প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে ‘একটি আইনগত প্রক্রিয়া’র বিধিবিধানের খসড়া তৈরির উদ্দেশ্যে চলতি মে মাসের ২৯ তারিখ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বিশ্বের আরো ১৬০ দেশের সাথে আলোচনায় অংশ নিতে যাচ্ছে ভারত, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, পাকিস্তান, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কা। অংশগ্রহনকারী রাষ্ট্রগুলো সদ্য প্রনীত সনদে স্বাক্ষরের পর এটি একটি চুক্তিতে পরিণত হবে যা মারাত্বক হুমকিতে থাকা মহাসাগর এবং সংশ্লিষ্ট জীববৈচিত্র্য, স্বাস্থ্য এবং জলবায়ু সুরক্ষায় প্লাস্টিক দূষণ নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণে অভূতপূর্ব ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এবারের প্যারিস সম্মেলনটি মূলত প্লাস্টিক বর্জ্য সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির খসড়া রচনার লক্ষ্যে গঠিত ইন্টারগভর্ণমেন্টাল নেগোসিয়েটিং কমিটির (আইএনসি-২) দ্বিতীয় অধিবেশন। প্রক্রিয়াটি চালু করা হয়েছিল যখন একটি আইনিভাবে বাধ্যতামূলক চুক্তি তৈরি করার জন্য একটি ঐতিহাসিক রেজোলিউশন (যা প্লাস্টিকের সম্পূর্ণ জীবনচক্র – উৎপাদন এবং তার ব্যবহার এবং নিষ্পত্তি) ২০২২ সালের মার্চ মাসে জাতিসংঘের পরিবেশ পরিষদে পাস হয়।
২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত উরুগুয়ের পুন্তা দেল এস্তে অনুষ্ঠিত আলোচনা কমিটির প্রথম অধিবেশনে (আইএনসি-২), অংশগ্রহণকারী দেশগুলো ভবিষ্যতের চুক্তিতে কী কী সম্ভাব্য উপাদান, যেমন প্রয়োজনীয় নীতিমূলক ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ, অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু করে। বিশেষ করে এই চুক্তির উদ্দেশ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ ‘প্রক্রিয়া, কমিটির আচরণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকে নিয়ন্ত্রণ করবে এমন বিষয়গুলোই ছিল আলোচনার মূখ্য বিষয়। এবারে ২৯ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য আইএনসি-২ বৈঠকটি মুলতুবি বিষয়গুলির উপর আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সরকার এবং অন্যান্য অংশীজনদের একত্র করে চুক্তির বাকি অংশের ভাষা কী হবে তা নিয়ে আলোচনা করবে বলে জানা গেছে।
কমিটি প্যারিসে আসন্ন বৈঠকের পর আরো তিনবার যথাক্রমে নভেম্বর ২০২৩, এপ্রিল ২০২৪ এবং অক্টোবর ২০২৪ মিলিত হবে। চলমান আলোচনা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একটি চুক্তির চূড়ান্ত খসড়া তৈরি ও স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত করা হবে যা ২০২৫ সালের মাঝামাঝি অনুষ্ঠিতব্য ‘ডিপ্লোমেটিক কনফারেন্স অব প্লেনিপোটেনশিয়ারিস’ বা ‘বহুপাক্ষিক আন্তর্জাতিক চুক্তির বিষয়ে আলাপ-আলোচনা পরিচালনা জন্য সদস্য রাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের সম্মেলনে’ স্বাক্ষরের জন্য পেশ করা হবে।
