শক্তি

ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প: ক্ষুদ্র হলেও ভারতের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় নয়াদিগন্ত উন্মোচনে রাখছে অভাবনীয় প্রভাব

চলতি বছরের শেষ নাগাদ ভারতের বিদ্যুত পরিকাঠামোতে ১০০ গিগাওয়াট সৌর শক্তিতে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ছোট ছোট এই ভাসমান সৌর প্রকল্পগুলো তেমন কোনো পরিকল্পনার অংশ ছিল না। তবে ধীরে ধীরে এই প্রকল্পগুলো এখন ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌছানোর ক্ষেত্রে তার সুবিধাগুলো আরো প্রকট করে তুলছে
<p>এই বছরের শুরুতে জার্মানির সিলবারসি হ্রদে ভাসমান সৌর প্যানেলগুলো স্থাপন করা হয়। ভাসমান এই ধরনের সৌর প্রকল্পগুলো প্রায় এক দশক ধরে ইউরোপ এবং পূর্ব এশিয়ায় স্থাপন করে সুবিধা গ্রহন করা হচ্ছে। দক্ষিন এশিয়ার জ্বালানী বর্ধিঞ্চু দেশ ভারত এখন তার নবায়নযোগ্য শক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ছুটছে। আর তাই এই ধরনের ভাসমান সৌর প্রকল্পে দেশটির আগ্রগ বেড়ে চলেছে। (ছবি: থিলো শ্মুয়েলুগেন / এ্যালামি))</p>

এই বছরের শুরুতে জার্মানির সিলবারসি হ্রদে ভাসমান সৌর প্যানেলগুলো স্থাপন করা হয়। ভাসমান এই ধরনের সৌর প্রকল্পগুলো প্রায় এক দশক ধরে ইউরোপ এবং পূর্ব এশিয়ায় স্থাপন করে সুবিধা গ্রহন করা হচ্ছে। দক্ষিন এশিয়ার জ্বালানী বর্ধিঞ্চু দেশ ভারত এখন তার নবায়নযোগ্য শক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ছুটছে। আর তাই এই ধরনের ভাসমান সৌর প্রকল্পে দেশটির আগ্রগ বেড়ে চলেছে। (ছবি: থিলো শ্মুয়েলুগেন / এ্যালামি))

আন্তর্জাতিক নবায়নযোগ্য শক্তি সংস্থার (আইআরইএনএ) সাথে গত ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের পর পরিবেশ মন্ত্রী ভূপিন্দর যাদব সাংবাদিকদের বলেন আগামী বছর ভারতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ সম্মেলন দেশটির নবায়নযোগ্য শক্তি/জ্বালানী উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরার ক্ষেত্রে একটি “সুবর্ণ সুযোগ”। এই বছরটি আসলে এই খাতে অগ্রগতির জন্য ভারতের ক্ষেত্রে একটি লিটমাস পরীক্ষা, কারণ নবায়নযোগ্য শক্তির লক্ষ্যমাত্রা ১৭৫ গিগাওয়াটে উন্নীত করার জন্য এই বছরটিকে ভারত নিজের জন্য বেঁধে দিয়েছিল।

যদিও ভাসমান সৌর ফটোভোলটাইক (এফএসপিভি) প্রাথমিকভাবে বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ হিসাবে অন্তর্ভূক্ত ছিল না, মূল পরিকল্পনায় কেবল মাত্র স্থলজ এবং ছাদের সৌর প্রকল্পগুলোই গন্য করা হয়েছিল। তবে এই ভাসমান সৌর প্রকল্পগুলো এখন পুরো খাতের পরিসংখ্যানগুলির জন্য একটি নগন্য কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে।

যদিও পরবর্তীতে নবায়নযোগ্য শক্তির লক্ষ্যমাত্রা ১৭৫ গিগাওয়াটের উন্নীত করার লক্ষ্যে  বৃহৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও ২০২২ সালের মধ্যে ভারতের এই খাতের ১৫৬.৬ গিগাওয়াটের যে লক্ষ্যমাত্রা  রয়েছে তা পূরনে ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। শুরুতে অবশ্য অন্যান্য প্রকল্পের সাথে ছোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো যুক্ত করে এই লক্ষ্যমাত্রা এই ১৫৬.৬ গিগাওয়াট এবং ইউটিলিটি-স্কেলে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর আরো ১১ গিগাওয়াট ঘাটতি বাড়ির ছাদে সৌর বিদ্যুতের দ্বরা পূরণ করার পরিকল্পনা করা হয়।  তবে বাড়ির ছাদে সৌর বিদ্যুতের ধীর বিকাশের কারণে, ভারতের সবুজ শক্তির উৎসগুলোর সমাহারকে আরও বৈচিত্র্যময় করার প্রয়োজনীয়তাকেই তুলে ধরে।

