গত কয়েক মাস যাবত রম্ভা পায়েং বেশ চিন্তামুক্ত সময় পার করছে। ৩৩ বছরের একজন গৃহবধু ও নারী কৃষক রম্ভা পায়েং তার দুই কন্যা সন্তানের জন্য এখন তার নিজ হাতে চাষ করা অর্গানিক (জৈব) সবজি চাষ করে খাবার তুলে দিতে পারছে। অথচ মাত্র কয়েক মাস আগেও এই পরিবারের জন্য এই ধরনের খাদ্যের কথা চিন্তা করাই ছিল এক প্রকার বিলাসিত।
রম্ভা পায়েং বাস করে ভিারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য আসামে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় চর (নদীল বুকে পলি জমে জম্ম নেয়া স্থায়ী বা অস্থায়ী দ্বিপ) মাজুলিতে। এটি ব্রক্ষ্মপুত্র নদীর বুকে সৃষ্টি হওয়া একটি চর যার আয়তন ৫৫৩ বর্গ কিলোমিটার। বিশাল এই চরে সব মিলিয়ে ১১টি নৃ-গোষ্ঠীর প্রায় ১৭০,০০০ জন মানুষের বসবাস।
বিগত ১৯১৪ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত মাজুলির আয়তন প্রায় তিন শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। গত ৫০ বছর ধরে অতি বন্যায় চরটিতে অস্বাভাবিকভাবে নদী ভাঙ্গন সংঘটিত হয়েছে, যার ফলে ছবির মতো দেখতে এই চরের বিপুল পরিমান চাষাবাদযোগ্য জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ফলে চরে বসবাস করা মানুষের জীবন-জীবিকা ব্যাহত হয়েছে মারাত্বকভাবে।
এখানে সবচেয়ে আতংকের সময হচ্ছে মৌসুমী ঋতু বা বর্ষাকাল। রম্ভা পায়েং বলেন, “প্রতি বছরই প্রায় চার থেকে পাঁচ মাসের জন্য আমরা পুরো পৃথিবীর কাছ থেকে মনে হয় যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। এসময় বন্যার তোড়ে আমাদের বসত ভিটা ও ফসলের জমি তলিয়ে যায়। চরের মানুষের জীবন ও জীবিকা সেই সময়গুলোতে আক্ষরিক অর্থেই অচল হয়ে পড়ে।” তিনি বলেন, “কপাল ভালো, প্রচণ্ড বিপদসংকুল সেই সময় আমাদের এখানে বাও ধানের (বন্যার পানি সহনীয় লাল ধান) ফলন হয়। এর মাধ্যমেই কোনোক্রমে আমাদের জীবিকা চালিয়ে যেতে পারি। কিন্তু আবাদী জমিগুলোতে চাষ করা সবজি ভেসে যায় বন্যার পানির সাথে।”
তিনি বলেন, “আসলে সত্যি কথা বলতে কী আমরা দুই কন্যার কেউই স্বাস্থ্যকর খাদ্য খেতে পারছিল না।”
“তবে সৌভাগ্যক্রমে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে, আমার দুই কন্যা এই বছর প্রথম বারের মতো মতো ঢেঁড়সের সাথে অন্যান্য সবজি খেতে পেরেছে।” নিজের মাচাঙ ঘরের সামনের পুকুরে ভাসমান বাগানে তাদের চাষ করা সবজির দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছিল রম্ভা পায়েং।
মাজুলিতে ভাসমান বাগান-কৃষির সূচনা
মাজুলির উপ বিভাগীয় কৃষি কর্মকর্তা ইরশাদ আলী দ্য থার্ড পোলকে বলেন, এই চরে প্রায় ৯,২৭০ হেক্টর জমি কৃষি জমি হিসেবে আবাদ করা করা হয়। এখানকার প্রায় ৩১,৪২০ জন চাষী চরের আবাদযোগ্য এই জমির উপরে পুরোপুরি নির্ভরশীল। ২০১৭ সালের বন্যায় মাজুলির প্রায় ১৮ শতাংশ ভূমি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর ২০১৯ সালের বন্যায় এখানকার ১,৮৭৫ হেক্টর চাষাবাদযোগ্য জমি পুরোপুরি নষ্ট হয়।
ক্রমবর্ধমান অসহিঞ্চু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় জনগনের মধ্যে খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে বেসরকারী সংস্থা সাউথ এশিয়ান ফোরাম ফর এনভায়রনমেন্ট (এসএএফই)। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় টেকসই উন্নয়ন কৌশল ও পদ্ধতি আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই মূলত তাদের লক্ষ্য। এরই ধারাবাহিকতায় মাজুলিতে ২০১৭ সালে তারা প্রথমবারের মতো ভাসমান বাগান-কৃষির প্রচলন করে।
