জলবায়ু

কপ-২৬ কী, এবং কেন এটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ?

২০১৫ সাল থেকে শুরু হওয়ার পর থেকে এটিই বিশ্বের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ জলবায়ু সম্মেলন। এ বছর এই সম্মেলনটি আর মাত্র দুই সপ্তাহ পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু কপ-২৬ বা জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন বলতে প্রকৃতপক্ষে কী বোঝায় বা নির্দেশ করে, সে বিষয়ে সম্যক ধারণা থাকাটা অত্যন্ত জরুরী। কারণ, এই মুহুর্তে সারাবিশ্বের মনযোগ এখন গ্লাসগোর দিকে?
বাংলা
<p>আসন্ন জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন বা কপ-২৬ উপলক্ষে যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো শহরে চোখে পড়ছে এমনই সব চিত্র (ছবি: কে রক্সবি/এলামি) </p>

আসন্ন জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন বা কপ-২৬ উপলক্ষে যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো শহরে চোখে পড়ছে এমনই সব চিত্র (ছবি: কে রক্সবি/এলামি)

সিওপি বা কপ-এর পূর্ণরুপ হলো কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ।  কপ-২৬ হচ্ছে ইউএন ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি) বা জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর ২৬তম সম্মেলন। ইউএনএফসিসিসির কনভেনশনে সই করা ১৯৭টি সদস্য দেশ বার্ষিক এই সম্মলনে একসাথে যোগ দিয়ে  বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় একে অপরের সাথে কীভাবে সমন্বিতভাবে কাজ করবে তা নিয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহনের উদ্দেশে আলোচনা করে।. 

এই সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা যেসব বিষয় নিয়ে সাধারণত আলোচনা করে থাকে তা হচ্ছে –  জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সম্ভাব্য প্রশমন বা নিরসনের পহ্না নিয়ে আলোচনা করে থাকে (যেমন গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস যা মূলত বৈশ্বিক উঞ্চতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী)। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে পরিবেশের উপর যেসব অপরিবর্তনীয় প্রভাব সৃষ্টি হয়, তা কাটিয়ে উঠতে কী ধরনের অভিযোজন নীতি ও পদ্ধতি গ্রহন করা যায় তা নিয়েও আলোচনা হয়ে থাকে। এছাড়াও উন্নয়নশীল দেশগুলো যাতে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসতে পারে ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় যাতে তারা আরো সহনশীল ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে সে লক্ষ্যে ধনী দেশগুলোর পক্ষ থেকে সম্ভাব্য আর্থিক সহায়তার বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা হয়।

১৯৯৫ সালে জার্মানির বার্লিন শহরে প্রথম জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত কপ – ২১ সম্মেলনে অংশ নেয়া দেশগুলো ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তি অনুমোদন করে। এটি ছিল একটি মাইলফলক চুক্তি যার মাধ্যমে অংশগ্রহনকারী দেশগুলো সম্মত হয় যে, তারা তাদের দেশে নির্গমন হ্রাস ও অভিযোজন পদক্ষেপ গ্রহনের ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিশ্রুতিগুলো সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অবহিত করবে। পাশাপাশি বৈশ্বিক উঞ্চতা প্রাক – শিল্প মাত্রার চেয়ে কমপক্ষে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস কমিয়ে আনার ক্ষেত্রেও তারা সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহনের সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে বৈশি^ক তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার মতো উচ্চাভিলাসী সিদ্ধান্তও নেয়া হয়।  

কখন এবং কোথায় কপ-২৬ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে?

চলতি বছর ৩১ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো শহরে এই সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবার ইতালির সাথে যুক্তরাজ্য সভাপতিত্ব করবে। দেশটি এবারকার সর্বশেষ জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকের পাশাপশি যুব ফোরামেও (ইয়ুথ ফোরাম) সভাপতিত্ব করবে। এই ফোরামটি সারা পৃথিবীর তরুন জলবায়ু কর্মী ও ইতালি, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের একজোট করবে আশা করা হচ্ছে।

গ্লাসগো শহরে অনুষ্ঠিতব্য কপ – ২৬ সম্মেলনস্থলের দৃশ্য। ক্লাইড নদীর তীরে অবস্থিত স্কটিশ ইভেন্ট ক্যাম্পাসে এই সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ছবি: আয়ান মাস্টারটন/এলামি)