এই প্রক্রিয়াটি যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতে থাকে, তাহলে বলা যায়, ২০২৫ সালের মধ্যে প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলার জন্য প্রথমবারের মতো একটি বৈশ্বিক বহুপাক্ষিক আইনী কাঠামো তৈরি হবে। এটি যদিও বেশ আশাব্যঞ্জক, তবে এর ফলে খুব দ্রুত কোনো সমস্যা সমাধানের আশা করাটা যে সঠিক হবে না, সেটাও মনে রাখা জরুরী। কারন জাতিসংঘের যে কোনো নীতি বাস্তবায়ন একটি সীমাবদ্ধতার নীরিখে পরিচালিত হয়। তাই প্লাস্টিক দূষণ আন্তর্জাতিক বিধীনিষেধের পাশাপাশি স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের আইনী পরিকাঠামো প্রণয়ন একই সাথে গুরুত্বপূর্ণ। এর অর্থ হচ্ছে জীববৈচিত্র্যের সূরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন – এবং প্লাস্টিক দূষণের মতো জটিল সমস্যাগুলি সমাধানের বিষয়ে রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ঐক্যমত্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কেবল জাতিসংঘই একমাত্র গ্রহণযোগ্য যন্ত্র হিসেবে কাজ করতে পারে।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মধ্যে এর পরিমান দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে এবংবর্তমানে এর পরিমান বছর প্রতি ৩৫৩ মিলিয়ন টনে গিয়ে পৌঁছেছে। এর পরিমান দিন দিন আরো বাড়বে বলে মনে করা হয় – পরিসংখ্যান বিশ্লেষনে ২০৬০ সাল নাগাদ এটি তিনগুন বৃদ্ধি পাবে। প্লাস্টিক থেকে যে বর্জ্য উৎপাদিত হয় তার বেশিরভাগেরই আয়ু পাঁচ বছরের কিছুটা কম – এই ধরনের বর্জ্যের প্রায় ৪০% আসে প্যাকেজিং থেকে, ১২% ভোগ্য পণ্য থেকে আর ১১% আসে পোশাক এবং টেক্সটাইল থেকে। দক্ষিণ এশিয়ায় অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা এবং ধনী দেশগুলি থেকে প্লাস্টিক বর্জ্যের সংমিশ্রণের কারণে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের উপর প্লাস্টিক বর্জ্যের ক্ষতিকারক প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়, যা পরিবেশের উপর দ্বিগুন বোঝা তৈরি করে।
রয়েছে আলোচনার সুযোগ
প্যারিসে অনুষ্ঠিতব্য আইএনসি-২ বৈঠকের আগে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) পক্ষ থেকে একটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করা হয়। বিশ্বের ৬২টি সরকারের পাঁচটি গ্রুপ এবং ১৭৬টি অরাষ্ট্রীয় অংশীজনের সংকলিত “অপশন ফর এলিমেন্ট পেপার” শীর্ষক এই গবেষণায় বেশ কিছু পরামর্শের কথা তুলে ধরা হয়েছে। সহজ কথায়, এই সংকলনে একটি প্লাস্টিক চুক্তির জন্য বিভিন্ন অংশীজনদের আকাঙ্ক্ষার বিষয়গুলো তুলে আনা হয়েছে, যেমন এই চুক্তির সামগ্রিক লক্ষ্য কী হবে এবং এই দূষণ বন্ধ করতে কোন নিয়মগুলি অনুসরণ করা উচিত এবং এই আইন বাস্তবায়নে কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন।
“অপশন্স ফর এলিমেন্টস’ গবেষণাপত্রটিতে প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে ভবিষ্যতে কী ধরনের আলোচনা হতে পারে তার একটি সাবলীল ধারনা দেয়া হয়েছে। এতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেমন প্লাস্টিক উৎপাদনে রাসায়নিকের ব্যবহার সীমাবদ্ধ করা, ভার্জিন প্লাস্টিকের উৎপাদন ক্যাপ বিবেচনা করা, পোড়ানোর মতো ক্ষতিকারক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিকল্প পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার উপায় এবং মানুষ ও পরিবেশের স্বাস্থ্য সূরক্ষার মতো অন্যান্য বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এখানে একটি বিষয় পরিস্কার করা প্রয়োজন, তা হচ্ছে, এই সংকলনটির মাধ্যমে জাতিসংঘ (UNEP) তার আগের অবস্থান থেকে একটি অধীকতর গ্রহনযোগ্য এবং সহনশীল অবস্থানে সরে এসেছে। জাতিসংঘের আগের অবস্থানে প্লাস্টিক দূষণকে অব্যবস্থাপনায় ভরা একটি শিল্প হিসেবে না দেখে এটিকে সমস্যাযুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি ফসল হিসেবে দেখা হতো।
