“মৌসুমের অর্ধেক সময় এরই মধ্যে অতিবাহিত হয়ে গেল। কিন্তু ইলিশ কোথায়?”
নদীতে ইলিশের কথা জানতে চাইলে এভাবেই নিজের মত প্রকাশ করেন বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা ভোলার বাসিন্দা মৎসজীবী আবু জাহের।
তিনি বলেন, “এরইমধ্যে ৬৫ দিনের একটি দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞা শেষ হলো। নদীতে এখন পর্যাপ্ত পানিও আছে। কিন্তু ইলিশ তো নেই। আমি অত্যন্ত শংকিত সামনের দিনগুলো নিয়ে। যদি এই মৌসুমে ইলিশ না পাই, ঋণ শোধ করা তো দুরের কথা, পরিবার-পরিজনের জন্য খাবারের যোগান দেয়াই অসম্ভব হয়ে পড়বে!”
বাংলাদেশ ও পাশ^বর্তী রাষ্ট্র ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালীদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় মাছের নাম ইলিশ। বাঙ্গালীর প্রিয় মাছটি মূলত একটি সামুদ্রিক মাছ। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় বর্ষা মৌসুম অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের সময়টিতে ইলিশ নদীতে চলে আসে ডিম ছাড়তে। এশিয়ার সমগ্র সমুদ্র উপকূলসহ, ইয়াংসি থেকে সিন্ধু – সকল নদীতেই রয়েছে বিশেষ এই মাছের বিচরণ। এই অঞ্চলের যে কোনো ভোজনরসিকই বঙ্গোপসাগরে ধৃত ইলিশ মাছের জন্য যে কোনো উচ্চমূল্য দিতে দ্বিধা করবেন না, একথা বলাই যায়। বাঙ্গালীর কাছে সবচেয়ে মূল্যবান ও সুস্বাদু এই মাছটি বঙ্গোপসাগর থেকে মেঘনা, গঙ্গা ও ব্রক্ষ্মপুত্র নদী হয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের অন্যান্য অনেক নদীতে ছড়িয়ে পড়ে।
দু:খের বিষয় হচ্ছে একটি সময়ে অতিরিক্ত আহরনের ফলে এশিয়ার এই অঞ্চলে মাছটি একপ্রকার হারিয়ে যাওয়ার মতোই উপক্রম হয়েছিল। বছরের মার্চ ও এপ্রিল মাসে ইলিশের প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির সময় এই মাছের পোনা (জাটকা হিসেবে স্থানীয়ভাবে পরিচিত) সাগর থেকে নদীতে আসতে শুরু করে। বছরের এই সময়টিতে বাংলাদেশ সরকার জাটকা ও মা ইলিশ সংরক্ষনের লক্ষ্যে মাঝ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারী করে। এরপরেই এই অঞ্চলে এক প্রকার ইতিবাচক দিক লক্ষ্য করা যায় এবং মাছের উৎপাদন বাড়তে শুরু করে।
বাংলাদেশের ১৬টি উপকূলীয় জেলায় প্রায় পাঁচ লক্ষেরও অধিক জেলে সাগরে ইলিশ আহরনের সাথে যুক্ত। চলতি বছর ইলিশ ধারার নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই আঘাত হানে কোভিড-১৯ মহামারী। চরম এই মহামারীর মধ্যেও মে মাসের শুরুর দিকে জেলেরা মাছ ধরতে নদীতে যাওয়া শুরু করে। কারন অল্প কিছু দিনের মধ্যেই অর্থাৎ ২০ মে – ২২ জুলাই পর্যন্ত ছিল আরো একটি নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম। ২০১৯ সাল থেকে ক্ষুদ্র জেলেদের এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসা হয়।
নিষেধাজ্ঞা পার হওয়ার পরপরই জুলাইয়ের ২৩ তারিখ থেকে জেলেরা সাগর ও নদীতে ‘বাংলার মাছের রাজা’ ইলিশ সংগ্রহে বেরিয়ে পড়ে। অথচ নদীতে মাছের যেন দেখা নেই। এমনকি ইলিশের জন্য বিখ্যাত পদ্মা, মেঘনা ও তেতুঁলিয়া নদীতেও নেই ইলিশ!
