তিরিশ বছর আগে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি সমগ্র বিশে^র সামনে প্রথমবারের মতো তুলে ধরেছিল ছোট একটি দেশ ভানুয়াতু। ১৯৯১ সালে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগীয় এই দেশটি ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহের (স্মল আইল্যান্ড স্টেস – এওএসআইএস) সভাপতি হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ইন্টারগভর্ণমেন্টাল নেগোশিয়েটিং কমিটির (আইএনসি) কাছে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা পেশ করে। আইএনসির মূল কাজ ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে একটি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন প্রস্তুত করা।
গত দশকে সুশীল সমাজের নিরলস প্রচেষ্টা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট একের পর এক দুর্যোগের ঘটনায় অবশেষে এই বিষয়টি এখন যে পরিমান প্রাধান্য পাওয়ার প্রয়োজন ছিল তা পেতে শুরু করেছে। গত নভেম্বর মাসে গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনে (গ্লাসগো ক্লাইমেট প্যাক্ট) লস এন্ড ড্যামেজের (ক্ষয়-ক্ষতি) বিষয়টি জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘ কৌশলগত কনভেনশনের স্বীকৃতি পায়। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আন্তর্জাতিক কোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কৌশলগত এবং শক্তশালী ভাষা ব্যবহার করা হয়।
বৈশ্বিক উঞ্চায়নের কারনে আমাদের পরিবেশ পরিবর্তিত হচ্ছে। এর প্রভাবে একের পর এক ভারী বন্যা, তাপপ্রবাহ, ঝড় এবং সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের বৈরী জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষ এখন অভিযোজনের প্রচেষ্টা করে থাকে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোজন একেবারেই অসম্ভব কারন এই ধরনের জলবায়ুগত প্রভাবে জীবনহানির পাশিাপাশি, উপকূলীয় বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়া, ভূমি অনুর্বর হওয়া, মানুষের বসবাসের স্থান স্থায়িভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়াসহ গবাদি পশু মারা যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক যেসব ক্ষয়ক্ষতি কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যায় না সেগুলোই লস এন্ড ড্যামেজ হিসেবে পরিচিত।
এই স্বীকৃতিটি ঠিক তখনই জোড়ালো হলো যখন চরম আবহাওয়ার বিষয়টি বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের শিরোনাম হতে শুরু করে। স্পেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি এ যাবতকালের সবচেয়ে ভয়াবহ তুষার ঝড়ের ঘটনা ঘটে। জার্মানী, ভারত, যুক্তরাজ্য ও চীনে ঘটে যায় চরম বন্যা। ইন্দোনেশীয়ায় প্রবল ঘূর্নিঝড়, কানাডায় ভয়াবহ তাপ প্রবাহের পাশাপাশি ইউরোপ ও তুরস্কে ঘটে মারাত্বক দাবানল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, এবছর সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনাগুলো ঘটে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও ধানী দেশগুলোতে, যারা হয়তো ভাবতো জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি কেবল উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কিন্তু উন্নত দেশগুলো শিল্পায়ন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ আহরনের ফলে উপকৃত হয়েছে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট চরম আবহাওয়া ও দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় তাদের রয়েছে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা।
অন্যদিকে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র অর্থনীতির দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট নানা দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে সীমিত সম্পদ ও সক্ষমতা রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জলবায়ু-পরিবর্তনজনিত লস এন্ড ড্যামেজ-এর (ক্ষয়-ক্ষতি) আর্থিক মূল্য গিয়ে দাঁড়াবে ২৯০ – ৫৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
এটি নি:সন্দেহে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি এবং বিশ্ব নেতৃবন্দকে এখনই বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। অথচ দেখা গেল লস এন্ড ড্যামেজ নিয়ে কার্যকর কোনো সিন্ধান্তে উপনীত না হয়েই শেষ হতে হলো এবারের জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন। বিশে^র ৮৫ শতাংশ জনগনের প্রতিনিধিত্বকারী উন্নয়ননশীল রাষ্ট্রগুলো লস এন্ড ড্যামেজ নিয়ে একটি অর্থায়ন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে প্রস্তাবনা পেশ করে। এটি ক্ষমাহীনভাবে এড়িয়ে যায় উন্নত দেশগুলো, অথচ এই দেশগুলোই বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারন।
লস এন্ড ড্যামেজ নিয়ে কপ-২৬ সম্মেলনে কী হয়েছে?