কপ-২৬ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তির পর এবারের এই সম্মেলনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন। এই সম্মেলনে সদস্য দেশগুলো প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে সমন্বিতভাবে শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সদস্য দেশগুলো কার্বন নির্গমন মাত্রার পরিমাপ ও সে বিষয়ে কীভাবে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে তা নিয়ে সুষ্পষ্ট নীতি নির্ধারনের পাশাপাশি আগামী দিনগুলোতে এই লক্ষ্যমাত্রা আরো কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়গুলো নিয়ে এই  সম্মেলনে আলোচনা করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

আগের সম্মেলনগুলোতে একটি রুলবুক বা নীতি সহায়িকার প্রথম খসড়াটি নির্ধারণ করা হয়। কিন্ত দু:খের বিষয় হচ্ছে, কোনো দেশই গুরুত্বপূর্ণ এই ধরনের ইস্যুতে নিয়ে এখনও কোনো ঐক্যমতে পৌছাতে পারেনি। যেমন  – নির্গমন মাত্রা হ্রাসের টোকেন সংক্রান্ত বাণিজ্য, যার মাধ্যমে বাণিজ্যে লীপ্ত দেশগুলোর মধ্যে এই প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের দ্বিগুন গণনা না হয়, সে বিষয়গুলো নিশ্চিত করা। যদিও এই বিষয়গুলো আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা কারিগরী মনে হলেও এবারের কপ – ২৬ সম্মেলনে  এই বিষয়গুলো নিয়ে আরো শক্তভাবে সিদ্ধান্ত হওয়ার উপরেই প্যারিস চুক্তির স্বার্থকতা নির্ভর করে বলে মনে করেন অনেকেই।

এই সম্মেলনে দেশগুলোর প্রতিনিধিবৃন্দ তাদের নিজ নিজ জলবায়ু প্রতিশ্রুতি আরো কিভাবে বাড়াতে পারে সে বিষয়ে নিয়ে আলোচনা করবে। এর মধ্যে রয়েছে সম্মত দেশগুলোর নিজ নিজ এনডিসি বা ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন্স-এ উল্লেখিত প্রতিশ্রুতিসহ  জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় তাদের চলমান অন্যান্য যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে সেগুলো আরো কিভাবে শক্তিশালী করা যায় তা নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখা। চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য এরই মধ্যে নির্গমন মাত্রা কমিয়ে এনে কার্বন নিরপেক্ষ হওয়ার লক্ষ্যে তাদের সময়সীমা ঘোষণা করেছে। এর অর্থ হচ্ছে তারা এখন থেকে শোষণ করার সক্ষমতা থেকে আরো কম নির্গমন করবে। ভারতসহ বিশে^র অন্যান্য শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলো এবারের সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে শুদ্ধ জ্বালানী ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিজেদের পরিকল্পনা ঘোষনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এবারের কপ-২৬ কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়া। এসব ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে খরা, অস্বাভাবিকভাবে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় এবং অন্যান্য বিপর্যয়, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, এবং হিমালয়ের মতো ভঙ্গুর পরিবেশে পরিবর্তিত জলচক্রের পরিবর্তন। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে চেয়ে দক্ষিণ এশিয়াতেই অভিবাসন এবং বাস্তুচ্যুতির ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি রয়েছে।

বৈশ্বিক উঞ্চতা কমিয়ে আনার সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জনগনের জীবন-মরণ সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে যেসব অঞ্চলের জনগন এই বৈরী আবহাওয়ার নিত্য মোকাবেলা করছে এবং দূর্বল অর্থনীতির কারনে তাদের এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার মতো তেমন সক্ষমতাও নেই।  বিশ্বের বেশিরভাগ উন্নয়নশীল অঞ্চলগুলোর মতো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা, অভিযোজন ও প্যারিস চুক্তি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে অন্যান্য ধনী অর্থনীতির দেশের আর্থিক সহায়তার উপরে নির্ভরশীল। এবারের জলবায়ু সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃবৃন্দ তাদের নিজেদের জলবায়ু প্রতিশ্রুতি উপস্থাপন করার পাশাপাশি ধনী দেশগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনবে বলে মনে করা হচ্ছে।

Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.

Strictly Necessary Cookies

Strictly Necessary Cookie should be enabled at all times so that we can save your preferences for cookie settings.

Analytics

This website uses Google Analytics to collect anonymous information such as the number of visitors to the site, and the most popular pages.

Keeping this cookie enabled helps us to improve our website.

Marketing

This website uses the following additional cookies:

(List the cookies that you are using on the website here.)