আর এ কারনেই বাজারে ইলিশের দাম হয় আকাশচুম্বী। এই সময়ে বাজারে আনা বেশির ভাগ ইলিশ মাছই ছিল সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। আর আহরিত মাছের একটি বড় অংশ চলে যায় উপসাগরীয় দেশগুলোসহ উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও অষ্ট্রেলিয়ায় – এই দেশগুলোই ইলিশের জন্য সবচেয়ে বড় বাজার। অন্যদিকে ভারতে যেটুকুই ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে তার বড় অংশই আসছে দেশটির পশ্চিম উপকূলের নর্মদা মোহনা সংলগ্ন এলাকা থেকে।
পরিতাপের বিষয় হচ্ছে বিদেশের বড় বড় বাজারে অনেক দামে বিক্রি হয় বাংলাদেশের ইলিশ। অথচ এই বিশাল মুনাফার ছিটেফোঁটাও পায় না দেশের ক্ষুদ্র জেলেরা। দারিদ্রের প্রচলিত অনেক মাপকাঠিতে সর্বনি¤েœ থাকা ক্ষুদ্র জেলেরা ঋনের টাকায় এতটাই জর্জরিত যে বাধ্য হয়ে তারা মহাজনের কাছে আগে থেকেই তাদের নির্ধারিত মূল্যে মাছ বিক্রি করতে বাধ্য হয়।
ভোলা জেলার অদুরেই ছোট্ট দ্বীপ ঢালচরের জেলে নুরুদ্দিন মাঝি দ্যথার্ডপোল.নেটকে বলেন, ‘মৌসুম আসার আগেই আমি আমার মাছ ধরার নৌকা আর জাল মেরামত করেছি। এজন্য আমাকে চড়া সূদে ঋণ নিতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার মতো হাজারো জেলের কাছে ইলিশ হচ্ছে স্বর্ণ। আমাদের জালে যখন মাছ ধরা পড়ে, আমাদের পরিবারের সদস্যদের মুখে জোটে অন্ন। আর জালে মাছ না পেলে, আমাদের না খেয়ে উপোস থাকতে হয়। এভাবে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর আমরা দাদনদার (স্থানীয় ঋণ দাতা) আর অনেক এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হই। আমি জানিনা কিভাবে এখন আমরা এই ঋণ থেকে মুক্তি পাবো।’
নিজের ট্রলার মেরামতের জন্য নুরুদ্দিন এই মৌসুমে দুই লাখ টাকা (২,৩৬০ মার্কিন ডলার) ঋণ করেন। সেপ্টেম্বরের শেষে যখন ভরা মৌসুম আসন্ন, অথচ এই সময়ের মধ্যে তিনি মাত্র ৭০ হাজার টাকার (৮২৬ মার্কিন ডলার) ইলিশ মাছ বিক্রি করতে পেছেন।
কেবল মাত্র জেলেরাই নদীতে মাছের সংকটের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ্য নন, এই খাতের সাথের যুক্ত স্থানীয় ব্যবসায়ীও সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢালচরের স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী শরীফ সওদাগর জানান, তার ১৮টি মাছ ধারার নৌকায় তিনি সব মিলিয়ে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা (৯৪,৪০০ মার্কিন ডলার) বিনিয়োগ করেছেন। অথচ এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত তিনি মাত্র ২৫০,০০০ টাকা (২,৯৫০ মার্কিন ডলার) আয় করতে পেরেছেন। মেঘনা নদীর পাড়ে অবস্থিত লক্ষীপুর জেলার মাটিহাটের ব্যবসায়ী মেহেদি হাসান লিটন জানান তার ধারনা ছিল এই মৌসুমে তিনি তার প্রতিটি মাছ ধরার নৌকা থেকে কমপক্ষে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা (১২০ – ১৮০ মার্কিন ডলার) আয় করতে পারবেন। অথচ সেই আশায় গুড়েবালি! তিনি জানান প্রতিটি নৌকা থেকে তিনি দৈনিক মাত্র এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকার মাছ বিক্রি করতে পাচ্ছেন।
হতাশ লিটন বলেন, ‘আমি ঠিক জানি না কেন এমনটি ঘটছে’।
ইলিশ তবে কোথায়?