এসএএফই-এর কর্মসূচী পরিচালক চিরঞ্জিত চ্যাটার্জী বলেন, “প্রথম দিকে আমরা এক ধরনের জল-চাষ পদ্ধতি বা হাইড্রোপনিক্স চালুর চেষ্টা করি (এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মাটির পরিবর্তে পুষ্টি সমৃদ্ধ পানিতে ফসলের চারা রোপন করা হয়)। আমাদের এই ধারণার মধ্য দিয়েই পানিতে ভাসমান ভেলায় ফসল উৎপাদন পদ্ধতিটির প্রচলন করি।” এ প্রক্রিয়ায় বাঁশের তৈরি ভাসমান ভেলায় পানিতে ভেজা জীবাণুবিয়োজ্য এক ধরনের স্পঞ্জে সবজি চাষ করা হয়। এতে কৃষকরা অবশ্য শাক-সবজির চাষ করতে পারতো, তবে এটি কোনো দির্ঘস্থায়ী সমাধান ছিল না বলে জানান চিরঞ্জিত। তিনি বলেন, “এই ভেলাগুলো দীর্ঘ সময় পানিতে থাকতে থাকতে এক পর্যায়ে পঁচে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতো।”
চিরঞ্জিত চ্যাটার্জী বলেন, “চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এসএএফই নতুন ধরনের একটি ভাসমান ভেলার মডেল তৈরি করে যেটি কয়েকটি ড্রামের উপরে স্থাপন করা হয়। এতে ভেলাটি পানিতে অনায়াসেই ভেসে থাকে এবং স্থায়িত্বের দিক থেকেও এটি উৎকৃষ্ট।”
এখন স্পঞ্জের তৈরি বীজতলায় চারা রোপন করার পরিবর্তে ভেলায় স্থাপিত ব্যাগে শাক-সবজি চাষ করা হয়। এসব ব্যাগে প্রয়োজন অনুযায়ী কম্পোষ্ট সার, কোকো পিট, বায়োচার, সডাষ্ট এবং অন্যান্য জৈব সার ব্যবহার করা হয়।
কৃষকরা যদিও এই সব বাগানে নিজ হাতে পানি প্রয়োগ করে থাকে। তারপরেও কৃষকদের এসএএফই-এর পক্ষ থেকে তাদের সৌরশক্তি চালিত পানির পাম্প প্রদান করা হয়েছে। ভাসমান বাগানে স্থাপিত একটি সেচ পদ্ধতির মাধ্যমে এই সৌর পাম্পগুলোর সাহায্যে বাগানে রোপিত চারাগুলোতে সেচ প্রদান করা হয। বিশেষভাবে তৈরি এই চারা ব্যাগগুলো পানির আর্দ্রতা ধরে রাখাসহ পানির অপচয় সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখতে সহায়তা করে। ব্যাগে কিছু ছিদ্র রাখা হয় যার মাধ্যমে অতিরিক্ত পানি গলে বেরিয়ে যায়।
ভাসমান বাগানের সম্পূর্ণ কাঠামোটিই একটি নেট বা জাল দ্বারা আবৃত থাকে যাতে পাখির হাত থেকে ফসলগুলো সুরক্ষা পায়।
যেহেতু ভাসমান বাগানগুলো পানির স্তর বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি তলিয়ে না গিয়ে পানিতেই ভেসে থাকে, ফলে বন্যার কারনে এসব চাষকৃত ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। কিন্তু সাধারন প্রক্রিয়ায় আবাদি জমিতে ফসল চাষ করা হলে বন্যার পানিতে ফসল ভেসে যায় কিংবা পুরো ফসলের জমিটিই হয়ত বন্যার মাটিকে জলবদ্ধতার কারনে তলিয়ে যায়।
এসএএফই-এর মাঠ সমন্বয়ক সাবেন কালিতা বলেন, “একটি ভাসমান বাগানে ২৫টি ব্যাগ দিয়ে ফসল উৎপাদন সম্ভব। বর্তমানে মাজুলিতে নতুন ডিজাইন করা ৫৫টি ভাসমান বাগানে এই প্রক্রিয়াতে চাষাবাদ করছে স্থানীয় কৃষকরা।”
কিছু কিছু স্থানে জলাশয়ে স্থাপিত ভাসমান বাগানের পাশাপাশি মাছের ফার্মও গড়ে তোলা হয়েছে। এ ব্যাপারে সাবেন কালিতা বলেন, “এ ধরনের একটি ভাসমান ট্রে বা খাঁচার পাশাপাশি একই জলাশয়ে মাছের চাষ করতে ব্যয় সর্বোচ্চ ২০,০০০ ভারতীয় রুপি (২৭০ মার্কিন ডলার)।” তিনি আরো বলেন, “অন্যান্য প্রথাগত চাষাবাদ পদ্ধতির সাথে তুলনা করলে উদ্ভাবিত নতুন এই পদ্ধতিটি আসলেই বেশ সাশ্রয়ী কারন এতে জমিতে কর্ষণ ও বপনের প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া সারের যে দ্রবন (কম্পোস্ট) তা পূনর্ব্যবহারও করা যায়।”