ভূমিতে স্থাপনযোগ্য সৌর বিদ্যুতের একটি বিকল্প

ভারতে ভাসমান সৌর বিদ্যুত প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয় ২০১৪ সালে কোলকাতায় যা নবায়নযোগ্য শক্তি মন্ত্রক (এমএনআরই) দ্বারা অনুমোদিত হয়। দেশটির নবায়নযোগ্য শক্তি সেক্টর সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ এস পি গন চৌধুরী দ্য থার্ড পোলকে বলেন, এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া সংস্থাটি ছিল এনবিআইআরটি’কে (দ্য এনবি ইন্সটিটিউট ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট)। আমি তখন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ছিলাম।

প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার পর বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থার কর্মকর্তারা প্রকল্পটি পরিদর্শন করের এবং কীভাবে একটি ভাসমান সৌর প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়, এটি কীভাবে কাজ করে তা পরীক্ষা করেন। এস পি গন চৌধুরী বলেন, মূলত, এটি একটি অধ্যয়ন কেন্দ্র ছিল।

ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে পাঞ্জাব, কেরালা, গুজরাট এবং তামিলনাড়ু পরবর্তীতে একই প্রযুক্তি অনুসরণ করতে শুলু করে। দেশটির বেসরকারী থিঙ্ক ট্যাঙ্ক দ্য এনার্জি অ্যান্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট (টিইআরআই) এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের ১৮,০০০ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত জলাধারে ২৮০ গিগাওয়াট ভাসমান সৌর শক্তি উৎপাদনের জন্য সক্ষমতা রয়েছে। উচ্চ খরচ এবং ডিজাইনের চ্যালেঞ্জগুলি এখনও নতুন এই প্রযুক্তির উন্নয়নকে কিছুটা শ্লথ রেখেছে যেটির নভেম্বর ২০২১ পর্যন্ত আনুমানিক ক্রমবর্ধমান ইনস্টলেশন ক্ষমতা ছিল মাত্র ২.৭ মেগাওয়াট, যা একটি পাইলট প্রকল্পের চেয়ে সামান্য বেশি।

ভাসমান সৌর বিদ্যুত প্রকল্পগুলো বহু সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম
মনু শ্রীবাস্তব, নয়া এবং নবায়নযোগ্য শক্তি বিষয়ক কমিশনার, মধ্যপ্রদেশ সরকার

বেসরকারী থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কাউন্সিল অন এনার্জি, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ওয়াটার (সিইইডব্লিউ) অনুসারে, ভারতে এখন ১৭০  মেগাওয়াট  ভাসমান সৌর বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন প্রকল্প চলমান রয়েছে এবং আরও ১.৮ গিগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। সিইইডব্লিউ-এর একজন মুখপাত্র এ বিষয়ে বলেন, এই প্ল্যান্টগুলোর ক্রমবর্ধমান উন্নয়েনর মূল তারন হচ্ছে  প্রথম দিকে প্ল্যান্টগুলি ছিল ক্ষুদ্র আকারের। তবে ভারত সাম্প্রতিক বছরগুলিতে শুধুমাত্র বড় আকারের ভাসমান সৌর প্রযুক্তি উন্নয়নের পথে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। 

বেসরকারী সংস্থা টেরির (টিইআরআই) এক প্রতিবেদন অনুযায়ি ভূমিতে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প (পিভি) প্রচুর পরিমানে জমির প্রয়োজন হয়। ওই প্রতিবেদনে ভারতের ২০৩০ সালের শেষ নাগাদ দেশটির ১০০ গিগাওয়াট অতিরিক্ত সৌর শক্তি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য ভাসমান সৌরশক্তির মতো বিকল্পগুলি অন্বেষণ করার সুপারিশ করা হয়। প্রতিবদনে গবেষকরা বলেন যে এক্ষেত্রে মহারাষ্ট্র রাজ্য সবচেয়েবেশি সম্ভাবনাময় এবং এর জলাধারের পৃষ্ঠের ৩,১৭৩  বর্গ কিলোমিটারে৫৭,৯ গিগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব।

“সৌর বিদ্যুতের সার্বিক বাজার বিশ্লেষণ করলে ভাসমান সৌর বিদ্যুত প্রকল্পগুলো হয়ত ক্ষুদ্রই শােনাবে তবে এটি ভারতে সৌর বিদ্যুত শক্তি স্থাপনের গতি বাড়ানোর জন্য একটি কার্যকর বিকল্প হতে পারে। ২০২১ সালে সৌদি আরবের ইফ্ফাত ইউনিভার্সিটির গবেষকদের পরিচালিত এক গবেষণায় একথা বলা হয়েছে।

ভাসমান সৌর বিদ্যুত নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ক্ষেত্রে এক মাইলফলক

