পানি

পর্যালোচনা: বিশেষজ্ঞদের মত, পানি ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন

স্বনামখ্যাত পানি বিশেষজ্ঞ জয়ন্ত বন্দোপাধ্যায় এবং সায়াংশু মোদক "এশিয়ার পানির টাওয়ার পরিচালনা" শীর্ষক তাদের এক সাম্প্রতিক গবেষণায় এমন একটি পদ্ধতির পরামর্শ দিয়েছেন যা পানি শাসনের সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সম্বোধন করে
<p>সিন্ধু নদী হিমালয়ের লাদাখ রেঞ্জের তুষারাবৃত পর্বতমালার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। &#8220;এশিয়ার জলের টাওয়ার পরিচালনা&#8221;-শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের লেখকরা পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে এমন একটি প্রস্তবানা তৈরি করেছেন যাকে তারা &#8216;সিস্টেম অব ইন্টিগ্রেটেড নলেজ&#8217; (SINK বা SYNC) নাম দিয়েছেন। এটি একটি পানি সম্পর্কিত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি যা পানির একাধিক ব্যবহারের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে এবং পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে  একটি নতুন জ্ঞান  পদ্ধতিও প্রদান করবে। (ছবি: পারভেশ জৈন/এ্যালামী)</p>

সিন্ধু নদী হিমালয়ের লাদাখ রেঞ্জের তুষারাবৃত পর্বতমালার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। “এশিয়ার জলের টাওয়ার পরিচালনা”-শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের লেখকরা পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে এমন একটি প্রস্তবানা তৈরি করেছেন যাকে তারা ‘সিস্টেম অব ইন্টিগ্রেটেড নলেজ’ (SINK বা SYNC) নাম দিয়েছেন। এটি একটি পানি সম্পর্কিত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি যা পানির একাধিক ব্যবহারের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে এবং পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে  একটি নতুন জ্ঞান  পদ্ধতিও প্রদান করবে। (ছবি: পারভেশ জৈন/এ্যালামী)

হিন্দুকুশ হিমালয় এবং তিব্বত মালভূমির মধ্য দিয়ে দশটি বড় নদীর প্রবাহ চলমান। এই নদীর অববাহিকাগুলোতেই এশিয়ার অধিকাংশ এলাকা সমূহ অবস্থিত। দুই কোটিরও বেশি মানুষের জীবন এই নদীগুলোর উপর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। এই নদী অববাহিকাগুলির প্রতিটি পৃথক আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক ভূখণ্ড দখল করে আছে। এটি পানি ব্যবস্থাপনার সমস্যাগুলিকে যুক্ত করে কারণ প্রতিটি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেই স্ব স্ব চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে এর সাথে যদি কিছু মিল থাকে তবে তা হল পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ।

জয়ন্ত বন্দোপাধ্যায় এবং অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সায়াংশু মোদক, “গভর্নিং দ্য ‘ওয়াটার টাওয়ার অফ এশিয়া’: দ্য স্ট্যাটাস অফ দ্য সিস্টেম অফ ইন্টিগ্রেটেড নলেজ ফর দ্য হিন্দুকুশ হিমালয়“- শীর্ষক গবেষণায় বর্ণনা করেছেন যে কীভাবে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করা যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পানি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে প্রথাগত মানসিকতার পুরোপুরি পরিবর্তন করতে হবে।

এই দশটি নদীর অববাহিকার কাছাকাছি বসবাসকারী মানুষকে ঘন ঘন খরা, বন্যা, ক্রমবর্ধমান দূষণ, বাঁধ ও ব্যারেজ ভেঙে পড়ার মতো বড় বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়াও, নদীর তলদেশ খনন এবং নদীর বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার কাজটিও চালিয়ে যেতে হয়।

একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতামূলক স্বার্থ সুরক্ষা, পারষ্পরিক দ্বন্দ্ব, পানি-শক্তি-খাদ্য চাহিদা, দূর্বল শাসন ব্যবস্থা এবং দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা পানি ব্যবস্থাপনার জটিলতাকে আরো ঘনিভূত করে, বিশেষ করে যখন অধিকাংশ নদীই বলতে গেলে আন্ত:সীমান্ত নদী।

গবেষণার লেখক জয়ন্ত বন্দোপাধ্যায় এবং সায়াংশু মোদক বলেন, বর্তমানে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও মানুষের চাহিদা মেটাতে উল্লেখিত নদীগুলোর অববাহিকায় সুপেয় পানির প্রাপ্যতার ব্যাপক সংকট রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। অতিবৃষ্টি, বন্যা, খরা, গলিত হিমবাহ, হিমবাহের হ্রদ ফেটে সৃষ্ট বন্যা, প্রচণ্ড তাপদাহ এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো এত বড় বড় সমস্যার মধ্যে এই বিপুল পরিমান জনগোষ্ঠী নিজেদের টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হতে শুরু করবে।

