দূষন

বায়ু দূষণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরিশ্রান্ত বাংলাদেশ

সরকারের পক্ষ থেকে শক্ত পদক্ষেপ থাকার পরেও রাজধানী ঢাকা এবং এর আশেপাশে পরিবহন ও শিল্প-কারথানার নিঃসরণ এখন ‘বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত' দেশের কাতারে নিয়ে দাড় করিয়েছে বাংলাদেশকে
বাংলা
<p>ঢাকার শ্যামপুরের স্টিল রি-রোলিং মিলগুলো থেকে নির্গত ধোয়া কুয়াশার মতো আবারণ সৃষ্টি করে চরমভাবে বাতাসকে দূষিত করছে। অনেক ক্ষেত্রেই এসব দূষণের কারনে দিনের বেলায় সুর্যের আলো বলতে গেলে দেখাই যায় না (ছবি: সৈয়দ মাহাবুবুল কাদের /এ্যালামি)</p>

ঢাকার শ্যামপুরের স্টিল রি-রোলিং মিলগুলো থেকে নির্গত ধোয়া কুয়াশার মতো আবারণ সৃষ্টি করে চরমভাবে বাতাসকে দূষিত করছে। অনেক ক্ষেত্রেই এসব দূষণের কারনে দিনের বেলায় সুর্যের আলো বলতে গেলে দেখাই যায় না (ছবি: সৈয়দ মাহাবুবুল কাদের /এ্যালামি)

বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার বাসিন্দা মাহমুদা খাতুন তার নিজের ছেলেকে সাথে করে প্রচল্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট এবং হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছেন। ৫০ বছরের এই বৃদ্ধা দীর্ঘদিন যাবত একজন হাঁপানি রোগী। অবস্থার অবনতির পরে ঢাকার হাসপাতালে এসেছেন চিকিৎসার আশায়। হাসপাতালের বারান্দায় দেখা হতেই মাহমুদার ছেলে আহমেদ হোসেন দ্য থার্ড পোলকে বলেন, ‘আগে শুধু শীতকালে মায়ের সমস্যা বেড়ে যেত, কিন্তু এখন বছরে দুই থেকে তিনবার তার অবস্থার অবনতি হয়।”

দীর্ঘমেয়াদী বায়ু দূষণের কারনে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু দিন দিন কমে আসছে। দ্রুত নগরায়ন, অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ নির্মাণ কাজ এবং পরিবর্তিত জলবায়ুর প্রভাবে তীব্র শ্বাসযন্ত্রের রোগ বেড়েই চলছে, সেই সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে অর্থনৈতিক ব্যয়ভার।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে বায়ু দূষণের পরিমান এখন সবচেয়ে বেশি। এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স ২০২৩ (যাতে ২০২১ সালে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট ) অনুসারে প্রতি ঘনমিটারে গড়ে ৭৪  মাইক্রোগ্রাম মাত্রার যে স্কেল রয়েছে সে অনুসারে বাংলাদেশের বাতাসে গড়ে পিএম মাত্রা হচ্ছে ২.৫। অথচ ওই একই সময়কালে রেকর্ড করা ভারত, চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাত্রা ছিল যথাক্রমে ৫৮.৭. ৩০.২ এবং ৭.৮।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রণীত সর্বশেষ  গ্লোবাল এয়ার কোয়ালিটি নির্দেশিকা প্রকাশিত হয় ২০২১ সালে। এর মাধ্যমে সদস্যভূক্ত দেশের সরকারগুলোকে বাতাসের মান বজায় রাখতে একটি  লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। ২০২১ সালে প্রণীত এই মাত্রার বিপরীতে বাংলাদেশের জাতীয় গড় দূষণ পরিমাপ করে অনুমান করা হয় যে দূষনের কারনে এখানকার প্রতিটি বাসিন্দা কমপক্ষে ৬.৮ বছর করে জীবন হারাচ্ছে।

পার্টিকুলেট ম্যাটার এবং পিএম ২.৫

পার্টিকুলেট ম্যাটার বা বস্তুকণা বলতে বায়ুতে পাওয়া বস্তুকণা এবং তরল ফোঁটার মিশ্রণকে বোঝায়। কিছু কঠিন কণা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া থেকে আসে, আবার কিছু কণা বা পার্টিকুলেট জ্বালানী পোড়ানো এবং নির্মাণ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেও বায়ুতে ছড়িয়ে পড়ে। আর এগুলো কিন্তু মানুষের কার্যক্রমের কারনেই ঘটে থাকে।

