জলবায়ু

ঘূর্ণিঝড় আতংকে বাংলাদেশের দ্বীপে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা

গতমাসে আঘাত হানতে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের খবরে আতংকে ছিলো ভাসানচরে বসবাসরত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যাদের বসবাসের জন্য এই দ্বীপটিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানে বসবাসের পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য বিক্ষোভও প্রদর্শন করেছে তারা।
বাংলা
<p>২০২০ সালের ডিসেম্বরে নৌ বাহিনীর একটি জাহাজে চড়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি দলকে ভাসানচরে নেয়ার দৃশ্য (ছবি: শুভ্র কান্তি দাস/ অইঅঈঅচজঊঝঝ/ এলামি লাইভ নিউজ) </p>

২০২০ সালের ডিসেম্বরে নৌ বাহিনীর একটি জাহাজে চড়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি দলকে ভাসানচরে নেয়ার দৃশ্য (ছবি: শুভ্র কান্তি দাস/ অইঅঈঅচজঊঝঝ/ এলামি লাইভ নিউজ)

বঙ্গোপসাগরে তান্ডব চালানোর পর গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে গিয়ে আঘাত হানায় ভাসানচরে বসবাসরত প্রায় ১৮,৫০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে স্বস্তি নেমে আসে। তবে এ যাত্রায় স্বস্তি মিললেও একথা তাদের অজানা নয় যে বিশে^র সবচেয়ে ঘূর্ণিঝড় প্রবন সাগরের বুকে সবচেয়ে ঘুর্ণিঝড় প্রবন অংশেই তাদের বসবাস : তারা বাস করছেন এমন একটি দ্বীপে যেটির অবস্থান সাগরের মোহনায়, যার ফানেল আকৃতির অবস্থানের কারনে যে কোনো ঝড়ের প্রভাবকে মারাত্বকভাবে বাড়িয়ে দেয়।

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা নিজেদের ইচ্ছায় ভাসানচরে বসবাসের জন্য যেতে চায়নি, দ্বীপটি এমন একটি ভূখ- যেখানে অতীতে কেউ বসবাস করেনি। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অনেক আগে থেকেই এই দ্বীপটি নিয়ে তাদের শংকা প্রকাশ করে আসছিল। বিশেষ করে তাদের আশংকা ছিল যে এই দ্বীপটি যে কোনো ধরনের ঝড়, ভাঙ্গন আর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ক্ষতি মুখোমুখি হতে পারে। অথচ এই আশংকা ও সতর্কতাকে পাশ কাটিয়ে গতবছর ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে বসবাস করা শরণার্থী ক্যাম্প থেকে তাদের ভাসান চরে বসবাসের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। 

গঙ্গা, ব্রক্ষ্মপুত্র আর মেঘনা নদীতে বয়ে আসা পলি মাটি জমে বঙ্গোপসাগরে মেঘনা নদীর মোহনায় এই দ্বীপটি গত ২০ বছর আগে জেগে ওঠে।  প্রায় ৪০ বর্গকিলোমিটারের এই দ্বীপটির প্রায় বেশিরভাগ অংশই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতায় জেগে ওঠে ২০০৬ সালের পর থেকে।

Map showing location of Bhashan Char, Bay of Bengal

 সন্দ্বীপ ও হাতিয়া দ্বীপের মাঝখানে এই দ্বীপটির অবস্থান। এই তিনটি দ্বীপের অনেকটাই কাছাকছি অবস্থানে রয়েছে আরো একটি দ্বীপ শহর যার নাম ভোলা। বঙ্গোপসাগরে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক সময়ের সবগুলো ঘূর্ণিঝড়েই এই দ্বীপগুলো কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ভূখন্ডগুলোর অবস্থান বঙ্গোপসাগরের উত্তর প্রান্তে যা সারাবিশে^র সাগরাঞ্চলের মাত্র ০.৬ শতাংশ। অথচ বিশে^ ঘুর্ণিঝড়ের কারনে কমপক্ষে ৮০ শতাংশের মতো প্রাণহানীর ঘটনা এই অঞ্চলেই ঘটে থাকে।