এই গবেষণার লেখকরা মনে করেন যে কীভাবে বর্তমান সময়ের চলমান পানি সংকট উন্নয়ন কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপনা একটি হ্রাসবাদী পদ্ধতির দ্বারা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, পানিকে শুধুমাত্র অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক একটি সম্পদ হিসেবে দেখা হয়।

লেখকদ্বয় পদ্ধতিগতভাবে প্রতিটি অববাহিকার ভৌত অবকাঠামো, ব্যবস্থাপনা এবং সমন্বিত দিকগুলি চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছেন। এই গবেষণায় আরো দেখানো হয়েছে যে উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি হ্রাসবাদী দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা বর্তমান পানির সংকট কীভাবে তীব্রতর হয়েছে। রিডাকশনিস্ট অ্যাপ্রোচ বলতে বোঝায় যে কোনো জটিল ঘটনাকে তার মৌলিক বা সরল অংশে বিভক্ত করে সিদ্ধান্ত গ্রহন। এই প্রেক্ষাপটে পানিকে শুধুমাত্র অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক একটি সম্পদ হিসেবে দেখা হয়।

বিদ্যুৎ, সেচ, পৌর ও শিল্প সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য বাঁধ, এবং খালের মাধ্যমে পানি ধরে রেখে বা সরিয়ে নেয়ার কারসাজিতকেও হ্রাসবাদের উদাহরণ দেখতে পারি আমরা। এসব ক্ষেত্রে বিজ্ঞান, আবহাওয়াবিদ্যা, ভূমি-পৃষ্ঠের মিথস্ক্রিয়া এবং সংশ্লিষ্ট জীববৈচিত্র্য  টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় অন্তর্নিহিত অনিশ্চয়তা নিয়ে ভাবা হয় না।

এই ধরনের পদ্ধতির ফলে সামাজিক ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির বৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে। পাশাপাশি নেতৃত্ব কেন্দ্রনির্ভর সংষ্থা এবং বাজার শক্তির হাতে গিয়ে পড়ছে, যারা সবসময়ই পানি সম্পদের নিয়ন্ত্রণ হাতে রাখতে চায় এবং একটি সরবরাহ ভিত্তিক সমাধানে সচেষ্ট হতে আগ্রহী থাকে।  এর ফলে শুধু জলজ জীববৈচিত্র্যই নষ্ট হচ্ছেনা বরং সামাজিক স্থানচ্যুতি ঘটেছে, নদী-নির্ভর জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, যার ভার আগামী প্রজন্মকে বহন করতে হবে।

সমন্বিত জ্ঞানের পদ্ধতি

এই বিষয়ে গবেষণার লেখকরা এক ধরনের পথ বাতলে দিয়েছেন যাকে তারা সিস্টেম অব ইন্টিগ্রেটেড নলেজ বলে অভিহিত করেছেন। তারা ইন্টিগ্রেটেড ওয়াটার রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (আইডব্লিউআরএম) বা সমন্বিত যৌথ পানি ব্যবস্থাপনা নীতি মাথায় নিয়ে বিষয়টি ভাবতে শুরু করেন, এই ধারণাটি ডাবলিনে ১৯৯২ সালের পানি সম্মেলনের সময় প্রথমবারের মতো প্রস্তাব করা হয়েছিল।

এই সম্মলনে এমন কিছু নীতিমালাকে চিহ্নিত করা হয় যার মাধ্যমে সুপেয় মিঠা পানিকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক মূল্য বিবেচনায় অত্যন্ত সীমিত এবং দুর্বল সম্পদ হিসাবে স্বীকৃত করা হয়। সম্মেলনে পানির সামগ্রীক ব্যবস্থাপনার স্বার্থে যে কোনো উন্নয়ন ও পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নদীর  অববাহিকা ভিত্তিক ব্যবস্থাপনাকে সর্বাগ্রে রাখার প্রস্তাব করা হয়। পাশাপাশি একটি অংশগ্রহনমূলক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলে তাতে স্থানীয়ভাবে পানি ব্যবস্থাপনায় নারীর অংশগ্রহন নিশ্চিত করার প্রতি তাগিদ জানানো হয়।

২০০০ সালে গ্লোবাল ওয়াটার পার্টনারশিপ-এর মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট জীববৈচিত্র্য এবং বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিশীলতার বিষয়ে কোনাে ধরনের আপস না করে সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা আইডব্লিউআরএমকে একটি প্রক্রিয়া হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে অর্থনৈতিক ও সামাজিক কল্যাণের জন্য পানি, ভূমি এবং তৎসম্পর্কিত যাবতীয় সম্পদের উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনাকে উৎসাহিত করা হয়।

সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের পথে বাঁধা

পানি সংকট মোকাবেলায় অর্থনৈতিক দক্ষতা, সমতা এবং পরিবেশগত স্থায়িত্বকে একীভূত করার প্রয়োজনীয়তার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি সত্ত্বেও, আইডব্লিউআরএম এখন পর্যন্ত কোথাও সফল হয়নি। এই গবেষণার লেখকরা নেপালের সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা আইডব্লিউআরএম-এর বাস্তবায়নের উদাহরণ দিয়ে বলেন এটি বাস্তবায়নে হ্রাসবাদী নীতি কাজ করে।

২০০২ সালে নেপাল সরকার আইডব্লিউআরএম নীতি অনুসরণ করে একটি পানিসম্পদ কৌশল প্রণয়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে সহায়তা পায়। এটি ২০০৫ সালে একটি জাতীয় পানি পরিকল্পনায় বিকশিত হয়েছিল৷ ২০০৯ সালে, নেপালের পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়কে রাজনৈতিক কারণে শক্তি ও সেচ মন্ত্রনালয়ে বিভক্ত করা হয়। আর মধ্য দিয়ে স্বাভাবিকভাবেই আইডব্লিউআরএম নীতি বাস্তবায়নের  এজেন্ডাকে বাঁধাগ্রস্থ্য হয়ে ধীরগতিতে চলতে শুরু করে।  দুটি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আকারে ইঙ্গিতে এটাই বলছেন যে দেশটিকে আইডব্লিউআরএমকে এগিয়ে নিয়ে যাবার পথ চলা সংকীর্ণ কারণ মন্ত্রণালয়গুলি পৃথক পৃথক বিষয় নিয়ে কাজ করবে।

অনেক ক্ষেত্রে, একটি কেন্দ্রীয় পানি আমলাতন্ত্রের কাছে  সমন্বিত ব্যবস্থাপনার বিষয়টি কুক্ষিগত হয়ে পড়ে। অথচ পানির মূল ব্যবহারকারী এবং আর এই সম্পদ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোর মধ্যে কিন্তু ফারাক বা দূরত্ব থেকেই যায়। আবার সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যেও সমন্বয়ের অভাব এবং দূরত্ব দেখা যায়।  এই ধরনের পরিস্থিতির কারনে পানি ব্যবস্থাপনার সংকট আরো দীর্ঘস্থায়ী আকার ধারণ করে এবং জনসংখ্যার বড় অংশের জন্য পানি-ভিত্তিক পরিষেবার ব্যবস্থা দূর্বল হতেই থাকে।

অনেক ক্ষেত্রে, একটি কেন্দ্রীয় পানি আমলাতন্ত্রের কাছে  সমন্বিত ব্যবস্থাপনার বিষয়টি কুক্ষিগত হয়ে পড়ে। অথচ পানির মূল ব্যবহারকারী এবং আর এই সম্পদ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোর মধ্যে কিন্তু ফারাক বা দূরত্ব থেকেই যায়।

জয়ন্ত বন্দোপাধ্যায় এবংসায়াংশু মোদক অত্যন্ত জোরালোভাবে তাদের আইডব্লিউআরএম-এর সমালোচনাকে তুলে ধরেন। তাদের মতে, এটি এমন একটি ধারণা যার ব্যবহারিক উপযোগিতা এবং রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষতার পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই । ১৯৯৫ সালে ভারতের চেন্নাইতে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়ার পানির রাজনৈতিক অর্থনীতি শীর্ষক সম্মেলনে, বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ বলেন, সকল পানি উন্নয়ন হস্তক্ষেপ এবং প্রযুক্তি যা মাটির উপরে এবং নীচে পানির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে তার সাথে জড়িত ব্যবস্থাপনার সিদ্ধান্তগুলি সবসময়ই সামাজিক অসমতা, সহযোগিতা বিনিময়, শক্তি, সংঘাতে পরিণত হয়। 

যে চারটি রুপ বিশ্লেষনে একটি নদী সংজ্ঞায়িত হয়

গবেষকবৃন্দ তাদের গবেষণার মধ্য দিয়ে প্রস্তাব করেন যে একটি সমন্বিত ব্যবস্থা ভাবার আগে একটি নদীর বহুমাত্রিক প্রকৃতিকে সমভাবে বিশ্লেষণ করার মধ্য দিয়ে সামগ্রীক প্রক্রিয়া শুরু হওয়া উচিত। পানির পরিমাণ (গুণমান সহ), শক্তি, জীববৈচিত্র্য এবং পলির (ওয়েবস – WEBS) সাথে একটি সমন্বয়মূলক সম্পর্ক সহ নদীগুলোতে চারটি মৌলিক পরিবর্তন রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, জীববৈচিত্র্য এবং পলিকে উপেক্ষা করে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পানির পরিমাণ এবং শক্তির বিষয়দুটি পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রধান উপজীব্য হয়ে দাঁড়ায়। আর এটিই হচ্ছে হ্রাসবাদী দৃষ্টিভঙ্গি।  বাস্তুচ্যুতি, জীবিকা হারানো, প্রাকৃতিক সম্পদের অবক্ষয় এবং নদীর বাস্তুতন্ত্র হারানাের মতো বিষয়গুলো উন্নয়নের ধারণায় মেনেই নেয়া একটি নিয়মে পরিনত হয়েছে।