প্লাস্টিক দূষণ আসলে সমস্যাযুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি ফসল’ নয়, বরং এটি অনিয়ন্ত্রিত ও অব্যবস্থাপনায়’ ভরা একটি শিল্প
এখন পর্যন্ত চলমান বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু এবং খসড়া প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন দেশের প্রস্তাবনা বিশ্লেষন করে একটি বিষয় খুব সুষ্পষ্ট আর তা হচ্ছে, প্লাস্টিক সংকট মোকাবেলায় সকল দেশ একটি ঐক্যমতে পৌছেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের মতো, এক্ষেত্রেও ‘গ্লোবাল সাউথ’ (ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়া ও ওশেনিয়া) নেতৃত্ব নেবে সেবিষয়ে একটি ব্যাপক প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। এর পিছনে যথেষ্ট কারনও রয়েছে। আর তা হচ্ছে পৃথিবীতে প্লাস্টিকের সবচেয়ে বড় ভোক্তা গ্লোবাল নর্থ (অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউরোপ, রাশিয়া, হংকং, ম্যাকাউ, জাপান, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মাউথ কোরিয়া এবং আমেরিকা) হলেও এই দূষণের সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব গিয়ে পড়ে গ্লোবাল সাউথের জনগনের উপরে।
চলমান আলোচনা প্রক্রিয়া থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি পরিস্কার সেটি হচ্ছে সম্ভবত প্লাস্টিক দূষণকে মোটা দাগে এখন আর শুধুমাত্র বর্জ্য অবব্যস্থাপনা বা একটি ঘাটতি হিসেবে দেখা হচ্ছে না। এটিকে বরং অনিয়ন্ত্রিত উৎপাদনের ফসল হিসেবে ধরা হচ্ছে।
নেতৃত্বে গ্লোবাল সাউথ
প্লাস্টিক চুক্তির বিষয়ে এখন পর্যন্ত যে অগ্রগতি হয়েছে তাতে আফ্রিকান গ্রুপকে (যাতে মিশর ছাড়া আফ্রিকা মহাদেশের সবগুলো দেশ যুক্ত) সবচেয়ে বেশি তৎপর এবং উচ্চাভিলাসী হিসেবে দেখা যাচ্ছে। আইএনসি-তে তাদের জমা দেয়া প্রতিবেদনে প্লাস্টিকের সম্পূর্ণ জীবনচক্র নিয়ে হস্তক্ষেপের পরামর্শ দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে ভার্জিন পলিমার এবং প্রাস্টিক উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার হ্রাস, প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে বর্জ্য উৎপাদন হ্রাস এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ‘ভ্রান্ত সমাধান’ (যেমন পুড়িয়ে ফেলা, সিমেন্ট সহ-প্রক্রিয়াকরণ, এবং রাসায়নিক পুনর্ব্যবহার করা নিষিদ্ধ করা) থেকে বেরিয়ে আসার মতো বিষয় রয়েছে।এগুলো আসলে বর্জ্য সমস্যার সমাধান করে না বরং এর প্রকৃত সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে জনগন বিভ্রান্ত হয়।
