শক্তি

বাংলাদেশের জন্য এখন সবচেয়ে বড় জ্বালানী সহযোগি দেশ চীন

জ্বালানী সহযোগীতার ক্ষেত্রে ভারতকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশের জন্য এখন সবচেয়ে বড় সহযোগী দেশ হিসেবে পাশে দাঁড়িয়েছে চীন। এই সহযোগিতার বেশিরভাগ জুড়েই রয়েছে অপরিশোধিত কয়লা ব্যবহার করে বিদ্যুত উৎপাদন। একইসঙ্গে ব্রক্ষ্মপুত্র নিয়ে সহযোগীতার বিষয়ে দেশটির রাষ্ট্রপতির ঢাকা সফরের সময় কোনো সুষ্পষ্ট কোনো বার্তা পাওয়া যায়নি
বাংলা
<p>Xi Jinping is the first Chinese President to visit Bangladesh since 1986 [file photo from APEC 2013 / Flickr]</p>

Xi Jinping is the first Chinese President to visit Bangladesh since 1986 [file photo from APEC 2013 / Flickr]

গত সপ্তাহে ঢাকা সফরের সময় দু’টি কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র্ স্থাপনসহ বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগের ঘোষনা দেন চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং । এর একটি দক্ষিণাঞ্চলের পটুয়াখালি জেলায় অবস্থিত ১,৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পায়রা বিদ্যুত প্রকল্প ও অপরটি বন্দর নগরী চট্টগ্রামের অবস্থিত ১,৩২০ মেগাওয়াট সম্পন্ন বাঁশখালি কয়লা বিদ্যুত প্রকল্প।

এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের জ্বালানী সহায়তার মাত্রা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে থাকা চলমান বিনিয়োগের মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেল।

পড়–ন:  চীনের র্অথায়নে নির্মিতব্য বিদ্যুত প্রকল্পের কারনে হুমকিতে ইলিশের অভয়ারণ্য

এর আগে ২০০৯ সালের দিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের কাছে রামপালে দু’টি কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। এতে ভারতের আর্থিক সহায়তার কথা ছিল। তবে পরবর্তীতে দেশে সাধারণ মানুষ এনিয়ে আন্দোলনে নামলে বাংলাদেশ সরকার রামপালে প্রস্তাবিত দ্বিতীয় প্রকল্প থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়।

প্রায় ৩০ বছর পরে ঢাকায় সম্প্রতি চীনের রাষ্ট্রপতির এই সফরকে ঘিরে প্রত্যাশা ছিল আকাশচুম্বী। এই সফরের সময় দু’দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চুক্তি সই হয়। তবে এই চুক্তিগুলোকে সকল পক্ষই যে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে তা কিন্তু নয়। নিজ দেশে চীন এখন কয়লা বিদ্যুত প্রকল্প থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিলেও দেশের বাইরে তারা যে সব বিনিয়োগ করছে তার বেশিরভাগই অপরিশোধিত প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে করা হচ্ছে।

মজার বিষয় হচ্ছে, সই হওয়া অন্যান্য চুক্তির মধ্যে আরো রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানী সেক্টরে একসঙ্গে কাজ করার মতো বিষয়। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ব্র্যাক-এর এমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত মনে করেন, কয়লা বিদ্যুত প্রকল্পের চেয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানী প্রযুক্তি নিয়ে চীনের সাথে কাজ করতে পারলে বাংলাদেশের জন্য অনেক ভালো হতো। কারন সৌর ও বায়ু শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে চীন এখন বিশ্ববাজারে অনেক এগিযে গেছে।

তবে আপাতদৃষ্টে জ্বালানী নিয়ে এ ধরনের ভাবনা বাংলাদেশের নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। কারন বাংলাদেশ আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ২০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর অর্থ হচ্ছে আগামী ৫ বছরের মধ্যে বর্তমান উৎপাদন সক্ষমতাকে দ্বিগুন পর্যায়ে নিয়ে যেতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ। এ মুহুতের্  দেশটির দৈনিক বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা  ১২,৭৮০ মেগাওয়াট।

Bangladesh's drive to increase access to electricity is a major driver of policy [image by Jane Rawson]
Bangladesh’s drive to increase access to electricity is a major driver of policy [image by Jane Rawson]
‘একই জল পান করছি আমরা’