অন্যান্য প্রথাগত চাষাবাদ পদ্ধতিতে (জমিতে ফসল চাষ) যে পরিমান শ্রম দিতে হয়, যেমন খনন, রোপন ও সেচ ইত্যাদি, ভাসমান বাগানে তা একেবারেই নেই বললেই চলে।
সুসংহতের পথে খাদ্য নিরাপত্তা
রম্ভা পায়েংয়ের স্বামী বলিন পায়েং জানান তার স্বামী নতুন ভাসমান বীজতলা পেয়ে বেশ খুশী। তিনি বলেন, “ভাসমান বাগানগুলোর স্থায়িত্ব অনেক বেশি। এখানে আমরা আমাদের নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী সবজি চাষ করতে পারি এবং আমাদের পরিবারের চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত অংশ আমরা বাজারে বিক্রি করে কিছুটা আয়ও করা সম্ভব। সত্যি বলতে কি আমরা এই চরে বসবাস করে সবজি খেতে পেরে বেশ খুশী কারণ এখানকার ফসলি জমির একটি বিশাল অংশই বছরের একটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত জলমগ্ন থাকে।”
মাজুলির আরেক কৃষক জনারাম পায়েং (তিনি অবশ্য রম্ভা পায়েংয়ের কোনো আত্মীয় নন) বলেন, “আমরা প্রায় ২০টি ভাসমান বীজতলায় এবার ২৫ – ৩০ কিলোগ্রাম (কেজি) রাজা মরিচ চাষ করেছি … সেই সাথে ৪৫ থেকে ৫০ কেজি ঢেঁড়স এবং লাউ উৎপাদন করেছি। এই সবজিগুলো অত্যন্ত টাটকা এবং পুরোপুরি অর্গানিক। উৎপাদিত ফসলের বেশিরভাগই আমরা পরিবারের সবাই খাদ্য হিসেবে গ্রহন করেছি আর অতিরিক্ত যা ছিল তা আমরা বাজারে বিক্রি করেছি”। তিনি বলেন, “আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় যে প্রয়োজন সেটি হচ্ছে পরিবারের চাহিদা পূরণ করা। কারণ বন্যার ফলে আমাদের এই চরে শাক-সবজির চাষ ও উৎপাদন অত্যন্ত নগন্য।”
কৃষক জনারাম পায়েং নিজের ০.৪০ হেক্টর জমিতে বন্যা সহনীয় ধান চাষ করে থাকে। তার মতে যেহেতু বর্ষাকাল এখন বেশ অস্বাভাবিক এবং অনির্দেশ্য হয়ে পড়েছে তাই পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে এখানকার কৃষকদের আরো বেশি পরিমানে ভাসমান বাগানের মতো নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হতে পারে। তিনি বলেন, “আমরা জীবিকার জন্য বাও ধান চাষের উপরে নির্ভরশীল। এই ধরনের ধানের প্রজাতির জন্য বন্যা অত্যণÍ গুরুত্বপূর্ণ কারন এটি পানির নিচেই জন্মায়। কিন্তু এ বছর বড় ধরনের কোনো বন্যা হয়নি।”
সাধারনত বন্যার কারনে কৃষকরা সবজি উৎপাদনে বিরত থাকে। কিন্তু এ বছর বলতে গেলে বিপরীত ঘটনাই ঘটেছে : অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের কারনে ধানের চারা বেশ ক্ষতির মুখে পড়েছে। গত আগষ্ট মাসের শেষের দিকে একটি বন্যার ঢেউ এসেছিল, তবে দূর্বল মৌসুমী আবহাওয়ার কারনে কৃষকরা যে পরিমান বন্যা আশা করেছিল তার ধারে কাছেও তা ছিল না।
এখন পর্যন্ত মাজুলির কৃষকরা ভাসমান বাগানে উৎপাদিত ফসলের যৎসামান্যই স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় উপাদিত ফসলের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিবারের পুষ্টির চাহিদার যোগান দেয়া। ভবিষ্যতে এই প্রকল্পটি যখন আরো বৃহত আকারে বাস্তবায়ন করা হবে তখন হয়ত কৃষকরা আরো বেশি পরিমানে লাভের মুখ দেখতে পাবেন বলে আশা করেন এসএএফই-এর কর্মসূচী পরিচালক চিরঞ্জিত চ্যাটার্জী। তিনি বলেন, “এই পদ্ধতিতে কম্পোস্ট সারের মতো অন্যান্য যে ধরনের অনুসঙ্গ প্রয়োজন তা স্থানীয় কৃষকদের মাধ্যমে উৎপাদন করা গেলে লাভের পাল্লা আরো ভারী হবে।”