এবারের জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে লস এন্ড ড্যামেজের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে এজন্ডায় না থাকলেও, বিশ্বের ১৩০টি দেশের ১৫০০টি সুশীল সমাজ ভিত্তিক এলায়েন্স ক্লাইমেট একশন নেটওয়ার্ক (সিএএন) গ্লাসগো সম্মেলনের আগেই লস এন্ড ড্যামেজকে এবারের সম্মেলনের সফলতার ক্ষেত্রে লিটমাস টেষ্ট হিসেবে চিহ্নিত করে। সিএএন লস এন্ড ড্যামেজ নিয়ে আন্ত:সহযোগিতা এবং তরুন জোট সৃষ্টিতে সুশীল সমাজ, মিডিয়া এবং মূল নীতি নির্ধারকদের নিয়ে এই বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে নিয়ে আসার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
এবারের সম্মেলনে স্কটল্যান্ডের ফার্ষ্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজোন লস এন্ড ড্যামেজ মোকাবেলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহযোগিতার জন্য এক বিলিয়ন বৃটিশ পাউন্ডের একটি প্রতিকী অনুদানের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। এর মধ্য দিয়ে এই বিষয়টি নিয়ে যে ট্যাবু (নিষিদ্ধ ধারণা) রয়েছে তা ভাঙ্গার চেষ্টা করেন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি এই অনুদানের পরিমান দ্বিগুন করার কথা বলেন। তিনি বলেন, এই অর্থায়নের মূল উদ্দেশ্য দানশীলতা নয় বরং এটি করতে হবে উন্নয়ণশীলগুলোকে ক্ষতিপূরনের অংশ হিসেবে। তিনি গ্লাসগো সম্মেলনের সাথে একাত্ম হয়ে ধনী দেশগুলোকে উন্নয়নশীল ও বিপদের মুখোমুখি থাকা দেশগুলোর প্রতি তাদের যে ঋণ রয়েছে তা পরিশোধের বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানান।
স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জোট এলডিসির সহযোগিতায় এওএসআইএস গ্লাসগো লস এন্ড ড্যামেজ শীর্ষক একটি অর্থায়ন সুবিধা সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে। এটি পরবর্তীতে বিশ্বের সবকটি উন্নয়নশীল দেশ (জি-৭৭) এবং চীন সমর্থন করে। এই অর্থ সুবিধার মাধ্যমে লস এন্ড ড্যামেজ এড়ানো কিংবা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেয়াসহ ২০২২ সালে অনুষ্ঠিতব্য জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে এবিষয়ে সুপারিশমালা তৈরি করা হবে যা তা বাস্তবায়ন করা যায়।
এই দাবীর বিষয়টি দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। অথচ এই দাবীর পক্ষে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় জনহিতকর কিছু সংস্থার একটি জোট চিল্ড্রেন্স ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ফাউন্ডেশন। তারা একটি বিবৃতি প্রদানসহ গ্লাসগো সম্মেলনে লস এন্ড ড্যামেজ সংক্রান্ত আর্থিক সহযোগিতার উদ্দেশ্য অর্জনে একটি কার্যকর কৌশলপত্র তৈরিতে তিন মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি অনুদান ঘোষনা করে।
এই সম্মেলন শেষ হওয়ার সাথে সাথেই বেলজিয়ামের তিনটি অঞ্চলের একটি ওয়ালোনিয়ার জলবায়ু মন্ত্রী ফিলিপ হেনরি এক মিলিয়ন ইউরো সহযোগিতার ঘোষনা দেন। এই অর্থ সাহায্য দেয়া হবে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশুগলোর জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে সৃষ্ট লস এন্ড ড্যামেজ কাটিয়ে উঠার ক্ষেত্রে সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে।