আতংকে রোহিঙ্গা শরণার্থী

দেশের মূল ভ’খন্ডে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে বসবাসরত আব্দুল মালেকের প্রতিবেশীরা তাকে ভাসানচরে যেতে নিষেধ করেছিল। কিন্তু আব্দুল মালেক শুনেছিলেন ওই চরটিতে রয়েছে শক্তিশালী বাঁধ ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র। তিনি আসলে অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ ক্যাম্পে গাদাগাদি করে বসবাসের কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন। আর তার পরিবারের সদস্যরা ক্যাম্পে তাদের মাটির ঘর থেকে নিস্তার পেতে ভাসানচরে সরকার কর্তৃক নির্মিত কংক্রিটের ঘরে বসবাস করার জন্য ছিল উদগ্রীব।

কিন্তু সব যেন নিমেষে পালেট গেল। দ্বীপটি থেকে দ্য থার্ড পোলের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় মালেক জানান ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের খবরটি পেয়ে তিনি এবং তার পরিবার অত্যন্ত আতংকে দিন কাটাচ্ছেন।  তিনি বলেন, আমি এখন অত্যন্ত উদ্বিগ্ন এই ভেবে যে এই ঘূর্ণিঝড়টি যদি মারাত্বক আকার ধারন করে আমাদের সুরক্ষা বাঁধটি ভাসিয়ে নিয়ে যায় তাহলে আমাদের ভাগ্যে কী ঘটবে। এই দ্বীপটি মূল ভূখন্ড থেকে পুরোপুরি বিচ্ছন্ন। তেমন অবস্থা হলে হয়ত কেউই আমাদের এই দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে পারবে না।

এই দ্বীপটি মূল ভূখন্ড থেকে পুরোপুরি বিচ্ছন্ন। তেমন অবস্থা হলে হয়ত কেউই আমাদের এই দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে পারবে না।
আব্দুল মালেক

দ্বীপের অন্য এক বাসিন্দা ইকরাম হোসেন বলেন, আমরা আশা করছি তেমন কিছুই না ঘটুক। কিন্তু কিছু যদি হয়েই যায়, আমরা তো পুরোপুরিই বিচ্ছিন্নভাবে একানে বসবাস কররছি। এই দ্বীপটির অবস্থান বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দুরে। 

ভাসানচরের আরেক বাসিন্দা ও স্থানীয় কমিউনিটি নেতা মনজুর আলম মাঝি বলেন, আমরা আসলে এই ধরনের দুর্যোগ ও প্রতিকুল উপকূলীয় পরিবেশের সাথে যুদ্ধ করে অভ্যস্ত। আমরা এখনও ভাসানচরে এই ধরনের প্রতিকূল আবহাওয়ার মুখোমুখি হইনি। তবে এখানকার উঁচু ও বড় দালান কোঠা দেখে মনে হচ্ছে হয়ত তেমন কোনো বিপদের আশংকা নেই। 

অশান্তি ভাসানচরে ভাসানচরে বর্তমানে বসবাসরত শরণার্থীদের আয়-উপার্জনের তেমন কোনো ধরনের পথ নেই। তারা এখনও পুরোপুরি সহায়তা নির্ভর। সেখানে বসবাসরত এক রোহিঙ্গা নারী মাজেদা বেগম (৩০) বলেন, আমাদের জীবন আসলে সরকারের দেয়া রেশনের উপরে নির্ভরশীল। আমাদের যেহেতু কোনো আয়-উপার্জন নেই, তাই বাজার থেকে মাছ, মাংস বা সব্জি কেনার মতো সামর্থ্য আমাদের নেই। রিলিফ হিসেবে আমাদের যেসব উপকরণ দেয়া হয় তাতে সাবানসহ অন্যান্য প্রসাধনী থাকে না। তাই আমরা প্রতিদিনই স্যানিটেশনসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা উপাদানের ক্ষেত্রে ব্যাপক সমস্যা বোধ করি।

A family in the accomodation on Bhashan Char,

ভাসানচরের নির্মিত কংক্রিটের একটি ভবনে বসবাসরত একটি পরিবার (ছবি: সালেহ নোমান)