বন্যা-প্রবন এলাকাগুলোতে ভাসমান কৃষির ব্যবহার বাড়ছে
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সুন্দরবন সংলগ্ন বন্যা প্রবন এলাকা এবং বিহারের শার্সায় ২০১৯ সালে এই ধরনের উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়ে। ২০২০ সালে বাংলাদেশেও এই ধরনের চাষাবাদ প্রক্রিয়া শুরু হয়।
260
Rafts introduced by the South Asian Forum for Environment since 2017
২০১৭ সাল থেকে ভাসমান ভেলার ব্যবহার চালু করেছে সাউথ এশিয়ান ফোরাম ফর এনভায়রনমেন্ট
এসএএফই-এর মাঠ সমন্বয়ক কালিতা বলেন, “২০১৭ সাল থেকে আমরা সব মিলিয়ে প্রায় ২,৫০০ কৃষককে এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করেছি যাদের বেশিরভাগই নারী কৃষক। এই মডেলটি ব্যবহার করে কৃষকরা সমন্বিতভাবে মাছ, কাঁকড়া, হাস ও শুকর চাষ ও পালন করতে পারে।”
“আমরা এখন পর্যন্ত ভারত ও বাংলাদেশে সব মিলিয়ে ২৬০টি ভাসমান বাগান নির্মান করেছি”।
দ্য থার্ড পোল-এর সাথে আলাপকালে ভাসমান বাগান বা কৃষি পদ্ধতিকে মাজুলির কৃষির ভবিষ্যত বলে অভিহিত করেন সরকারী কর্মকর্তারা।
দ্বীপ জেলা মাজুলির উপ-বিভাগীয় কৃষি কর্মকর্তা ইরশাদ আলী বলেন, “এই চরে কৃষিকাজে ভাসমান বীজতলার সফল প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়েছে এখানে কর্মরত বেসরকারী সংস্থাগুলো। এই ধরনের পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করতে হলে প্রয়োজনীয় উপকরণ ও স্থাপনার নির্মান কিছুটা ব্যয়বহুল। তাই সরকারের বিষয়টি মাথায় নিয়ে কৃষকদের এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা উচিত।”
ইরশাদ আলী বলেন, “চাষাবাদের এই প্রক্রিয়াটি শুধু যে এখানকার জন্যই প্রয়োজনীয় তা নয়। এটি দেশের অন্যান্য নিম্নাঞ্চল ও বন্যা প্রবন এলাকাতেও ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন যেখানে প্রতি বছরই বন্যায় ফসলহানী ঘটে থাকে।”
তিনি জানান মাজুলিতে তার বিভাগের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে যার মাধ্যমে কচুরীপানা ব্যবহার করে অর্গানিক সবজি চাষের জন্য ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হচ্ছে। তবে এর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে দীর্ঘমেয়াদী সহায়তা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন ইরশাদ আলী।
মাজুলিতে বসবাসকারী অবসরপ্রাপ্ত জেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুণ কুমার পাথাক বলেন, “এখানকার কৃষকদের জন্য শাক-সবজি, গুল্ম এবং ঔষধী গাছের চাষাবাদের ক্ষেত্রে ভাসমান বীজতলা যথেষ্ট উপকারে আসছে। যেসব জলাশয়ে সাধারণত বন্যার পানি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আটকে থাকে সেসব জলাশয় এই ধরনের কৃষি উদ্যোগের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।”
অরুন কুমার পাথাক আরো বলেন, “এই পদ্ধতিতে জমি কর্ষণের প্রয়োজন পড়ে না এবং অর্গানিক (জৈব) ফসল উৎপাদনে এটি একটি উৎসাহব্যঞ্জক উদ্যোগ”। তিনি আরো বলেন, “জলমগ্ন স্থানে ভাসমান ফসল বাগানে সৌরশক্তির মাধ্যমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সেচ ব্যবস্থা চালু করা যায়। এর ফলে জলশক্তির ব্যবহার অনেকাংশেই হ্রাস পাবে। এছাড়াও অন্যান্য উপকারসমূহের কথা বলতে গেলে বলা যায় এর জন্য প্রথাগত কৃষি পদ্ধতির চেয়ে স্বল্প পরিসর দরকার হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না।”