ভাসমান সৌর বিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক যে সব উন্নয়ন চোখে পড়ছে তা আসলে এই সেক্টরের জন্য একিট প্রতিশ্রুতিশীল ধারাবাহিকতার ইঙ্গিত দেয়। গত বছরের আগস্টে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এনটিপিসি, ভারতের বৃহত্তম ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি কোম্পানি, অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্যের সিমহাদ্রি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলাধারে ২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন একটি প্রকল্প চালু করে। প্ল্যান্টটির ১০০,০০০  সৌর পিভি মডিউল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার সম্ভাবনা রয়েছে, যা প্রায় ৭,০০০ পরিবারে বৈদ্যুতিক আলোর সংস্থান করতে পারে এবং তার জীবদ্দশায় প্রতি বছর কমপক্ষে ৪৬,০০০ টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন এড়াতে পারে।

চলতি বছর জানুয়ারী মাসে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জলবিদ্যুৎ কর্পোরেশন এনএইচপিসি পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ওড়িশার এক  উন্নয়ন সংস্থার সাথে একটি ৫০০ মেগাওয়াট ভাসমান সৌর বিদ্যুত উৎপাদন প্ল্যান্ট তৈরির জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।  প্রাথমিকভাবে ৩০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন এই ভাসমান সৌর প্রকল্পে ২০ বিলিয়ন (২৬১ মিলিযন মার্কিন ডলার) বিনিয়োগ করা হবে। এর মাধ্যেম রাজ্যে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি এই প্রকল্পটি রাজ্যকে তার নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সাহায্য করবে।

গত ১০ মার্চ তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন ভারতের বৃহত্তম ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন, যেটি ১.৫ বিলিয়ন (১৯.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে।

ভূমির দুষ্প্রাপ্যতা, প্রয়োজন আরো পানির

বেশিরভাগ ভারতীয় রাজ্যে প্রয়োজনীয় ভূমির অভাব থাকলেও এফএসপিভি সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত পানির সহজলভ্যতা রয়েছে। পানিতে তাপমাত্রা কম থাকায় অতিরিক্ত গরম হওয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব। আর তাই পানিতে সৌর বিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্প স্থাপনে প্যানেলের কার্যকারিতা বহুগুনে বেড়ে যায়। জানতে চাইলে এভাবেই ব্যাখ্যা করেন এস পি গন চৌধুরী ।

মধ্যপ্রদেশ সরকারের নয়া এবং নবায়নযোগ্য শক্তির কমিশনার মনু শ্রীবাস্তব বলের, আসলে এই ধরনের প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জমি খুঁজে পাওয়া খুব একটা সহজ নয়। এমন অনেক জমি আছে  যেখানে জমির পরিমান আসলে অনেক বেশি তবে সেখানে অবধারিতভাবেই প্রচুর প্রকল্প এরই মধ্যে স্থাপন করা হয়ে গেঝে। তাই সেসব স্থানে উৎপাদিত বিদ্যুত সঞ্চালনের কাজটি নিশ্চিত করা অত্যন্ত দূরহ হয়ে পড়ে। ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন আসলে এই ধরনের অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে।

অবনীশ শুক্লা রেওয়া আল্ট্রা মেগা সোলার লিমিটেডের নির্বাহী প্রকৌশলী,। এটি একটি যৌথ উদ্যোগ যা মধ্যপ্রদেশে সৌর প্রকল্প চালু করেছে। তিনি দ্য থার্ড পোলকে বলেন, মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে ২০২৩ সালের আগস্ট নাগাদ একটি ৬০০ মেগাওয়াট ভাসমান সৌর বিদ্যুত প্ল্যান্ট চালু করা হবে, সম্ভবত এটি বিশ্বের মধ্যে বৃহত্তম একটি প্রকল্প হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অবনীশ শুক্লা বলেন, সৌর প্রকল্পগুলি প্রায়শই অনুর্বর জমিতে স্থাপন করা হয় যা কৃষি, শিল্প বা অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হয় না। যেহেতু এ ধরনের জমির অভাব রয়েছে, তাই আমরা এমন জমি পেতে খুব সমস্যায় পড়ি… এমন পরিস্থিতিতে জলাশয় সবচেয়ে ভালো ফলাফল দিতে পারে। তাছাড়া, পানি প্রাকৃতিক কারনেই বাষ্পীভূত হয়ে যাবে যদি আমরা সৌর প্যানেল (সূর্যের রশ্মি প্রতিফলিত করার জন্য) স্থাপনের জন্য ব্যবহার না করি।

নবায়ণযোগ্য শক্তি সংক্রান্ত কাজে পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ব্রিজ টু ইন্ডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিনয় রাস্তগি বলেন, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাছাকাছি বা তাপীয় প্ল্যান্টের জলাধারে অবস্থিত কিছু ভাসমান সৌর প্রকল্প এরই মধ্যে সেসব প্ল্যান্টের সঞ্চালন  অবকাঠামোতে যুক্ত হবার  জন্য প্রস্তুত।