গত ৩১ মে ভাসানচরে বসবাসরত কয়েক হাজার রোহিঙ্গা শরনার্থী তাদের নানা রকম সমস্যা নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এই বিক্ষোভের আগেই ভাসানচর ছেড়ে বেশ কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থীর অন্যত্র পালিয়ে যাওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় আটক এক রোহিঙ্গা নারী সাংবাদিকদের জানান, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিজেদের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে তারা দালালদের অর্থ প্রদান করেছিল। ওই নারী জানান কক্সবাজারে তার নিজের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে সহায়তা করার জন্য তিনি এক দালালকে ৩০,০০০ টাকা প্রদান করেন (৩৫০ মার্কিন ডলার)।

তবে সেখানে বসবাস করা নিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের করা অভিযোগের বিষয়গুলো মানতে রাজি নন সরকারী কর্মকর্তারা। তারা বলছেন ভাসানচরে বিদ্যুৎ  ব্যবস্থা চালু রাখতে সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে রান্নার জন্য রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বায়োগ্যাস সংযোগ প্রদান করা হয়েছে, পাশাপাশি বর্জ্য বব্যস্থাপনা গড়ে তোলা, মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক স্থাপনসহ রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর বসবাসের ঘর এবং ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। তবে ভাসানচর পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের দূর্বল মোবাইল নেটওয়ার্কের অভিজ্ঞতা হয়।   

বারবার বস্তুচ্যুত 

বাংলাদেশে বর্তমানে ১.১ মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছে। এদের বেশিরভাগই মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ২০১৭ সালে যখন দেশটিতে ইতিহাসের বর্বরোচিত জাতিগত নির্র্মূল অভিযান চলাচ্ছিল দেশটির সরকার। পাশাপাশি ওই ঘটনার আগে ও পরে আরো রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এদের প্রায় সবারই স্থান হয়েছে মিয়ানমার সীমান্তের কাছে বাংলাদেশের জনবহুল শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে। সেখানে বসবাসের পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক, রয়েছে মানব পাচারের প্রবনতা আর কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার আতংক।

বর্তমানে ভাসানচর নামে যে দ্বীপটি রয়েছে তা আগে ঠেঙ্গারচর নামে পরিচিত ছিল। ২০১৭ সালের বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমনের বহু আগেই, এমনকি এই দ্বীপটির নাম ভাসানচর রাখার বহু আগেই সরকার রোহিঙ্গাদের সেখানে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। শরণার্থীদের বসবাসের উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার বেশ কিছু আন্তর্জাতিক নির্মান প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু শুরু থেকেই সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা ছিল বিভিন্ন পক্ষের।  

জাতিসংঘ প্রথম থেকেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়ে সতর্ক করে আসছিল। তারা যে কোনো ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় এই দ্বীপটির প্রয়োজনীয় সক্ষমতা যাচাইয়ের আগে দ্বীপটিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে আসছিল। সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সমালোচনা ছিল বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার।

২০১৭ সালের পর সরকার এক লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ভাসানচরে  স্থানান্তরের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করে।

সরকার এই দ্বীপটিকে রোহিঙ্গাদের বাসবাসের উপযোগী করে গড়ে তুলতে সেখানে বাড়িঘর ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩১ বিলিয়ন টাকা (৩৬৮.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ব্যয় করে। যুক্তরাজ্যের প্রকৌশল পরামর্শক সংস্থা এইচআর ওয়েলিংফোর্ড এবং চীনের নির্মান প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রোর মাধ্যমে এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয় ২০১৯ সালে।

এই পুরো প্রকল্পের দেখভাল করছে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী। ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো ১,৬৪২ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে দ্বীপটিতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে এই দ্বীপটিতে সবমিলিয়ে ১৮,৫০০ শরণার্থী বসবাস করছে।

Homes for the refugees on Bhashan Char, Mohammad Minhaj Uddin

ভাসানচরে সবমিলিয়ে ১০০,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে স্থানান্তর করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার (ছবি: সালেহ নোমান)

বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর কর্মকর্তা আনোয়ার উল কবীর বলেন, এই দ্বীপটি অত্যন্ত নিরাপদ। এখানে বসবাসরত শরণার্থীদের নিরাপদ আবাস গড়ে তুলতে দ্বীপে সব ধরনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে, যেমন এখানে ১২০টি কংক্রিটের ভবন তৈরি করা হয়েছে যার প্রতিটির ধারণ ক্ষমতা ১,০০০ জন। পাশাপাশি দ্বীপটির সুরক্ষায় একটি ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ নির্মান করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, ভাসানচর আশ্রয়ন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সময় গত ১৭৬ বছরে বঙ্গোপসাগরে সংঘঠিত সবগুলো ঘুর্ণিঝড়ের ধরণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মানদ- মেনে দ্বীপের চারপাশে যে ৯-ফুট উচু বাঁধ রয়েছে সেটিকে এখন ১৯-ফুট উঁচু করে নির্মান করার কাজ চলমান রয়েছে। চলতি বছর ২০২১ সালের মধ্যেই এই কাজ সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অনেকেই স্বেচ্ছায় স্থানান্তরিত হতে চায়নি

 প্রথমবারের মতো যখন একদল শরণার্থীকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয় তার পরপরই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রক্রিয়াটি স্থগিত রাখার আহ্বান জানায়। সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ক্যাম্পেইনার সাদ হাম্মাদি বলেন, কর্তৃপক্ষের এখনই উচিত হবে এই প্রক্রিয়াটি অবিলম্বে স্থগিত করে ইতিমধ্যে যাদের স্থানান্তর করা হয়েছে তাদের বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডে অবস্থিত শরণার্থী ক্যাম্পে নিজ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবন্থা করা। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে এমন একটি দ্বীপে পাঠানোর ফলে স্বাধীনভাবে মানবাধিকার পরিস্থিতিগুলো পর্যালোচনার ক্ষেত্রে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে তাদের এমন একটি দ্বীপে পাঠানো হচ্ছে যেটি সাধারণভাবে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং সাংবাদিকদের কাজ করার ক্ষেত্রে একটি দূর্গম এলাকা হিসেবেই বিবেচিত।

অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে যে তারা সরকারের স্থানান্তর প্রক্রিয়ার তালিকায় থাকা বেশ কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থীর সাথে কথা বলেছে। এমন পাঁচটি পরিবারের সকলের সাথে তারা কথা বলে জানতে পেরেছে (সব মিলিয়ে ২৩ জন) যে স্থানান্তর হওয়ার জন্য সরকারের আবেদন ফর্মে স্বেচ্ছায় নয় বরং এক প্রকার বাধ্য হয়েই তাদের স্বাক্ষর করতে হয়।

এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল জাতিসংঘসহ সকল মানবিাধিকার সংগঠনগুলোকে ভাসানচরে বসবাসের সার্বিক পরিস্থিতির সম্ভাব্যতা নিরুপনের অনুমতি প্রদান করতে সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি এই সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সরকারকে সব ধরনের  স্থানান্তার প্রক্রিয়া স্থগিত রাখারও আহ্বান জানানো হয়।

Children on Bhashan Char, Mohammad Minhaj Uddin
ভাসানচরে পরিবারের সাথে বসবাসরত কিছু শিশু। বর্তমানে এই দ্বীপটিতে ১৮,৫০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছে (ছবি: সালেহ নোমান)

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্যাড অ্যাডামস এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশ সরকার এই ঘটনার মধ্য দিয়ে জাতিসংঘের কাছে দেয়া এর প্রতিশ্রুতি লংঘন করছে। এই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সম্ভাব্যতা নিরুপনের পর সবুজ সংকেত পাওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো শরণার্থীকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে না। সরকার যদি প্রকৃত অর্থেই এই দ্বীপটির বাসযোগ্য কিনা তা নিয়ে আত্মবিশ^াসী থাকতো তাহলে এই পুরো প্রক্রিয়ায় তারা আরো স্বচ্ছতা দেখাতে পারতো এবং পাশাপাশি জাতিসংঘের কারিগরি সহায়তার প্রশ্নে তাড়াহুড়া করে পাশ কাটিয়ে যেত না।

