হয়। বিহারের মতো রাজ্যে এটি একটি বড় খরচ, যেখানে মাথাপিছু বার্ষিক আয় ৩৪,০০০ টাকা বা দিনে প্রায় ৯০ টাকা৷
যৌতুক ছাড়াও বাড়ছে পাঁচারের আশঙ্কা
বিয়ের জন্য যৌতুকের চাপও নারী ও তাদের পরিবারের জন্য একটি অতিরিক্ত বোঝা। আর এ কারণে প্রায়ই সহিংসতা ও হয়রানির ঘটনা সামনে আসে। বিনার কনিষ্ঠ কন্যার বয়স ১২ বছর, কিন্তু সে এখনই চিন্তিত। বিনা বলেন, “আমাকে এখন টাকা সঞ্চয় করতে হবে যাতে কয়েক বছরের মধ্যে আমার মেয়ের বিয়ে হয়। মানুষ যৌতুকে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা (৫,৪০০ থেকে ৬,৭০০ মার্কিন ডলার) চায়। যৌতুক ছাড়া তাকে কেউ বিয়ে করবে না। আমরা যৌতুক না দিলে তারা তাকে হত্যা করতে পারে বা তাকে তালাক দিতে পারে।”
বিহারের জেন্ডার সংবেদনশীলতার শীর্ষক গবেষণায় যৌতুককে ঋণ নেয়ার প্রাথমিক কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বন্যার সময় জীবিকা ও খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষতির সাথে এই আর্থিক ঝুঁকি অল্পবয়সী মেয়েদের পিতামাতার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়।
কাটিহার জেলার চাঁদনীর বয়স ১৮ বছর। কিন্তু তার বাবার কাছে এরইমধ্যে তিনজন ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। তবে চাঁদনি তার পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিতে পরিবারকে রাজি করাতে সক্ষম হয়েছে। যারাই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে তাদের ওপর চাঁদনীর পাঁচারকারী হিসেবে সন্দেহ হয়। দ্য থার্য পোলকে চাঁদনী বলেন, একজন ব্যক্তি সবসময় আমার বাবার কাছে যেতেন এবং তোমার তিন মেয়ে আছে বলে বোঝানোর চেষ্টা করে বিয়ের প্রস্তাব দিতেন। যিনি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে একজন ডাক্তার। তিনি বলেছিলেন যে তিনিচাঁদনীর যাবতীয় খরচ বহন করবেন এবং যৌতুক চাইবেন না। যারাই বিয়ের জন্য এই ধরনের প্রস্তাব দেয় তারা সবসময়ই উত্তরপ্রদেশের (প্রতিবেশী রাজ্য) সীমান্তের কাছে মুজাফফরপুরের মতো দূরবর্তী জায়গা থেকে আসে। এটি তার বাড়ি কাটিহার থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে।
অনেক পরিবারের জন্যই যৌতুক ছাড়া বিয়ে প্রস্তাব প্রত্যাখান করা কঠিন, কিন্তু চাঁদনীর পরিবার অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে থেকেও তা প্রত্যাখ্যান করতে সক্ষম হয়েছে। এই ধরনের অর্থনৈতিক চাপের অন্যতম কারন বছর বছর বন্যা। চাঁদনীর মা বলেন, “আমাদের এই এলাকা এটা প্রচণ্ড বন্যার ঝুঁকিতে থাকা একটি অঞ্চল। তাই এখানে নিজেকে টিকিয়ে রাখা খুব কঠিন। আমরা প্রায় প্রতি বছর ২০,০০০ টাকা (প্রতিবছর ২৭০ মার্কিন ডলার) দিয়ে থাকি জমি বন্ধক নিয়ে থাকি ফসল ফলানোর জন্য। কিন্তু এ বছর আমাদের দেড় বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। আমরা উপার্জনের জন্য কাজ করি, কিন্তু উপার্জন না হলে আমরা কী করব?