ঢাকা সফরকালে পরিবেশগত বিষয় নিয়ে সরাসরি কথা বলেন চীনের রাষ্ট্রপতি। বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা একই নদীর জল পান করছি।  কারন আমাদের দেশে জন্ম নিয়ে ব্রক্ষ্মপুত্র নদী ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তার এ বক্তব্যকে অনেকেই আন্ত:সীমান্ত নদী নিয়ে একটি অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনারই ইঙ্গিত বলে মনে করছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক শাহাব এনাম খান বিষয়টিকে যদিও একটি সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন। তবে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের সাবেক সদস্য অধ্যাপক আইনুন নিশাত একে দেখছেন অন্যভাবে। দ্যথার্ডপোল.নেট এর সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ভারতের সহায়তার আশ্বাস ছাড়া চীনের রাষ্ট্রপতির এই মন্তব্যের কোনো ইতিবাচক অর্থ আছে বলে আমি মনে করি না। কারন এই ইস্যুতে ভারত কখনই বহুপাক্ষিক আলোচনায় বিশ্বাসী নয়।

অন্যদিকে ব্রক্ষ্মপুত্রের  (চীনে এই নদীর নাম ইয়ার্লুং জাংপো) উজানে একটি শাখা নদী জিয়াবুকুতে বাঁধ দেয়ার ফলে চীনের এই অবস্থানকে পরস্পরবিরোধী বলে আমার মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, চীনা কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য এখনও প্রচার করেনি। তারা বলেছে, কেবল বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যেই তারা এখানে বাঁধ দিয়েছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আতাউর রহমান বলেন, ব্রক্ষ্মপুত্র নিয়ে চীনের রাষ্ট্রপতির এমমন মন্তব্যের বিষয়টি এখনও পরিস্কার নয়। তবে ব্রক্ষ্মপুত্র নিয়ে তিনি যদি আসলেই সহযোগীতার প্রস্তাব দেন, সেটি আমাদের সবার জন্যই মঙ্গল  হবে।

এক বেল্ট, এক সড়ক

এই ধরনের বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়গুলো চীনের সিল্ক রোড পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যথেষ্ট ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

গত ১৫ অক্টোবর চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশন (সিসিটিভি) দেশটির রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে এক সংবাদে জানায়,  দু’দেশের মধ্যে বানিজ্য সম্প্রসারনের লক্ষ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তুলতে চীন ও বাংলাদেশ সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখবে। এর মধ্য দিয়ে উভয় দেশই উৎপাদন সক্ষমতা, জ্বালানি, বিদ্যুত, যোগাযোগ, পরিবহন ও কৃষিক্ষেত্রে সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারন করতে সক্ষম হবে।

চীনের সিল্ক রোড পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ভৌগলিকভাবে একটি কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে চীন এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার দেশগুলোর সাথে সংযুক্ত হয়ে বাজার সম্প্রসারন করতে চায়।

Sheikh Hasina, the Bangladeshi Prime Minister, seems enthusiastic about the Chinese One Belt, One Road [image courtesy Asia Society/Flickr]
Sheikh Hasina, the Bangladeshi Prime Minister, seems enthusiastic about the Chinese One Belt, One Road [image courtesy Asia Society/Flickr]
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও বিষয়টি নিয়ে আগহী মনে হচ্ছে। চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ঝিনহুয়া এ তথ্য জানিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ চীনের এক বেল্ট, এক সড়ক উদ্যোগের সাথে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে আগ্রহী। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমার একটি অর্থনৈতিক করিডোর সৃষ্টিতে একযোগে কাজ করতে পারবে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো এতদিন চীনের জন্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। কিন্তু ২০১৩ সালের পর চীন যখন এই এক বেল্ট, এক সড়ক উদ্যোগ গ্রহন করে তারপরেই এ অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে সম্পর্কোন্নয়নের পরিধী বিস্তার করতে শুরু করে। এমন মন্তব্য করেন দেশটির পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক কেন্দ্রের পরিচালক ঝিয়াং ঝিংকুই। তাকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশের সংবাদপত্র দ্য ডেইলি স্টার এ তথ্য জানায়। ১৯৮৬ সালে লি ঝিয়ানিয়ানের পর এই প্রথম বাংলাদেশে চীনের একজন রাষ্ট্রপতি ঢাকা সফর করলেন। তার এই সফরের মধ্য দিয়ে দু’দেশের সম্পর্কের মধ্যে নতুন এক দিগন্তের সৃষ্টি হলো। তবে এটি কি শুধুই পারস্পরিক লেনদেনের না হয়ে অংশিদারিত্বের সূচনা করবে; কিংকা সহযোগিতার এই মাধ্যম পরিবেশ বান্ধব ও বহুপাক্ষিক হবে কি না, সেটাই এখন ভাবার বিষয়।

Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.

Strictly Necessary Cookies

Strictly Necessary Cookie should be enabled at all times so that we can save your preferences for cookie settings.

Analytics

This website uses Google Analytics to collect anonymous information such as the number of visitors to the site, and the most popular pages.

Keeping this cookie enabled helps us to improve our website.

Marketing

This website uses the following additional cookies:

(List the cookies that you are using on the website here.)