ঘূর্ণিঝড়ের আশংকা সবসময়ই ছিল

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন মেঘনা মোহনায় জোয়ারের সময় পানির উচ্চতা ৭ মিটারেরও বেশি হতে পারে।

১৯৬০ সালের পর থেকে বঙ্গোপসাগরের কমপক্ষে পাঁচটি ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের ঘটনা ঘটে। ভাসানচর দ্বীপের পার্শ¦বর্তী অন্যান্য দ্বীপের বাসিন্দারা এখনও সেসব ঘুর্ণিঝড়ের কথা মনে করে আতংকে থাকে। ভাসানচরে খুব কাছেই আরেকটি দ্বীপের নাম সূবর্ণচর। এটি এখন আর দ্বীপ নেই, মূল ভ’খন্ডের সাথে মিশে গেছে। সূবর্ণচরে মহিষের পাল নিয়ে চড়াতেন মোহাম্মদ ফকির (৫০)। তিনি বলেন, আমার মনে আছে  ১৯৯১ প্রবল ঘুর্ণিঝড়টি যখন এখানে আছড়ে পরে তখন আমি আমার কয়েকটি মহিষ নিয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার সাঁতরে নিজের প্রান বাঁচাই। সেসময় আমি কীভাবে বেঁচে গিয়েছিলাম তা ভাবতে গিয়ে অনেক সময় আমি নিজের কাছে কোনো ব্যাখ্যা খুজে পাই না। দ্য থার্ড পোলকে তিনি বলেন, ওই সময়ের আগে আমি আরো দুটি দ্বীপে মহিষ চড়ানোর  কাজ করতাম। এদের মধ্যে একটি দ্বীপের নাম নলের চর যা এখন প্রবল ভাঙ্গনের ফলে সাগরে তলিয়ে গেছে।

বঙ্গোপসাগরে কোনো ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে তীব্র বাতাস  এবং ঢেউ সহজেই অপাসারিত হয় না কারন এটি হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উপসাগরীয় অঞ্চল যার দক্ষিণ দিক ছাড়া প্রায় সবদিকেই ভূখন্ড রয়েছে। যখন এখানে নদীর মোহনায় প্রবল কোনো ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয় তখন সেখানে যে পরিমান শক্তির সৃষ্টি হয় তা অবধারিতভাবেই নদীগুলোকে মারাত্বকভাবে প্রভাবিত করে যার ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের জন্য প্রস্ততি

ঘুর্ণিঝড় ইয়াস এরই মধ্যে ভাসানচর থেকে ৬০০ কিলোমিটার পশ্চিমে আঘাত হেনেছে। তবে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির আশংকায় সরকার আগেই সব ধরনের প্রস্ততি  গ্রহন করে। নোয়াখালী জেলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান বলেন, শুকনো খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রাখা হয়েছিলো এবং আমরা এরই মধ্যে উদ্বারকর্মীদের সেখানে পাঠিয়েছি। ভাসানচর প্রশাসনিকভাবে নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত। 

যে কোনো ঘূর্ণিঝড় একটি বিশাল এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির সৃষ্টি করতে পারে। ২০২০ সালে ঘুর্নিঝড় আম্ফান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে আঘাত হানলেও এর প্রভাবে সাগরে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ভাসানচরের বাজার তলিয়ে যায় যেটি আসলে এই দ্বীপে সুরক্ষা বাঁধের বাইরে অবস্থিত। এই বাজারটি রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সেখানে যাওয়ার আগেই নির্মান কর্মীদের জন্য গড়ে ওঠে।

জাতিসংঘসহ কয়েকটি সাহায্য সংস্থা সাম্প্রতিক সময়ে দুই বার ভাসানচর পরিদর্শন করে সেখানকা জন্য একটি জরুরী ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রনয়নের আহ্বান জানায়। ঢাকায় কর্মরত জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার মূখপাত্র চার্লি গুডলেক বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশ সরকারের বিশাল এই বিনিয়োগের বিষয়টি স্বীকৃতি দেয়, বিশেষ করে এখানে যে অবকাঠামোগত সুবিধা নির্মান করা হয়েছে এবং দ্বীপ সুরক্ষায় নানা ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে তার জন্য। তিনি বলেন, জাতিসংঘ বিশ^াস করে এ মুহুর্তে যে কোনো ধরনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকার অবিলম্বে একটি জরুরী ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রনয়ন করতে হবে যার মাধ্যমে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সকল ধরনের প্রাক প্রস্ততি হিসেবে জরুরী সহায়তা, অপরিহার্য খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যায়। জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলটি দ্বিতীয় বারের মতো এই দ্বীপটিতে পরিদর্শন করার সময় সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গারা সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