এটি ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং আবর্জনা’ সম্পর্কে এতদিন ধরে চলে আসা ধারনা থেকে উল্লেখযোগ্য এবং প্রগতিশীল অবস্থানের দিকে প্রস্থান, যা একক-ব্যবহারের প্লাস্টিকের আকাশসম উৎপাদন এবং ডাম্পিংয়ে নিযুক্ত কারখানাগুলো কীভাবে তার বর্জ্য নিষ্পত্তি করে সে বিষয়ে সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার নেতৃত্ব এক্ষেত্রে একইভাবে সমান গুরুত্বপূর্ণ। যদিও দক্ষিণ এশিয়ায় মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ২৮ কেজি (ভারতে আনুমানিক ১১ কেজি, বাংলাদেশে ৯ কেজি, পাকিস্তানে ৭.৫ কেজি এবং শ্রীলঙ্কায় ৬ কেজি) তারপরেও এটি বৈশ্বিক গড় থেকে যথেষ্ট কম। উন্নত বিশ্ব থেকে যে পরিমান প্লাস্টিক মিশ্রিত পানি সমুদ্রের মাধ্যমে এসব দেশে প্রবেশ করছে, তার পরিমান অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। যাইহোক, অধিকতর গবেষণার মাধ্যমে এই সঙ্কটের পিছনের জটিলতাগুলি যেভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠছে, তাতে মনে হচ্ছে প্লাস্টিক দূষণের পরিমান নির্ণয়ের সাথে কোনো দেশকে যুক্ত করে দেয়ার প্রক্রিয়াটি এতদিন ধরে একটি ভ্রান্ত প্রক্রিয়া ছিল।
দক্ষিণ এশিয়ায় ‘হিট-এন্ড-মিস’ প্লাস্টিক নীতি
দক্ষিণ এশিয়ার নীতিনির্ধারকরা গত দুই দশক ধরে প্লাস্টিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন। পণ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা এই পুরাে অঞ্চল জুড়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় নীতি হিসেবে প্রচলিত। কেবল আফগানিস্তান ছাড়া সার্কের সব দেশ প্লাস্টিকের ব্যাগ বা অন্যান্য একক ব্যবহারের আইটেম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ভুটানে প্লাস্টিক ব্যাগ এবং আইসক্রিম মোড়কের উপর নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয় যথাক্রমে ১৯৯৯ এবং ২০০২ সালে। শ্রীলঙ্কা ২০১৭ সালে আকস্মিক বন্যার উদ্বেগের কারণে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিষিদ্ধ করে। আর ভারত ২০২২ সালের জুনে এক ডজনেরও বেশি একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক আইটেমের উপর তার নিজস্ব নিষেধাজ্ঞার কথা ঘোষণা করে।
এই নিষেধাজ্ঞাগুলোকে একটি যৌক্তিক নীতি প্রতিক্রিয়ার মতো মনে হতে পারে। তবে বাস্তবে এগুলো বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন। সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায়ই প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে তবে এগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাগুজে নিয়মের বেড়াজালে আটকে থাকে। এখানে রয়েছে অনেকগুলো যৌথ নদী আর উপকূলরেখা। সেইসাথে প্লাস্টিক পণ্যের বাজার এবং প্লাস্টিক বর্জ্য বাণিজ্যের কারনে প্লাস্টিক মোকাবেলায় কার্যকর জাতীয় প্রচেষ্টা এবং সহযোগিতামূলক আঞ্চলিক ব্যবস্থা উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতের আইনী বিধিনিষেধ যেমন এক্সটেনডেন্ট প্রডিউসার রেসপন্সিবিলিটি (ইপিআর) ফ্রেমওয়ার্ক, পাকিস্তানের ২০২১ সালের ইপিআর রেগুলেশন এবং ২০২১ সালের ইপিআর বিধানসহ বাংলাদেশের সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট রুলসের মতো নতুন নীতিগুলি এই অঞ্চলে প্লাস্টিক দূষণ বন্ধের ক্ষেত্রে অগ্রগামী-চিন্তামূলক নীতিরই একটি বহি:প্রকাশ। দূষণকারীকেই মূল্য দিতে হবে এমন নীতির উপর ভিত্তি করে এই সমস্যার সমাধান পুরোপুরি করা সম্ভব নয়। প্লাস্টিকের দূষণের এই জোয়ার বন্ধে উল্টানোর আশা পেতে, দক্ষিণ চলমান প্লাস্টিক চুক্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক আলোচনা। আর এতে দক্ষিণ এশিয়াকে অবশ্যই গঠনমূলক এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি প্লাস্টিক মুক্ত ভবিষ্যত?