এই মৌসুমে মূলত ইলিশ মাছের প্রধান চালান আসে সাগর থেকে। এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোহনায় অতিরিক্ত পলি জমার ফলে নদীমুখগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আর এর ফলে প্রজনন মৌসুমে ইলিশের পরিযান মারাত্বকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মাছের জন্য সাগর থেকে নদীর উজানে পরিযান করতে হলে নদীমুখে কমপক্ষে ১২ মিটার গভীরতার প্রয়োজন।
পাশাপাশি ইলিশ মাছের উজানে যেতে প্রয়োজন তুলনামূলকভাবে দূষণমুক্ত পানি। বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় নদীতে থাকা নানা ধরনের দূষিত আবর্জনা ও অন্যান্য দূষণ নদী থেকে অপসারিত হলেও অনেক ক্ষেত্রেই ভারী দূষণ পুরোপুরি অপসারিত হতে পারেনা। বিশেষ করে ঢাকার মতো মহানগরীতে সৃষ্টি হওয়া ভারী দূষণ থেকে নদীগুলোকে মুক্ত রাখা একেবারেই সহজ কাজ নয়। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরটি বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত, যেটি ধলেশ^রী নদীর মাধ্যমে মেঘনা নদীতে গিয়ে পতিত হয়েছে।
নদীতে ইলিশ না পাওয়ার কারন হিসেবে সংশ্লিষ্ট অনেকেই বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করেছেন। কেউ কেউ বলছেন, ইলিশের চিহ্নিত অভয়ারন্য বা চলাচলের রাস্তায় নৌপরিহন চলাচলের মাত্রা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে যা ইলিশের পরিযান বা অভিপ্রয়ানকে বাধাগ্রস্থ্য করছে। আবার অনেকই এর কারন হিসেবে কর্তৃপক্ষের কার্যকর ভূমিকা না থাকাকে দোষারোপ করছেন। তাদের মতে, বিগত নিষেধাজ্ঞা পরিচালনার সময় যথোপযুক্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়নি। পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের মধ্যে অনেকের বক্তব্য হচ্ছে কয়েক বছর পর পর একটি মৌসুমে মাছের উৎপাদন কম হওয়াটা একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া।
এর বাইরে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কারনের কথা বলছেন অনেকেই। সেটি হচ্ছে নদীর উপরে ও নদীতে স্থাপিত নানা ধরনের বাঁধ ও ব্যারাজের বিষয়টি। নদীতে নির্মিত এই ধরনের স্থাপনা মাছের চলাফেরায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকে। যদিও এই সমস্যাটি বাংলাদেশের চেয়ে ভারতে বেশি প্রকট।
বাংলাদেশ ফিশারিজ রিসার্চ ইন্সটিটিউট এর জেষ্ঠ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, নদীতে মাছের সহজলভ্যতা না থাকার পিছনে অন্যতম কারন হচ্ছে পলি ও দূষণ। তার মতে, ইলিশ সাগর থেকে নদীতে যত উপরের দিকে যায়, নদীর দূষনের মাত্রা ততটাই প্রকট হতে থাকে। এর ফলেই মাছের দূষ্প্রাপ্যতা বাড়ছে।
এতকিছুর পরেও আনিসুর রহমানের মতে ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ সরকার নানামূখী ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহন করেছে যা এখন ভালো ফলাফল বয়ে আনতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের ফিশারিজ বাইওলোজি অ্যান্ড জেনেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান কাজি আহসান হাবিব বলেন, নদীর পানির গুনাগুন আর পানির প্রবাহ সঠিক হলে ইলিশের উৎপাদন বাড়ে। আসলে পানির প্রবাহ ও গুনাগুন, অক্সিজেনের মাত্রা এবং পানিতে লবনের পরিমানসহ আরো কিছু বিষয় ইলিশের উৎপাদনের জন্য অন্যতম মূখ্য ভূমিকা রেখে থাকে। একটি কার্যকর ও সহনীয় মাত্রার পরিবেশ পেলেই ইলিশ সাগর থেকে নদীতে আসতে শুরু করে। এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক প্রজনন প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের বাঁধার কারনে ইলিশের পরিযায়ী জীবন প্রক্রিয়াটি বাঁধাগ্রস্থ্য হয়।
ইলিশের স্বল্পতার আগে নিষেধাজ্ঞা আর মহামারী
হারিয়ে যেতে বসা ইলিশ মাছকে আবারো ফিরিয়ে আনতে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা ও সংশ্লিষ্ট আইনের পরিবর্তন একটি ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে, একথা সত্য। তবে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষুদ্র জেলে ও মৎসজীবীরা ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়ছে। বিশেষ করে যেসব জেলে দৈনিক ভিত্তিতে মৎস আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে, তারা পুরোপুরি দারিদ্রের দুষ্টচক্রে আবর্তিত হয়ে দিনকে দিন আরো সংকটের মুখে পড়ছেন।