এরমধ্যে কিছু বস্তুকণা মানুষের জন্য উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে কিছু কিছু বস্তুকণা আছে যা এত ছোট যে তা শ্বাস নেয়ার সময় শরীরের গভীরে প্রবেশ করতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগজনক হল ২.৫ মাইক্রোমিটারের কম ব্যাসযুক্ত বস্তুকনা  যা “পিএম ২.৫” নামে পরিচিত।

জলবাযু বিষয়ক বিভিন্ন সংজ্ঞা এবং পরিভাষা জানতে আমাদের বিশেষ নিবন্ধটি এখানে ক্লিক করে পড়ুন

এবিষয়ে দ্য থার্ড পোল বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মহাপরিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলমের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন “বায়ুতে থাকা এমন অনেক ভারী ধাতু রক্তের সাথে মিশে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগর সষ্টি করে থাকে। তাই একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে বায়ু দূষণের ফলে মানুষের আয়ু কমে আসতে পারে। ”
বায়ুর গুণগত মানের ফলে বাংলাদেশে কী পরিমান মৃত্যু হয়ে থাকে সেসম্পর্কে সঠিক পরিসংখ্যান নিজের কাছে না থাকলেও এই সিভিল সার্জন নিশ্চিত করে বলেন দূষণের ফলে বায়ুর মান খারাপ হয়ে যাবার কারনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়ছে।

টানা দু’বছর জুড়ে অস্বাস্থ্যকর বাতাস

পরিবেশ অধিদপ্তরের এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্টের পরিচালক মুহাম্মদ জিয়াউল হকের মতে, দেশের ভিতর খোদ রাজধানীতে এই সমস্যাটি সবচেয়ে বেশি প্রকট। তিনি বলেন, “ঢাকার বাতাসের মান প্রতি বছরই খারাপের দিকে যাচ্ছে। “সাধারণত, বর্ষাকালে বাতাসের গুণমান কিছুটা ভালো হয়, তবে এ বছর বর্ষা মৌসুমের শেষের দিকে পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল।”

বাংলাদেশের শহরগুলোতে বায়ু দূষণের তীব্রতা প্রায়ই বিশ্বব্যাপী শিরোনাম হয়। এটি পুরানো যানবাহন, ইটের ভাটা, বিশাল নির্মাণ কাজ এবং জীবাশ্ম জ্বালানি এবং জৈব পদার্থ পোড়ানোর বায়ুমণ্ডলীয় এক ধরনের মারাত্বক দূষণ সৃষ্টি করে।

একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে বায়ু দূষণের ফলে মানুষের আয়ু হ্রাস পায়
স্বাস্থ্য মহাপরিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম

পরিবেশ অধিদপ্তর প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন শহরের দৈনিক দূষণের তথ্য প্রকাশ করে থাকে। এটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ঢাকা এবং পার্শ্ববর্তী শহর গাজীপুরের (একটি শিল্প নগরী) বাতাসের  গুণগত মান ২০২১ বা ২০২২ সালের কোনো একটি মাসেও  “ভাল” গড় মাত্রার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারেনি।

০ থেকে ৫০ এর মধ্যে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর “ভাল” বলে বিবেচিত হয়, যেখানে ১৫১ – ২০০ কে “অস্বাস্থ্যকর” মাত্রা এবং সাধারণ জনগণের জন্য সম্ভাব্য নেতিবাচক স্বাস্থ্যের প্রভাবকে নির্দেশ করে। গত বছরের নভেম্বরে, ঢাকার বাতাসের গড় মানের রেটিং ছিল “অস্বাস্থ্যকর”। এর মধ্যে গত ২৩ নভেম্বর মাত্রা ছিল সবচেয়ে অস্বাস্থ্যকর (২৩৪)। এটি এই সময়ের ভিতর ছিল সবচেয়ে শীর্ষে।

নির্মাণশিল্প এবংপরিবহন দূষণ

সরকারি কর্মকর্তারা দ্য থার্ড পোলকে বলেন যে জাতীয় বায়ু দূষণ মোকাবেলা করার জন্য বেশ কয়েকটি সেক্টরকে ঢেলে সাজাতে হবে।

উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের ইট ভাটার কারণে সৃষ্ট দূষণ মোকাবেলা করতে গিয়ে কিন্তু ২০১৭ সালে একটি জাতীয় টেকসই কৌশল প্রণয়ন করা হয়। “আমরা নানাভাবে এই শিল্পের সাথে যুক্ত দোষীদের শাস্তির আওতায় আনছি, কিন্তু তাতে তো দূষণ বন্ধ হচ্ছে না, হক বলেন। “নির্মাণ সংশিল্পের সাথে যুক্তরা খুব কমই আমাদের কথা শোনে।”