বাস্তুচ্যুতি ও অস্থায়ি শিবিরে হয়রানী
দ্য থার্ড পোল সরকারের বিভিন্ন তথ্য সন্নিবেশ করে দেখেছে যে, ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বিহারে বন্যার কারণে পাঁচ লাখেরও বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই দুর্যোগ হেমা এবং তার মায়ের মতো বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বাধ্য করেছিল যা হাইওয়ে এবং রেলপথের পাশে অস্থায়ী শিবির হিসেবে স্থাপন করা হয়। এই শিবিরগুলিতে তাঁবুগুলো খুব কাছাকাছি থাকে ফলে সেখানে বসবাসরত নারী এবং কিশোরীরা প্রায়ই হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হয়।
বিহারের দলিত ও মহাদলিতদের জন্য কাজ করা কর্মী সুধা ভার্গিস বলেন, শিবিরে থাকার কয়েক দিনের মধ্যেই, লোকেরা জানতে পারে তাদের পাশে কে থাকে এবং কোথায় থাকে। ভার্গিস বলেন শিবিরগুলিতে যৌন হয়রানি ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে অল্পবয়সী মেয়েরা এবং মহিলারা এর শিকার হয়েছিল। দলিত এবং মহাদলিতরা সমাজের সবচেয়ে পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠী যাদের ১৯৫০ সালে সংবিধান সংশোধন করার আগ পর্যন্ত অস্পৃশ্য হিসেবে গণ্য করা হতো। ১৯৫০ সালে সংবিধানে অস্পৃশ্যতা শব্দটি বাতিল করা হয়।
বিহারে নারীদের উপর বন্যার প্রভাবের বিষেয় ২০১৬ সালের একটি সমীক্ষায় একই ধরনের উদাহরণ পাওয়া গেছে। ১৬ বছর বয়সী রেখা যাদব বলেন গবেষণাকারীদের বলেন, আমরা ইভটিজিং ও হয়রানির সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলাম কারণ আমাদের বাবা-মা আমাদের বাড়িতে একা রেখে গিয়েছিলেন এবং কোনও নিরাপত্তা ছিল না।
প্রয়োজন আরও বিশদ গবেষণা এবং সুনির্দিষ্ট নীতিমালা
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন গবেষণায় নারী ও কিশোরীদের প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকাকে অন্যতম একটি কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) ২০২০ সালের একটি প্রতিবেদনে বলেছে যে কীভাবে পরিবেশগত অবনতি বিভিন্ন ধরনের জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা, যেমন যৌন নিপীড়ন, পারিবারিক সহিংসতা এবং জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তিতে পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করতে পারে।
বৃহত্তর দক্ষিণ এশিয়ায় ২০১০ সালের একটি গবেষণায় শ্রীলঙ্কায় জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার উপর ২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরের সুনামির প্রভাবের বিষয়টি তুলে ধরা হয়।২০২০ সালে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় পাকিস্তানের সিন্ধু অঞ্চলে বন্যা এবং সহিংসতার মধ্যে একই রকম সম্পর্ক পাওয়া গেছে। উভয় গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ধরনের ঘটনার পর নারীরা শারীরিক, মানসিক এবং যৌন সহিংসতার ঝুঁকির সম্মুখীন হয়। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট অ্যাংলিয়ার জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের অধ্যাপক এবং গবেষণাপত্রের অন্যতম লেখক নিত্য রাও বলেছেন, এটি নারীর থেকে পুরুষের কাছে ক্ষমতার পরিবর্তনের একটি উপযুক্ত দৃষ্টান্ত।