ঘুর্ণিঝড় ইয়াস আরো পশ্চিম দিকে সরে যাওয়ায় ভাসানচরে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে জানতে চাইলে  পানি ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, আসলে ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের কারনে ভাসানচরে খুব একটা প্রভাব দেখা যাবে না। সেখানে এক লাখ মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা রয়েছে… আর তাদের বাসবাসের সুরক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী বাঁধ নির্মান করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বঙ্গোপসাগরে এমন আরো অনেক দ্বীপ রয়েছে যেখানে বহু মানুষ অনিরাপদভাবে বসবাস করে আসছে।

ঘুর্ণিঝড় ইয়াস এরই মধ্যে ভাসানচর থেকে ৬০০ কিলোমিটার পশ্চিমে আঘাত হেনেছে। তবে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির আশংকায় সরকার আগেই সব ধরনের প্রস্ততি  গ্রহন করে। নোয়াখালী জেলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান বলেন, শুকনো খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রাখা হয়েছিলো এবং আমরা এরই মধ্যে উদ্বারকর্মীদের সেখানে পাঠিয়েছি। ভাসানচর প্রশাসনিকভাবে নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত। 

যে কোনো ঘূর্ণিঝড় একটি বিশাল এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির সৃষ্টি করতে পারে। ২০২০ সালে ঘুর্নিঝড় আম্ফান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে আঘাত হানলেও এর প্রভাবে সাগরে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ভাসানচরের বাজার তলিয়ে যায় যেটি আসলে এই দ্বীপে সুরক্ষা বাঁধের বাইরে অবস্থিত। এই বাজারটি রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সেখানে যাওয়ার আগেই নির্মান কর্মীদের জন্য গড়ে ওঠে।

জাতিসংঘসহ কয়েকটি সাহায্য সংস্থা সাম্প্রতিক সময়ে দুই বার ভাসানচর পরিদর্শন করে সেখানকা জন্য একটি জরুরী ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রনয়নের আহ্বান জানায়। ঢাকায় কর্মরত জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার মূখপাত্র চার্লি গুডলেক বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশ সরকারের বিশাল এই বিনিয়োগের বিষয়টি স্বীকৃতি দেয়, বিশেষ করে এখানে যে অবকাঠামোগত সুবিধা নির্মান করা হয়েছে এবং দ্বীপ সুরক্ষায় নানা ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে তার জন্য। তিনি বলেন, জাতিসংঘ বিশ^াস করে এ মুহুর্তে যে কোনো ধরনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকার অবিলম্বে একটি জরুরী ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রনয়ন করতে হবে যার মাধ্যমে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সকল ধরনের প্রাক প্রস্ততি হিসেবে জরুরী সহায়তা, অপরিহার্য খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যায়। জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলটি দ্বিতীয় বারের মতো এই দ্বীপটিতে পরিদর্শন করার সময় সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গারা সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

ঘুর্ণিঝড় ইয়াস আরো পশ্চিম দিকে সরে যাওয়ায় ভাসানচরে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে জানতে চাইলে  পানি ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, আসলে ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের কারনে ভাসানচরে খুব একটা প্রভাব দেখা যাবে না। সেখানে এক লাখ মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা রয়েছে… আর তাদের বাসবাসের সুরক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী বাঁধ নির্মান করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বঙ্গোপসাগরে এমন আরো অনেক দ্বীপ রয়েছে যেখানে বহু মানুষ অনিরাপদভাবে বসবাস করে আসছে।

এই প্রতিবেদনটিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মূল নাম পরিবর্তন করে ব্যবহার করা হয়েছে