সরকার তাই ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে সরকারী বা সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় নির্মিত দালানে ইটের ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার দিকে মনোনিবেশ করে। কিন্তু মহামারীসহ বিভিন্ন কারণে এটি থমকে যায়। এখন ২০২৯ সালের একটি নতুন লক্ষ্যমাত্রা  প্রস্তাব করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এটমোসফিয়ারিক কেমেস্ট্রির অধ্যাপক আবদুস সালামের সাথে কথা বলে দ্য থার্ড পোল। তিনি নির্মাণ শিল্প নিয়ে সরকারের দাবীর সাথে একমত হতে পারছেন না বলে জানান। তিনি বলেন,  “বেসরকারীখাতে নির্মাণশিল্পের কথা ছেড়ে দিন, ঢাকা জুড়ে বেশ কয়েকটি মেগাপ্রকল্পের কাজ চলছে। [প্রায় সবগুলোই সরকার সমর্থিত। কিন্তু এসব প্রকল্প নির্মাণের সময় কতগুলো নিয়ম সঠিকভাবে মেনে কাজ পরিচালনা করা হয়েছে ?”

জিয়াউল হক বলেন, পুরোনো যানবাহন বাংলাদেশের বায়ু দূষণের  আরেকটি প্রধান কারণ: পুরানো যানবাহনে অসম্পূর্ণ জ্বালানি দহনের সমস্যাটি একেবারেই সাধারণ। এটি থেকে বিপজ্জনক বায়ু দূষণকারী নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড (NO2) নির্গত হয়। তিনি বলেন, “যানবাহন যত পুরনো হবে, এটি থেকে তত বেশি দূষণ ঘটবে।”

সেপ্টেম্বর ২০২৩ -এর গবেষণা “স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার: সাউথ এশিয়া, একটি আঞ্চলিক এয়ার কোয়ালিটি স্ন্যাপশট” বলেছে ঢাকার বাতাসে NO2 এর ক্রমবর্ধমান ঘনত্ব (বৈশ্বিক প্রবণতার বিপরীত) এখন গুরুতর উদ্বেগের কারণ।

NO2 শ্বাসনালীকে জ্বালাতন সৃষ্টি পারে, বিদ্যমান শ্বাসযন্ত্রের রোগগুলোকে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে, শিশুদের মধ্যে হাঁপানির ঝুঁকি বাড়াতে পারে এবং শিশুদের এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে হাঁপানির লক্ষণগুলোর মাত্রা এবং তীব্রতা বৃদ্ধি করতে পারে। এটি শুধুমাত্র মানুষের স্বাস্থ্যকেই প্রভাবিত করে না, বরং এটি পৃথিবীর স্ট্রাটোস্ফিয়ারিক ওজোন স্তরকেও  ক্ষয় করছে।

আগস্ট ২০২৩-এ, সরকার – পরিবহন ব্যবসার চাপে – বাণিজ্যিক বাস এবং লরিগুলোর কর্মজীবন যথাক্রমে ২০ এবং ২৫ বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ করার জন্য নিজস্ব আদেশ বাস্তবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর মানে দশক পুরনো হাজার হাজার যানবাহন বাংলাদেশের রাস্তায় থাকতে পারে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, সড়কে ফিটনেস সনদবিহীন গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। এপ্রিল পর্যন্ত, প্রায় ৫৬৮,০০০ নিবন্ধিত যানবাহনের ফিটনেস শংসাপত্র ছিল না – ২০২২ সালের জানুয়ারির তুলনায় যা ৬০,০০০ বেশি।

অভ্যন্তরীণ এবং আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণ

আমরা অনেকেই বাইরের বাতাসের গুণগত মান নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছি, কিন্তু একথা মনে রাখতে হবে যে বাইরের সাথে সাথে বাড়ির ভিতরের বায়ুও  নিরাপদ নয়। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ডিজিজেস অফ দ্য চেস্ট অ্যান্ড হসপিটাল দ্বারা সংগৃহীত তথ্যে দেখা যায় গৃহাভ্যন্তরে বায়ু দূষণ ২০২০ সাল থেকে বেড়ে চলেছে। হাসপাতালটি জানায় গৃহাভ্যন্তের বায়ুৃ দূষণে আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালে ১১,৭৮৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছিল। ২০২২ সালে একই হাসপাতালে এই ধরনের রোগীল সংখ্যা ছিল ১৫,৮৪২।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, ৭৭% পরিবার এখনও রান্নার কাজে জ্বালানীর জন্য বায়োমাস (যেমন পাতা, কাঠ এবং শুকনো গোবর) ব্যবহার করে, যা গ্রামীণ এলাকায় বায়ু দূষণের একটি প্রধান উৎস।