পিরোজপুরের জেলা ক্ষুদ্র মৎসজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল জলিল হাওলাদার বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে বছরের বেশিরভাগ সময়ই মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা ও বিধিনিষেধ আরোপিত ছিল। আর যখন মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করা হয় ঠিক তখনই আমাদের দেশে কোভিড-১৯ এর কারনে লকডাউন শুরু হয়ে যায়। ফলে মাছের সংরক্ষণ ও দেশের বিভিন্ন স্থানে মাছের পরিবহন একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।
চট্টগ্রাম জেলার ক্ষুদ্র মৎসজীবী সম্প্রদায়ের একজন সদস্য অ¤্রতি জলদাস। ঐতিহ্যবাহী এই সম্প্রদায়ের মোট জনসংখ্যা মাত্র ৬ লাখ। তার কাছে জানতে চাইলে বলেন, আমরা বিগত ৬ মাসের মধ্যে কোনো রকম মাছ ধরতে পারিনি। এদিকে নদী/সাগরে মাছ ধরা ছাড়া আমাদের অন্য কোনো উপার্জনের পথ নেই। এ মুহুর্তে আমরা ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছি। দিন দিন আমাদের ঋনের বোঝা কেবল বেড়েই চলেছে।
সম্প্রতি ঢাকা-ভিত্তিক একটি বেসরকারী সংস্থা কোষ্ট ট্রাস্ট দেশের কয়েকটি জেলা যেমন কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, খূলনা ও বাগেরহাট জেলায় একটি জরীপ পরিচালনা করে। এই জরীপের তথ্য মতে মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞার ফলে প্রায় ৮০% জেলে একেবারেই কর্মহীন হয়ে পড়েছে। জরীপে আরো দেখা যায় যে এতে অংশ নেয়া প্রায় অর্ধেক জেলে পরিবারই দৈনিক তিন বেলা খাবার জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়েছে।
মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে সরকার প্রতিটি জেলে পরিবারকে ৪৩ কেজি করে চাল প্রদান করে। কিন্তু এই সুবিধা পেতে হলে একজন জেলের অবশ্যই একটি নিবন্ধিত পরিচয় পত্র থাকতে হবে। অথচ অনেক জেলেরই অভিযোগ সরকারের সব ধরনের নিয়ম-কানুন পালন করার পরেও বিপুল সংখ্যক জেলে এই পরিচয় পত্রের বাইরেই রয়ে গেছেন।
ওই জরীপে আরো দেখা গেছে, ৩৪.২% পরিবারের পরিচয় পত্র থাকা সত্বেও তারা কোনো ধরনের খাদ্য সহায়তা পাননি। আর যারা পেয়েছেন তাদের প্রায় অর্ধেকই পেয়েছেন নির্দিষ্ট সময়ের এক মাস পরে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা মৎস কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, ‘আমাদের জেলায় ২৬ হাজারেরও বেশি নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এ বছর নিষেধাজ্ঞাকালীন আমরা ২৬,৫৭৫ ব্যক্তিকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছি।’
ভোলা জেলা মৎস কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম বলেন, আমাদের জেলায় ১৩০,৯৯৬ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। এদের মধ্যে আমরা ৮০ হাজার পরিবারকে চার মাস যাবত প্রতি মাসে ৪০ কেজি চাল প্রদান করেছি। পরবর্তীতে আরো ১৭০,০০৮ ব্যক্তিকে ৫৮ কেজি করে চাল দেয়া হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইলিশের ভরা মৌসুমে যথেষ্ট পরিমানে মাছ আহরণ করতে পারলেও একটি জেলে পরিবারকে প্রতি মাসে কমপক্ষে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয় সংসার চালাতে। অথচ এই ব্যয়ের বিপরীতে তার মাসিক আয় কোনো ভাবেই ১০ হাজার টাকার বেশি হয় না। তাই পরিবারকে নিয়ে বেঁচে থাকতে তারা একের পর এক ঋনের জালে জড়াতে থাকেন। এই দারিদ্রের কষাঘাত থেকে বেরিয়ে আসতে প্রয়োজন শিক্ষা ও অন্যান্য দক্ষতা যার মাধ্যমে অন্য কোনো পেশা বা প্রক্রিয়ায় আয়-উপার্জন সম্ভব হতে পারে। অথচ অসহায় এই বিপুল জনগোষ্ঠীর কেবল মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ ছাড়া অন্য কোনো ধরনের দক্ষতা বা শিক্ষা নেই।
অনুবাদ: আরিক গিফার