তাই বলায় যায় এই সম্মেলনে দরিদ্র দেশগুলোর সাথে সংহতি প্রকাশের পাশাপাশি আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতিও এসেছে। আর অন্যদিকে বড় বড় দেশগুলো কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতির দিকে না গিয়ে বরং আগামী ২০২২ এবং ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই ধরনের অর্থায়নের ক্ষেত্রে কী করা যায় তা নিয়ে সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব প্রদান করে। এবারের গ্লাসগো ক্লাইমেট প্যাক্টে এই বিষয়গুলো অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে।
ক্ষুদ্র দেশগুলোর জোট এই ফলাফল মেনে নিয়েছে। তারা এবারের শীর্ষ সম্মেলনের সভাপতি অলোক শর্মার প্রতি একটি শক্ত বিবৃতি প্রদান করে। তারা বলে, এই শীর্ষ সম্মেলনের ফলাফলকে একটি ঐকমত্যে পৌঁছানোর স্বার্থে পাঠ্যটিকে প্রদান হিসাবে গ্রহণ করবে কারণ এটি স্পষ্ট যে এই শীর্ষ সংলাপ লস এন্ড ড্যামেজ কাটিয়ে উঠতে আর্থিক সুবিধা তৈরির দিকে একটি মূল পদক্ষেপ।আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে এই চলমান সংলাপ পরবর্তী জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে লস এন্ড ড্যামেজ নিয়ে আর্থিক সুবিধার বিষয়টি একটি উপসংহারের দিকে ধাবিত করবে।
লস এন্ড ড্যামেজের ভারাক্রান্ত ইতিহাস
জাতিসংঘের বিভিন্ন পর্যায়ে লস এন্ড ড্যামেজ নিয়ে জলবায়ু পরির্বতনের ক্ষতির মুখে থাকা দেশগুলো সংগ্রামের ইতিহাসটি বেশ হতাশাব্যঞ্জক।
২০১৫ সালে, ধনী দেশগুলো অভিযোজনের বাইরে গিয়ে লস এন্ড ড্যামেজকে স্বিকৃতি দেয়ার ক্ষেত্রে সম্মত হয়েছিল কপ-২১ সম্মেলনে একটি পৃথক ধারা সন্নিবেশিত করার শর্তে । এটি হচ্ছে (প্যারিস) চুক্তির ৮ ধারার মধ্য দিয়ে দায় বা ক্ষতিপূরনের কোনো ধারনা সংযুক্ত বা সন্নিবেশিত হবে না। সীমাহীন দায়বদ্ধতার আশংকায় তারা এই ধারা যুক্ত করার পথে এগিয়ে যায়।
ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস দ্বারা জারি করা পরামর্শমূলক মতামত নৈতিক কর্তৃত্ব প্রদর্শন করে এবং আইনি ক্ষমতা বহন করে যা আন্তর্জাতিক আইনের বিকাশকে অবহিত করতে পারে
উন্নয়নশীল দেশগুলো অসহায়ভাবে এটিকে এক প্রকার মেনে নেয়। তাদের প্রত্যাশা ছিল এই ধীরে ধীরে কোনো সিদ্ধান্তে হয়ত উপনীত হওয়া সম্ভব হবে এবং সহযোগিতা এবং সংহতির অংশ হিসেবে তারা উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধা পেতে সক্ষম হবে। কিন্তু ধনী দেশগুলো লস এন্ড ড্যামেজ নিয়ে ওয়ারশ ইন্টারন্যাশনাল মেকানিজম-এর আওতায় এনিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ দল তৈরির প্রস্তাবকে যেভাবে বাধা দিয়ে আসছে তাতে লস এন্ড ড্যামেজ নিয়ে নতুন কোনো পদক্ষেপ গ্রহন করা যেন এক প্রকার অনশ্চিত।
সুশীল সমাজ ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর চাপে ধনী দেশগুলো মাদ্রিদে ২০১৯ সালে করনীয় এবং সহযোগিতা নিয়ে কৌশল প্রনয়নে একটি বিশেষজ্ঞ দল তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই দলটির কাজের পটরিধী অত্যন্ত সংকীর্ণ।
আইনের পথে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো
অবশেষে ভানুয়াতু এবছর সেপ্টেম্বরে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের সুরক্ষা বিষয়ে একটি মতামত প্রদানের জন্য ন্যায়বিচার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আদালতের (ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস) দ্বারস্থ হয়। আবেদন দেশটি উল্লেখ করে যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ঠ যে ভয়অবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বৈরি আবহওয়অ তৈরি হচ্ছে তার প্রভাব মোকাবেলায় বহুপাক্ষিক সহায়তার পথ অত্যন্ত সংকীর্ণ ও অপর্যাপ্ত। যদিও আদালতে কোনো মতামত সবার জন্য আইনগত বাধ্যবাধকতা নয় তবে এনিয়ে আন্তর্জাতিক কোনো আইন প্রনয়নের ক্ষেত্রে এই মতামত অত্যন্ত গুরুত্ব ও আইনগত ভিত্তি বহন করবে।
এবারের জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনের ঠিক আগেই এওএসআইএস-এর সভাপতি ও এন্টিগুয়া এন্ড বারবুডার প্রধানমন্ত্রী গ্যাস্টোন ব্রাউন এবং তুভালুর প্রধানমন্ত্রী কসিয়া নাতানো জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা মোকদ্দামার সম্ভানা তৈরিতে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পাদন করেন। এর মধ্য দিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলো উন্নত দেশগুলোর সাথে যে কোনো সহযোগিতার ক্ষেত্রে আইনগত কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পাবে।
এই চুক্তির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন ও আন্তর্জাতিক আইন নিয়ে ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলোর একটি কমিশন গঠিত হলো যা একটি ন্যায় ও যথার্থ বৈশ্বিক পরিবেশ সংক্রান্ত নিয়ম ও অনুশীলন গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এর পাশাপাশি এটি কার্বণ নির্গমন, সমুদ্র দূষণ এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি নিয়ে রাষ্ট্রের দায়-দায়িত্ব কী হবে তা নিয়ে প্রয়োজনে ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর দ্য ল অব দ্য সি’র (আনক্লস – যা একটি স্বতন্ত্র আন্তর্জাতিক ও আন্ত:সরকারী একটি সংস্থা) মতামত চাইতে পারবে।
গ্লাসগোতে নিজেদের সর্বশেষ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে উন্নয়নশীল দেশগুলো আবারো লস এন্ড ড্যামেজ সংক্রান্ত অর্থায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের চাহিদার বিষয়টি জোরালোভাবে উপস্থাপন করে এবং আগামী বছর মিশরে অনুষ্ঠিতব্য কপ-২৭ শীর্ষ সম্মেলনে তা বাস্তবায়নের জন্য উৎসাহ প্রদন করে।
যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব দিনকে দিন বেড়েই চলেছে, যদি উন্নত দেশগুলো এনিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাথে সৌহার্দ্য ও সহযোগিতার পথ অনুসরণ না করে, তাহলে সামনের দিনগুলোতে হয়ত আমরা দূষণকারীদের বিপক্ষে আরো অনেক আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করার উদাহরণ দেখতে পাবো। এর উদ্দেশ্য হবে কেবল উন্নত দেশগুলোকে জবাবদিহিতার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা এবং যে কোনো ক্ষয়ক্ষতির কারন হয়ে থাকলে তার জন্য তাদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা।
আসলে মরিয়া সময় কেবল মরিয়া পদক্ষেপ গ্রহনেরই বারতা জানায়।
অনুবাদ: মোর্শেদা আক্তার পরী