“আমাদের দেশের প্রতিটি অঞ্চলে পরিষ্কার জ্বালানী নিশ্চিত করতে হবে,” হক বলেন। “এই বিশাল রান্নার সিস্টেমটি স্থানান্তর করতে প্রচুর সময় লাগবে।”

এদিকে, বায়ু দূষণ অন্য জায়গা থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে; দূর্বল সড়কে যানবাহন, ইটের ভাটা এবং বায়োমাস দিয়ে রান্না সবই নেপাল ও ভারতের বায়ুকে দূষিত করে। এই বছরের শুরুর দিকে, বিশ্বব্যাংক “পরিচ্ছন্ন বায়ুর জন্য প্রচেষ্টা: দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ু দূষণ এবং জনস্বাস্থ্য” শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব বাতাসের কারণে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শহরগুলির আনুমানিক ৩০% দূষণ উত্তর ভারতে উৎপন্ন হয়।

A satellite photograph with labels marking Patna, Dhaka and Kolkata in Bengali
উত্তর ভারত এবং বাংলাদেশের উপর শীতের কুয়াশা, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৪ (চভী: জেফ শ্মল্টজ / নাসা আর্থ অবজারভেটরি)

আন্তঃসীমান্ত বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে কাজ করতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ – বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং পাকিস্তান – ২০৩০ সালের মধ্যে জাতীয় বার্ষিক গড় পিএম ২.৫ মাত্রা ৩৫ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটারে কমিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। ঘোষণাটি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে নেপালে গ্রহন করা হয়।  বিশ্বব্যাংক এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট এই বৈঠক আয়োজনে সহায়তা করে।

তবে জিয়াউল হকের মতে, এই আন্তঃসীমান্ত চুক্তিটি এখনও রাজনৈতিক সমর্থন অর্জন করতে পারেনি: “এতে সময় লাগবে।”

আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়ত ও জাতীয় উদ্যোগ

বেসরকারী সংস্থা ক্লিন এয়ার ফান্ডের সেপ্টেম্বরের “স্টেট অফ গ্লোবাল এয়ার কোয়ালিটি ফান্ডিং ২০২৩ ” রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশ ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে দেশের বাইরের বায়ুর গুণমান উন্নতির জন্য আন্তর্জাতিক তহবিলের তৃতীয় শীর্ষ গ্রহীতা ছিল। এই সময়ের মধ্যে, দেশটি তহবিলের ১৮% পেয়েছিল, চীন পেয়ছিল ৩৭% এবং ফিলিপাইন ২০%।  প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে বাংলাদেশ ২,৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন তহবিল ২০১৫ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বায়ুর মান উন্নয়নের জন্য সহায়তা পেয়েছে।

এই আন্তর্জাতিক তহবিল জাতীয় কর্ম দ্বারা সমর্থিত বলে মনে হয়। সরকার মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বায়ু দূষণ কমিটি গঠন করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক দূত সাবের হোসেন চৌধুরীর মতে, বিশুদ্ধ বায়ু আইন প্রণয়নের কাজ চলছে। একটি ক্লিন এয়ার অ্যাক্টের খসড়া তৈরির পর, সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এটিকে ১৯৯৫ সালের বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এটি ২০২২ সালে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধি প্রকাশের দিকে পরিচালিত করে। এই নিয়মগুলি জাতীয় বায়ু মান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার ভিত্তি তৈরি করে, যা ২০২৪ সালের প্রথম দিকে চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান হক।

কিন্তু জিয়াউল হকের মতে, স্পষ্ট তথ্য ছাড়াই এই নিয়মগুলি বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা রয়েছে। ২০১৮ সালে, দ্য থার্ড পোল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয় পরিবেশ বিভাগ ঢাকায় তিনটি একটানা এয়ার-মনিটরিং স্টেশন (সিএএম) চালাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেই সময়ে সারা বাংলাদেশে আরও ১৩টি সিএএম স্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যবর্তী ছয় বছরে আরও একটি স্থাপন করা হয়েছে। জিয়াউল হক আরো বলেন, এই স্টেশনগুলি শধুমাত্র পিএম ২.৫ পরিমাপ করতে পারে, কিন্তু নির্গমন উত্স সনাক্ত করতে পারে না।

তবে সাবের হােসেন চৌধুরী বলেন, আমরা অভ্যন্তরীণ এবং বহিরঙ্গন উভয় দূষণের উত্স সনাক্ত করেছি এবং এটি এখনই কার্যকর করার সময়।” তিনি বলেন, বায়ু দূষণের উদ্যোগের সাথে ব্যক্তিগত নির্মাণ কার্যক্রমকে সারিবদ্ধ করার জন্য মনিটরিং সেল স্থাপন করা হবে। “আমরা বাংলাদেশে বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পথে রয়েছি।”