শুধুমাত্র নেপাল, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা তাদের মতামত জানিয়েছে “অপশন্স ফর এলিমেন্টস’ এর মাধ্যমে, যা প্লাস্টিক চুক্তিতে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী কণ্ঠ, ভারত, আলোচনা কমিটির প্রথম বৈঠকে কয়েকটি হস্তক্ষেপ ছাড়া একেবারেই চুপচাপ রয়েছে। অন্যদিকে ভুটান ও মিয়ানমার আলোচনায় পুরোপুরি অনুপস্থিত।
সুশীল সমাজের গোষ্ঠীগুলোর একটি বৈশ্বিক জোট চলমান এই আলোচনাকে খুব কাছ থেকে অনুসরণ করছে – আমি এই গোষ্ঠীর একজন সদস্য। আমি আশা করি এই দেশগুলো থেকে আরও বলীষ্ঠ নেতৃত্ব এই আলোচনাকে আরো বেগবান করবে বিশেষ করে প্লাস্টিকের উপাদান এবং রাসায়নিক ব্যবহারের পথ থেকে উত্তরণ, শ্রমিকদের মধ্যে একটি ন্যায়ভিত্তিক পরিবর্তন; এবং প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সহায়তা। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর উচিত প্লািস্টিক নিয়ে ‘হাই অ্যাম্বিশন কোয়ালিশনে’ যোগদানের করা যার বর্তমান সদস্য বিশ্বের ২৫টি দেশ। এই জোটটি আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে পৃথিবীকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত করতে চায়। পাশাপাশি সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে বিষয়টি হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার উচিত এখন উচ্চাভিলাষী ও আইনত বাধ্যতামূলক একটি চুক্তি দাবি করা যা প্লাস্টিকের সম্পূর্ণ জীবনচক্রের প্রভাবগুলোকে মোকাবেলা করতে পারে।
প্লাস্টিক দূষণে দক্ষিণ এশিয়ার যেমন যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে, ঠিক তেমনি এর প্রতিকারে উদ্ভাবনী সমাধানের জন্য উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনাও রয়েছে এখানে
আগামী বছরগুলোতে প্লাস্টিক চুক্তির বিষয়টি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচিত হতে থাকবে। এই আলোচনা অনেক ক্ষেত্রেই একধরনের দ্বিধা সৃষ্টি করবে যা বিভিন্ন দেশের সরকারের নৈতিক অবস্থান পরিস্কার করবে। এটি আরো জোরদার হবে যখন দেশগুলো বুঝতে পারবে যে প্লাস্টিকের দ্বারা সৃষ্ট পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতি এবং জনস্বাস্থ্যের বিপর্যয়কে উপেক্ষা করা ধীরে ধীরে কঠিন হতে থাকবে, এমনকি অর্থনীতিতে ছোটখাটোভাবে প্রভাব রাখা ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালানার ক্ষেত্রেও প্লাস্টিক দূষণ একটি বিরাট অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। মোদ্দাকথা হচ্ছে প্লাস্টিক সংকট মোকাবেলার জন্য একটি সাহসী এবং জরুরী প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন। আর তাই সমগ্র বিশ্বকে একটি শক্তিশালী এবং বাধ্যতামূলক প্লাস্টিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে তা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
অতএব আজকের দিনে একটি কথা অনস্বীকার্য যে প্লাস্টিক সংকট সমাধানের চাবিকাঠি এবং রূপান্তরমূলক পরিবর্তনে মূখ্য ভূমিকায় থাকতে পারে দক্ষিণ এশীয়া। এই অঞ্চলের দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যা এবং শিল্প খাতের সম্প্রসারণশীলতার সাথে, দক্ষিণ এশিয়া প্লাস্টিক দূষণে একটি উল্লেখযোগ্য অবদানকারী এবং পাশাপাশি এর ক্ষয়ক্ষতি বন্ধে এখানকার দেশগুলোই নিয়ে আসতে পারে উদ্ভাবনী সমাধান। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং সম্মিলিত পদক্ষেপের যে ঐতিহ্য তার মাধ্যমে এই সংকট কাটিয়ে আনার বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। আঞ্চলিক অংশীদারিত্ব গঠনের মাধ্যমে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো প্লাস্টিক দ্বারা সৃষ্ট যে হুমকি রয়েছে তা মোকাবেলায় সফল কৌশল, তথ্য বিনিময় এবং সম্পদ একত্রিত করে এ অঞ্চলের জনগনের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তুলতে পারে।