এদিকে ভারতে, ২০২০ সালের একটি সমীক্ষায় ২০০৪ সালের সুনামি এবং তৎপরবর্তী পারিবারিক সহিংসতার এবং ২০১৮ সালে প্রকাশিত অপর এক গবেষণাপত্র দক্ষিণ রাজ্য তামিলনাড়ুতে বৃষ্টিপাতের পরিবর্তনশীলতা এবং ভূগর্ভস্থ জল হ্রাসের পর কীভাবে বোরওয়েল খননের জন্য যন্ত্রপাতি ক্রয়ে নারীদের গহনা বিক্রির মতো ঘটনা ঘটেছিল। ২০২০ সালের সেই গবেষণায় এই দুটি ঘটনার তুলনামূলক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়েছিল।
যদিও ছোট ছোট এই গবেষণাগুলো ক্রমবর্ধমান সহিংসতার কারণগুলো চিহ্নিত করতে সাম্রগ্রীকভাবে যথার্থ নয়। কারণ সহিংসতার কারণ হিসেবে অরো অনেকগুলো বিষয় অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত থাকে। যথেষ্ট গবেষণা এবং তথ্যের অভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে যুক্ত জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার মূল কারণগুলো চিহ্নিত করতে এই জন্যই বেগ পেতে হয়।
ইন্ডিয়ান স্কুল অব বিজনেসের ভারতী ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক পলিসির গবেষণা পরিচালক এবং সহযোগী অধ্যাপক অঞ্জল প্রকাশ বলেন, তুলনামূলকভাবে খুব কম গবেষকই জেন্ডার সমস্যা নিয়ে কাজ করেন। তথ্য সংগ্রহের অসুবিধাগুলিও তুলে ধরে তিনি বেলন, যে কোন গবেষকের জন্য এই সমস্যাগুলি অন্বেষণ করতে হলে জেন্ডারভিত্তিক পৃথক ডেটা সংগ্রহ করতে হবে এবং সামাজিক বৈষম্যকে মাথায় রেখে সূচকগুলো নিরপন করতে হবে।
এমনকি যে নীতিগুলো জেন্ডারকে সম্বোধন করে সেগুলো নারীকে একটি শ্রেণী হিসাবে দেখার প্রবণতা রাখে এবং জেন্ডার কীভাবে প্রান্তিকতার অন্যান্য রূপগুলির সাথে সম্পর্কিত তা বিশ্লেষণ করতে ব্যর্থ হয়।নিত্য রাও, ইস্ট অ্যাঙ্গলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের অধ্যাপক
ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটির কলেজ অফ সোশ্যাল ওয়ার্কের সহকারী অধ্যাপক এবং ভারতীয় সুনামি ইমপ্যাক্ট স্টাডির লেখক স্মিতা রাও বলেন, জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষার কাঠামো যা ভারতে স্বাস্থ্য, বিবাহ এবং পারিবারিক সহিংসতার উপর দেশের সবচেয়ে ব্যাপক তথ্যের উৎস, যেটি ধীরে ধীরে পরিবর্তনের কারণে এ সংক্রান্ত তথ্যের তুলনা করা কঠিন। এছাড়াও, সমীক্ষাটি রাজ্যে নারীর প্রতি সহিংসতার তথ্য প্রদান করে, যা আরও সংক্ষিপ্ত স্তরে প্রভাবগুলি নিরুপন করা কঠিন করে তুলেছে।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিপর্যয় সম্পর্কিত বর্তমান সরকারের নীতিতেও জেন্ডারভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব রয়েছে। বন্যা সংক্রান্ত সম্প্রতি প্রকাশিত সংসদীয় প্রতিবেদনে নারীর উল্লেখ নেই। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ২৮টি কর্মপরিকল্পনার ৪৩ শতাংশেই জেন্ডারের কোনো উল্লেখযোগ্য উল্লেখ নেই।
এমনকি যে নীতিগুলো জেন্ডারকে সম্বোধন করে সেগুলো নারীকে একটি শ্রেণী হিসাবে দেখার প্রবণতা রাখে এবং জেন্ডার কীভাবে প্রান্তিকতার অন্যান্য রূপগুলির সাথে সম্পর্কিত তা বিশ্লেষণ করতে ব্যর্থ হয়। নিত্য রাও বলেন, ভারতের প্রেক্ষাপটে বর্ণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সর্বোপরি, এটি একটি অসম ক্ষমতা এবং ক্ষমতার সাথে সম্পর্কের একটি বিষয়। আর জলবায়ু-সম্পর্কিত বিপর্যয় বিশ্বজুড়ে নারীদের জন্য বড় মূল্যে সেই সম্পর্কগুলোকে আরও অসম করে তুলছে।
*পরিচয় গোপন রাখতে নামে পরিবর্তন করা হয়েছে
এই প্রতিবেদনটি তৈরিতে আংশিকভাবে সহায়তা করেছে Tableau and Equal Measures 2030 Data Fellowship