নিম্নমুখী ব্যয় 

টেরীর (টিইআরআই) ২০২০ সালের একটি  প্রতিবেদন অনুসারে, ভূমি-ভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রগুলো এখনও ভারতের গ্রিড-সংযুক্ত সৌর বিদ্যুতের ৯৩.১% দখল করে আছে। অন্যদিকে  ইউটিলিটি-স্কেল সৌর বিদ্যুতের ব্যয় ২০১০ এবং ২০১৮ -এর মধ্যে ৮৪% কমেছে, যা বিশ্বের অন্য যে কোনো স্থানের চেয়ে ভারতে সৌর বিদ্যুতকে আরো সাশ্রয়ী করে তুলেছে।

এস পি গন চৌধুরী মতে, একটি ভাসমান সৌর বিদ্যুত উৎপাদন প্ল্যান্ট স্থাপনের খরচ বর্তমানে প্রতি মেগাওয়াট ভারতীয় মুদ্রায় ৫০ – ৬০ মিলিয়ন (৬৫০,০০০ – ৭৮০,০০০ মার্কিন ডলার), যেখানে প্রচলিত ভূমি-ভিত্তিক সৌর প্রকল্পগুলির খরচ হয় ৫২০,০০০ মার্কিন ডলার।  একটি পার্থক্য বিশ্লেষন করেলই বুঝা যায় যে এই প্রযুক্তিটি ধীরে উড্ডয়নের পথে। তবে তিনি বলেন, এই ধরেনর প্রকল্পের জন্য ফ্লোটার এবং রক্ষণাবেক্ষণস তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী হয়ে উঠছে।

“ভারতকে ২০৩০ সালের মধ্যে কিছু নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণ করতে হবে, যার অর্থ রাজ্যগুলিকে এই ধরনের আরও (ভাসমান সৌর) উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, কারণ এদেশে অতিরিক্ত জমি নেই,” তিনি বলেন।

শ্রীবাস্তবের মতে, প্যানেলে ব্যবহৃত হালকা ওজনের কিন্তু বড় ফ্লোটারগুলি পরিবহন করা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। তবে এগুলি স্বল্প-প্রযুক্তিগত উপাদান, তাই প্রকল্প এলাকার কাছেই এই উপাদানগুলো উৎপাদন করা যেতে পারে যার মাধ্যেম সার্বিক উৎপাদন ব্যয় আরও কমিয়েআনা যেতে পারে।

সাইটের হাইড্রোগ্রাফি এবং ওয়াটার-বেড টপোগ্রাফির আরও বিশদ মূল্যায়নের প্রয়োজনের কারণে ভাসমান সৌর প্রকল্পগুলির জন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়। অধিকন্তু, আরও জটিল নকশা এবং পানিতে কাজ করার ঝুঁকির কারণে মূলধন এবং পরিচালনা ব্যয় উভয়ই কিছুটা বেশি, শ্রীবাস্তব যোগ করেন।

রাস্তগি বলেন, দেশের বেশিরভাগ অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার এবং পৌর সংস্থাগুলিকে অবশ্যই এজন্য  চাপ দিতে হবে।

এই বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নয়া দিল্লি ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট-এর ডেপুটি রিনিউয়েবল এনার্জি প্রোগ্রাম ম্যানেজার বিনিত দাস ইতিবাচক মন্তব্য করেন। তবে এর সঙ্গে যুক্ত করে তিনি  আরো বেশকিছু প্রতিবন্ধকতা যেমন প্রযুক্তিগত অসুবিধার বিষয়গুলো সমাধানের প্রতি জোর দেন। তিনি বলেন, একটি ভাসমান  সৌর বিদ্যুত উৎপাদন ব্যবস্থাকে কমপক্ষে ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে পানির উপর সোলার প্যানেলগুলোকে ধরে রাখতে হয়। তাই এর ভৌত কাঠামোগুলাে যার উপর এই পুরো প্ল্যান্ট টিকে থাকে সেটিকে অত্যন্ত ক্ষয় প্রতিরোধী হতে হয় এবং এটি দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহারের জন্য টেকসই হতে হয়। পাশাপাশি দীর্ঘ সময় চাপ ধরে রাখার সক্ষমতা ও  থাকতে হয়।

তিনি আরো বলেন, যেহেতু এটি একটি তুলনামূলকভাবে নতুন ধরনের বিদ্যুত শক্তি উৎপাদন প্রযুক্তি, তাই এটির জন্য বিশেষ  সরঞ্জাম এবং আরও কার্যকরী প্যানেল স্থাপনের জ্ঞান থাকা  প্রয়োজন।