তাদের শক্ত যুক্তি হচ্ছে, ওয়েবস (WEBS)-এর ধারণাটি আদিবাসী/স্থানীয় বা প্রথাগত অনুশীলনসহ প্রাকৃতিক এবং সামাজিক বিজ্ঞানের প্রয়োগের মাধ্যেম SINK-এর বিকাশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে। তারা দাবি করেন যে এই ধরনের একটি প্রক্রিয়া পানির সামগ্রিক পদ্ধতির দিকে নিয়ে যেতে পারে, যাতে এর একাধিক ব্যবহারের ভারসাম্য বজায় রাখে। তাদের মতে, এই ধরনের জ্ঞানের একীকরণ তিনটি স্তরেই হওয়া উচিত – প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং তৃতীয়। এই নীতিগুলি অনুসারে উচ্চ-শিক্ষার পাঠ্যক্রম বিকাশ এবং নীতিনির্ধারকদের সংবেদনশীল করার কাজটি বিশেষভাবে প্রনিধানযোগ্য বলে তারা মত দেন।

জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সায়াংশু মোদক ভারতের উত্তরাখণ্ডের পরিবেশ কর্মী এবং কবি ঘনশ্যাম রাতুরির (১৯৩৪ ১৯৯৭) স্মৃতির প্রতি তাদের এই প্রকাশনাটি উৎসর্গ করেন। পৃথিবীর তৃতীয় মেরু বা হিমালয় পাদদেশের নদী অববাহিকা জুড়ে, অনেক কর্মী, লেখক এবং কবি প্রকৃতি, নদী এবং অন্যান্য প্রাণীর সাথে সামঞ্জস্য রেখে ভবিষ্যতের একটি দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছেন এবং পাশাপাশি তারা পানি ব্যবস্থাপনায় হ্রাসবাদী পদ্ধতিকে চ্যালেঞ্জ করেন। আজ যদিও প্রযুক্তির কল্যানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষের যোগাযোগের সুযোগ অনেক বেশি প্রসারিত হয়েছে, তবে নাগরিক ব্যস্ততার  পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের একে অপরের সাথে কথা বলার সুযোগ তাৎপর্যপূর্ণভাবে সংকুচিত হয়ে আসছে।

একটি সঠিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে প্রয়োজন একটি আধুনীক প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকৌশল এবং অবাধ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি।  কেবলমাত্র তখনই  ক্ষমতা এবং মাজিক-পরিবেশগত দায়বদ্ধতার মধ্যে একটি ভারসম্য অবস্থা সৃষ্টি করা সম্ভব।

এই অববাহিকাগুলোতে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার নানা দিক নিয়ে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে তার সমাধানের লক্ষ্যে সংলাপ চালিয়ে যাবার মাধ্যমে নতুন নতুন জ্ঞানের প্রসার প্রয়োজন, যাকে এই গবেষণার লেখকরা বলছেন সিঙ্ক। তাদের মতে এই ধরনের সংলাপ এবং জ্ঞানের প্রসারের মাধ্যমে এখানকার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় নতুন দিক  উন্মোচিত হতে পারে।  এটর জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং শিক্ষার অন্তর্নিহিত কাঠামোকে উন্মোচিত করা প্রয়োজন যা আজ পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার উপর হ্রাসবাদী জ্ঞানের সূত্রপাত,  প্রয়োগের উপরে প্রভাব রেখে থাকে।

একটি সঠিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে প্রয়োজন একটি আধুনীক প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকৌশল এবং অবাধ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি।  কেবলমাত্র তখনই  ক্ষমতা এবং মাজিক-পরিবেশগত দায়বদ্ধতার মধ্যে একটি ভারসম্য অবস্থা সৃষ্টি করা সম্ভব।

‘গভর্নিং দ্য “ওয়াটার টাওয়ার অব এশিয়া” আগামী প্রজন্ম এবং পেশাজীবিদের জন্য একটি অত্যন্ত কার্যকর এবং প্রয়োজনীয় প্রকাশনা। বিশেষত, এটি অববাহিকার দেশগুলোতে পানি সম্পদ বিষয়ক শিক্ষার অন্যতম উপাদান হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক।