বঙ্গোপসাগরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা মৌসুনী দ্বীপের ছোট গ্রাম বালিয়াড়া। প্রতি তিন কিংবা চার দিন পর সাগর থেকে আসা জোয়ারের জলে ভেসে যায় এর এক দিক। ঘরে নোনা জল ঢুকে নষ্ট করে দেয় নিকোনো মেঝে, মাটির উনুন, বাক্স, খাট সবকিছু। ভাঙা বাঁধের পাড়ে জলমগ্ন কবরস্থান থেকে ভেসে ওঠে কঙ্কালের হাড়। ভাঁটার সময় ক্ষেতে পড়ে থাকে সেই নোনা জল। ধান তো দূরের কথা, আধ আঙুল লম্বা চ্যাঙা মাছ ছাড়া আর কিছুই সেখানে বাঁচতে পারে না। আলের ওপর নারকেল গাছগুলো কবেই মরে গেছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের এক প্রান্তে থাকা মৌসুনী দ্বীপের ছোট গ্রাম বালিয়ারার একপাশে রয়েছে একটি দীর্ঘ বাঁধ। এই বাঁধটিই বঙ্গোপসাগরের নোনা জল থেকে গ্রামটিকে বাঁচিয়ে রাখতো। ২০০৯ সালে ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আইলায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ্য হয় এই বাঁধ। এরপর থেকে কমপক্ষে তিনবার বাঁধটি সুরক্ষা ও মেরামতের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু প্রতিবার মেরামতের পরেই সাগরের জলের প্রচন্ডতায় আবারো ভেঙ্গে যেতে থাকে বাঁধটি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সারাবিশ্বেই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য যে কোনো সাগরের চেয়ে বঙ্গোপসাগরের উচ্চতা দ্বিগুন গতিতে বেড়ে চলছে!
আমি ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো বালিয়ারা গ্রামে এসেছিলাম- সাইক্লোন আঘাত হানার ঠিক দু’মাস আগে। স্থানীয় একটি গ্রাম্য স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাদরুদ্দিন সরকার তখন আমায় ১৮ ফুট উঁচু ওই গ্রামরক্ষা বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে দুরে সাগরের জলে ডুবে যাওয়া তার বাড়ির অবস্থান দেখাবার চেষ্টা করেন। সাগরের জলে তার দু’টি বাড়ি হারিয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে একটি ১৯৯১ সালে আর অপরটি ২০০৪ সালে। তখন শুধু তার বাড়ির স্থানে নারিকেল গাছের অবশিষ্ট একটি কান্ড চোখে পড়ছিল। পরের বার, ঠিক দু’মাস পরে তার সঙ্গে আমার আবার যখন দেখা হয়, জানতে পারলাম সাইক্লোন আইলার পরে সাগরের জল বাঁধ ডিঙ্গিয়ে প্রবেশ করে সরকার সাহেবের ধান ক্ষেত ও মিঠা জলের মাছ চাষের পুকুরটি সম্পুর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়। এসময় তার সবকটি গৃহপালিত পশু মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে সরকার সাহেব তার পুরো পরিবার নিয়ে মৌসুনী থেকে ১০০ কিলোমিটার দুরে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় গিয়ে বাসবাস শুরু করতে বাধ্য হন।
এবার একই গ্রামের প্রথমিক স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান, ৬১, দেখাতে চেষ্টা করলেন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাব। সেখানে মূল বাঁধের কোনো চিহ্নই চোখে পড়লো না। মূল বাঁধ মেরামতের জন্য পরবর্তীতের আনা সরঞ্জাম এখনও সেখানে পড়ে আছে। আরো চোখে পড়ে মৃত নারকেল গাছ আর খেজুর গাছ। পুরো এলাকায় এখানে সেখানে নোনা জল, তাতে কোনো কিছুই জন্মাতে পারেনা। গঙ্গার শাখা নদী মুরিগঙ্গার মিলনস্থলে মৌসুনী একটি বেশ বড়সড় গ্রাম। গ্রামটিতে কমপক্ষে ৫,০০০ পরিবারের বাস। এদের মধ্যে প্রায় ২,০০০ পরিবার বাস করে বালিয়ারা গ্রামে। আর এই গ্রামের সবাই সর্বক্ষণ বাস্তুচ্যুত কিংবা মৃত্যুভয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
‘কীভাবে প্রত্যাশা করেন যে আমরা ভালো আছি’ – নিজের মাছ চাষের পুকুরের দিকে তাকিয়ে অনেকটাই হতাশ কন্ঠে নিজের মনের অবস্থা জানালেন জসিমউদ্দিন সরকার। তার পুকুরের দিকে তাকিয়ে দেখা গেল সেখানে প্রায় এক ফুট অব্দি জল রয়েছে – নোংরা! পুকুরে ছোট একটি প্রজাতির চ্যাঙ্গা মাছ জানান দিচ্ছে সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব। তিনি বলেন, আপনারা আমার দু’টি ফার্মের মধ্যবর্তী স্থানে সুরক্ষা বাঁধটি দেখতে পাচ্ছেন? সেখানে একটি নারকেল গাছও রয়েছে। আসলে এর সবই মৃত। আগ্রাসী সমুদ্রের জল থেকে নিজের বাসের ঘরটি বাঁচাতে জসিম চারপাশে প্লাস্টিকের বেড়া দেয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু খুব একটি লাভ হচ্ছে না বলেই হচ্ছে। জল কোনো না কোনো ভাবে ঢুকেই যাচ্ছে। ওঁর ঘরের ভিতরে তাকালে প্রথমে যা চোখে পড়বে তা হচ্ছে পুরোনো সংবাদপত্রের স্তুপ। এখানকার পরিবারগুলো সাগরের জল থেকে নিজেদের রক্ষা করতে এই সংবাদপত্র দিয়ে জল শুষে নিয়ে ঘরদোর, আসবাবপত্র রক্ষা করে থাকে। প্রতি তিন-চারদিন পর পর তাদের এই কাজটি করতে হয়।
জলবায়ু শরণার্থী
তাহলে তারা বেঁচে আছে কী করে? এ ব্যাপারে জসিমউদ্দিনের উত্তর বালিয়ারা গ্রামের অন্য সব বাসিন্দাদের মতোই। ‘আমার ছেলে কেরালায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করে। মাসে মাসে আমাদের টাকা পাঠায়। আর এভাবেই আমরা বেঁচে আছি’। অন্য পরিবারের অনেকেই বললেন তাদের সন্তান, ভাই, স্বামীর কথা। এদের কেউ নিরাপত্তা প্রহরী, শ্রমিক, রাজমিস্ত্রী, শপিং মলে কাজ করে থাকে। কেরালার অধিবাসীদের একটি বিরাট অংশ কাজের উদ্দেশ্যে পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যেয়ে থাকে। ফলে ওই রাজ্যে সৃষ্ট শূন্যতা পূরণে এখন সুন্দরবনের একটি বড় অংশ কেরালাতে গমন করছে।
তবে এই পরিস্থিতি কিন্তু এরা কেউই সানন্দে গ্রহন করেননি। জসিমউদ্দিন বলেন, কেউই চায়না তাদের কন্যা সন্তানকে বালিয়ারা গ্রামের ছেলেদের সাথে বিয়ে করাতে। আমরা মাসের পর মাস চেষ্টা করে আমাদের পুত্র সন্তানদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে পারি না। এই কথা বলেই জসিমউদ্দিন পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া এক তরুণীর কাছে বিষয়টি জানতে চাইতে বললেন।
জসিমউদ্দিনের ছেলের স্ত্রীর নাম সালমা বিবি। মাত্র কয়েক মাস আগেই তাদের মধ্যে বিয়ে হয়। সালমার বাড়ি প্রায় ২০ কিলোমিটার মূল ভূ-খন্ডে। তিনি বলেন, ‘আমি স্কুলের পড়াশুনা শেষ করেছি। আমি জানি চেষ্টা করলে আমি অন্য যায়গায় একটি চাকুরী পেতে পারি। তিনি বলেন, আমি আমার স্বামী ও পরিবারের অন্যান্যদের বলেছি যে আমাদের এখান থেকে চলে যাওয়া উচিত। আসলে এটি কোনো জীবন নয়। প্রতি তিন-চার দিন পর পর ঘরের সব সরঞ্জাম নোংরা নোনা জলে ডুবে থাকা কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। আমার বাবা আমার বিয়ের জন্য যে তিনটি শাড়ি কিনেছিলেন তার দুইটি এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। আমি আমার স্বামীকে এবার বলবো যে, এইবার সে যখন ছুটিতে এখানে আসবে, তখন আমরা এখান থেকে যেভাবেই হোক চলে যাবো।
কিন্তু কোথায় যাবে? জানতে চাইলে সালমা পরিস্কার কিছুই বলতে পারলো না। আর জসিমউদ্দিন বলেন, আমি ধান আর মাছ চাষ ছাড়া কিছুই জানিনা। আমি কোথায় গিয়ে কী কাজ করে জীবন যাপন করবো। জানা গেল এরই মধ্যে বালিয়ারা গ্রামের প্রায় ১৫০ পরিবার স্থায়িভাবে অন্যত্র বসবাসের জন্য চলে গেছে। তারা নিজেদের বাড়ি-ঘর বা অন্যান্য সম্পত্তি বিক্রি করতে পারেননি। তারা যে কোনো ভাবেই হোক এখান থেকে দুরে কোথাও গিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে।
এই সমস্যা সমাধানে সরকারের কি কোনো পদক্ষেপ রয়েছে? জানতে চাইলে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য হিমাংশু আইচ বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ্য জমির মালিক হিসেবে যারা প্রমানপত্র দাখিল করতে পেরেছেন তারা সাইক্লোন আইলার পরে ক্ষতিপূরণ বাবদ পরিবার প্রতি ১০,০০০ রুপি পেয়েছেন। এরপর থেকে সাগরের জল নিয়ন্ত্রণে সরকারী প্রকৌশলীদের কর্মতৎপরতা তো সবার জানা। একই ধরনের পরিস্থিতি সুন্দরবনের অন্যান্য দ্বীপগুলোতে।
ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর অধিবাসীদের চেয়ে বেশি শরণার্থী
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের অবস্থান প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা জুড়ে। এই বনের ভারতীয় অংশে প্রায় ৫ মিলিয়ন মানুষের বসবাস। অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন ও ডব্লিউডব্লিউএফ ইন্ডিয়ার পরামর্শক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ নিলাঞ্জন ঘোষ সম্প্রতি একটি গবেষণা কার্য পরিচালনা করেছেন। তার গবেষণা মতে, এই অঞ্চলে বসবাসরত প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মানুষকে স্থায়ীভাবে সুন্দরবনের বাইরে বসবাসের জন্য স্থানান্তর করার প্রয়োজন হবে। এর কারণ হিসেবে তিনি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিকে দায়ী করে বলেন, এর ফলে এখানে বসবাস ও জীবিকা নির্বাহ করা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে পড়বে।
বাদরুদ্দিনের মতো বালিয়ারার অনেক অধিবাসী কমপক্ষে দুই থেকে তিনবার তাদের বসত ঘর হারিয়েছেন। প্রতিবার ঘর হারিয়ে তারা দ্বীপের আরো ভিতরে গিয়ে নতুন ঘর বানিয়েছেন। এ মুহুর্তে তাদের আর করবার কিছুই নেই, নতুন করে ঘর বানাবার কোনো জায়গাই নেই।
এর অর্থ হচ্ছে যে পরিমান মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছে এবং সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারনে হবে তাদের সংখ্যা সারাবিশ্বের ক্ষুদ্র দ্বীপগুলোর সমগ্র জনসংখ্যার চেয়েও অধিক।
জাতিসংঘ কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্কে (জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন) ক্ষুদ্র দ্বীপগুলোর দূর্দশাগ্রস্থ্য ভবিষ্যত নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়ে থাকে। এই দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর সরকারগুলোর পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক দাবীর প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ি বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমান ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
অথচ এদিকে সুন্দরবনের এই বিশাল জনসংখ্যার দূর্দশার বিষয়টি আর্ন্তজাতিক জলবায়ু আলোচনায় কোনোভাবেই স্থান পায়নি। এমনকি ভারত সরকারও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেনি।
বিষয়টি এমন নয় যে এর আগে এই অঞ্চলে জলবায়ু সহিঞ্চু একটি পরিবেশ তৈরির চেষ্টা হয়নি। প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ডব্লিউডব্লিউএফ ইন্ডিয়া এখানে লবনাক্ততা সহিঞ্চু ধানের চারা বিতরণ করেছে। এই প্রকল্প এখনও চলমান রয়েছে। তবে তা দ্বীপের অনেক ভিতরের দিকে, অধিক উঁচু স্থানে। কিন্তু মৌসুনীর বালিয়ারার মতো গ্রামে লবনাক্ততার পরিমান এত বেশি যে এই ধরনের ধানের চারা কোনোভাবেই বাঁচতে পারে না। এ প্রসঙ্গে টি এস এলিয়টের দ্য ওয়েষ্টল্যান্ড এর দু’টি লাইনই বারবার মনে পড়ছে – ‘কী এমন শীকড় রয়েছে এখানে যা ধরে রাখতে পারে, কী এমন প্রশাখা যা এখানে জন্মাবে/ এই শুষ্ক পাথুরে আবর্জনায় (হোয়াট আর দ্য রুটস দ্যাট ক্লাচ, হোয়াট ব্রাঞ্চেস গ্রো/আউট অব দিস স্টোনি রাবিশ”।
আসলে এই সমস্যা সমাধান করতে হলে অনেক গভীরে যেতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ছাড়াও গোটা সুন্দরবনই কিন্তু এক প্রকার ডুবতে বসেছে। আর এর সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে গঙ্গা ও এর শাখা-প্রশাখায় স্থাপিত অসংখ্য বাঁধ ও ব্যারাজ। এই সব বাঁধ ও ব্যারাজ উজানে পলি ধরে রাখে যা আসলে এই ব-দ্বীপ গঠনে ভূমিকা রাখে। নয়াদিল্লির কোনো নীতি নির্ধারকই বিষয়টিকে আমলে নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখান না।
একটি সম্ভাব্য সমাধান
আসলেই কি এর কোনো সমাধান রয়েছে? সুন্দরবন থেকে ২,০০০ কিলোমিটার গেলে ভারতের পূর্ব উপকূলে রয়েছে তামিল নাডুর পিছাভারাম। আর সেখানেই মিলতে পারে কোনো সমাধানের পথ।
দক্ষিণ এশিয়ার উপকূলের প্রায় সর্বত্রই ম্যানগ্রোভ বন উজাড় করা হচ্ছে। কিন্তু পিছাভারামের দৃশ্য ঠিক তার বিপরীত। সেখানে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে ম্যানগ্রোভ। ২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরে সেই সুনামীর সময়ও যেখানে এই ম্যানগ্রোভ ছিল। আর সেবার সুনামী আঘাত করেছিল এই পুরো অঞ্চলকে – অর্থাৎ ইন্দোনেশিয়া থেকে পূর্ব আফ্রিকা পর্যন্ত।
ওই সুনামীর সময় পিছাভারামের উপকূলীয় গ্রামগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছিল, হতাহতের সংখ্যা ছিল প্রচুর। কিন্তু পিছাভারামের যে ১৬টি গ্রামের চারপাশে ম্যানগ্রোভ বন ছিল সেসব গ্রামের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ছিল যৎসামান্য। ম্যানগ্রোভ বনই আসলে বিশাল ঢেউকে প্রশমিত করতে পেরেছিল।
এখন এটি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল যেখানে যে কেউ নৌকা নিয়ে ভ্রমন করতে পারে। নৌকা নিয়ে মাঝি কিছুটা চালিয়ে গেলেই ম্যানগ্রোভ বনের খুব কাছাকাছি চলে যাওয়া যায়। কিন্তু এই সুযোগ বা ইচ্ছে সুন্দরবনে সম্ভব নয়। কারণ সেখানে রয়েছে বাঘ ও কুমিরের ভয়।
এ মুহুর্তে পিছাভারাম ম্যানগ্রোভ বনটি আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তামিল নাডুর উপকূলে এখন চলছে ব্যাপক খরা। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্ত:সরকার প্যানেলের তথ্য মতে, ব্যাপক খরার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে বৈশ্বিক উঞ্চতা। জাতিসংঘের মরুকরণ প্রতিরোধ বিষয়ক কনভেশনের প্রধান মণিক বারবাট জানান অন্যান্য সব ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগের চেয়ে খরার কারনে এখন প্রাণহানীর ঘটনা বেশি ঘটছে।
বর্তমানে চলমান খরার কারণে পঞ্চাশোর্ধ রাজেন্দ্রানকে পিছাভারামের বসতভিটা তার নিজ ত্যাগ করে আরো ৬ কিলোমিটার ভ্রমন করে জীবিকরা অর্জন করতে হয়। আর জীবিকার তাগিদে তাকে কৃষিকাজ ফেলে এখন নৌকার মাঝি হতে হয়েছে। যেহেতু সে ছোটবেলায় কিছুটা পড়ালেখা করেছিল তাই এখন পর্যটকদের সাথে তার কথা বলতে কোনো সমস্যা হয় না। তিনি এখন ইংরেজি ও তামিল উভয় ভাষাতেই কথা বলতে পারেন। প্রতিবছর সে এখন নৌকার মাঝি হিসেবে কাজ করে তার কৃষি জমির উপার্জনের সঙ্গে আরো কিছু অতিরিক্ত যুক্ত করতে পারেন। এবছর তিনি আশা করছেন যে তার বার্ষিক আয়ের একটি বড় অংশ নৌকা চালিয়ে তিনি সংগ্রহ হরতে পারবেন।
বঙ্গোপসাগের বিভিন্ন দ্বীপে বিভিন্ন সময়ে সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ সৃজনের চেষ্টা চালানো হয়েছে। তবে সুন্দরবনের এই দ্বীপগুলোকে বাঁচাবার ক্ষেত্রে এটি যে একমাত্র কার্যকর একটি পদক্ষেপ হতে পারে এ ব্যাপারে কখনই সরকার বা স্থানীয়দের খুব সচেতন অংশগ্রহন দেখা যায়নি।