বঙ্গীয় বদ্বীপ হচ্ছে এমন একটি অঞ্চল যার মধ্য দিয়ে অজস্র নদী গোলকধাঁধা রচনা করে ছুটে চলেছে বঙ্গোপসাগরে, যেখানে পানির সাথে ভূমির সাক্ষাত হয়। জালের মতো বিস্তৃত নদীময় এই ভূমিতে বসবাসকারী মানুষের পানির অভাব হয়না কখনও, তবে তার অর্থ এই নয় যে এখানকার মানুষের পানির তেষ্টা নেই।
আরো পড়ুন
উপকূলীয় এলাকায় বসবাসকারী জনগনের বিশুদ্ধ খাবার পানির গুনাগুন নিয়ে এটি আমাদের দ্বিতীয় পর্ব। পাকিস্তানে পরিচালিত আমাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বাংলাদেশের উপকূলে, বিশেষ করে দক্ষিণ পশ্চিমের বিভিন্ন জেলায় বসবাস করা মানে হচ্ছে নিত্য সুপেয় পানির সন্ধান ও সরবরাহে প্রাণান্ত প্রচেষ্টা। সেখানে প্রায় সকল পানির উৎসগুলো লবণাক্ততার কারনে পানের অযোগ্য। তাই স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে বিশুদ্ধ পানি এখন একটি বহুমূল্য পন্যের নাম। খুলনা জেলার বানিশান্তা গ্রামের শেফালী বিশ্বাস প্রতিদিন তার পরিবারের সদস্যদের জন্য নিজের বাড়ি থেকে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার দুরে গিয়ে খাবার পানি সংগ্রহ করেন। নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টিপাতের পরিমান অত্যন্ত কম থাকে। সেই সময় ৫৫ বছরের শেফালী বিশ্বাসকে দিনে কমপক্ষে দুই থেকে তিনবার অর্ধ কিলোমিটার দুরের একটি পুকুর থেকে পরিবারের জন্য পানি সংগ্রহ করতে হয়।
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় চার কোটি মানুষের বসবাস। এদের সবাইকে দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করতে বিশুদ্ধ পানির জন্য প্রাকৃতিক উৎস, যেমন পুকুর, নদী এবং টিউবওয়লের উপরে নির্ভর করতে হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে এসব পুকুর এবং অন্যান্য জলাধারগুলোতে লবণাক্ততার পরিমান দিন দিন বেড়েই চলছে। লবণাক্ততার ফলে সৃষ্ট সংকট কোন পর্যায়ে আছে তা বুঝতে দ্য থার্ড পোলের পক্ষ থেকে উপকূলীয় অঞ্চলগুলো থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে রসায়নাগারে পরীক্ষা করা হয়।
লবণাক্ততা বেড়েই চলছে
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে ছোট-বড় সব নদী ও খাল-বিলের পানির প্রধান উৎস হচ্ছে গঙ্গা। শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গা নদীর পানি প্রবাহ অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস পায়। সেসময় এই অঞ্চলের ছোট-বড় নদীগুলোতে মিঠা পানির প্রবাহ কমে যায়, আর এর ফলে সমুদ্রের জোয়ারের পানি এসব নদীতে প্রবেশ করে। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারনে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সংকট আরো ত্বরান্বিত হচ্ছে। পাশাপাশি সাগরের বর্ধিত জোয়ারের পানির কারনে ব-দ্বীপ এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক উৎসগুলো আরো লবণাক্ত হয়ে উঠছে। অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান চিংড়ি চাষের ফলে মূল ভূমিতে অন্যান্য জলাধারগুলো লবণ পানির কারণে দূষিত হয়ে পড়ছে।
২০১৬ সালে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় গঙ্গার জোয়ারের প্লাবনভূমিতে প্রতিবছর ৭ – ৮ মিলিমিটার (এমএম/বছর) পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই প্রবণতা চট্টগ্রামের উপকূলীয় সমতলের মেঘনা অববাহিকাতেও দৃশ্যমান । ২০১৬ সালে পরিচালিত সেই একই গবেষণায় দেখা গেছে পর পর দুই বছর মেঘনা অববাহিকায় পানির উচ্চতা বৃদ্ধির পরিমান ক্রমান্বয়ে ৬ – ৯ এমএম/বছর এবং ১১-২০ এমএম/বছর।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাণিজ্যিকভাবে চিংড়ি চাষ যা শুরু হয় ১৯৮০ সালের পর থেকে। এই ধরনের বাণিজ্যিক চাষের জন্য প্রাকৃতিক সুপেয় পানির জলাধারগুলোর আশেপাশের কৃষি জমিগুলোতে লবণ পানি আটকে রাখতে হয়। ফলে পানির উৎসগুলোতে লবণ পানি প্রবেশ করতে শুরু করে এবং ভূ-গর্ভস্থ্য পানিকে লবণাক্ত করে তোলে। সাতক্ষীরা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকার একটি জেলা। ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াটারএইড বাংলাদেশ সাতক্ষীরার ৫৭টি সরকারী ও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন পুকুরের পানি পরীক্ষা করায়। এগুলোর মধ্যে ১৬টি নমুনায় লবণাক্ততার পরিমান এতটাই বেশি পাওয়া যায় যা পানের অযোগ্য। অন্যান্য ২৫টি নমুনায় দেখা যায় তা কোনোরকম স্নান বা রান্নার মতো আরো অন্যান্য গৃহস্থালী কাজে ব্যবহার করা গেলেও কোনোভাবেই পানের যোগ্য নয়। একই পরিস্থিতি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় অন্যান্য স্থানেও পরিলক্ষিত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং বাংলাদেশ গণস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) মতে, পানিতে ক্লোরাইডের উপস্থিতির পরিমান প্রতি লিটারে ৩০০ মিলিগ্রামের (এমজি) নিচে হলে তা মোটামুটি বিশুদ্ধ হিসেবে বিবেচিত হবে। অন্যদিকে পানিতে ক্লোরাইডের মাত্রা প্রতি লিটারে ৩০০ থেকে ৬০০ মিলিগ্রাম হলে তা পান করার যোগ্য বলে ধরে নেয়া হয়। ভূগর্ভস্থ্য পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা নিরুপনে ২০১৩ সালে বঙ্গীয় ব-দ্বীপ অঞ্চলের উপকূলীয় জেলাগুলোতে এক গবেষণা পরিচালিত হয়। সেই গবেষণায় দেখা যায় এখানকার পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বহুগুন বেশি। প্রাকৃতিকভাবে পানিতে ক্লোরাইডের মাত্রা বেশি হলে সোডিয়ামের মাত্রাও বেশি হয়। অর্থাৎ খাবার পানিতে ক্লোরাইডের উচ্চ মাত্রার উপস্থিতি থাকার মানে হচ্ছে পানি পানের মধ্য দিয়ে শরীরে আরো বেশি পরিমানে সোডিয়াম গ্রহন করা। আর মানব শরীরে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যার মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম প্রতিষ্ঠিত কারণ হচ্ছে শরীরে সোডিয়ামের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি।
বেশ কিছু গবেষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে স্থানীয় অধিবাসীদের শরীরে উচ্চ রক্তচাপের সাথে অতিরিক্ত লবন গ্রহনের একটি সম্পর্ক পাওয়া গেছে। বিশেষ করে নারী ও ৩৫ উর্ধ্ব পুরুষদের মধ্যে এই বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়। অধিক পরিমানে লবন গ্রহন করার মানে হচ্ছে দেহে বেশি পরিমানে পানির উপস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়া যা রক্তনালীর প্রবাহে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করে। এটি চিকিৎসাশাস্ত্রে হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে পরিচিত।
বেসরকারী সংস্থা ওয়াটারএইড সাউথ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক খাইরুল ইসলাম বলেন, “উপকূলীয় এলাকার পানিতে যে পরিমান লবণাক্ততা এখন দেখা যায় তা অতীতের কোনো সময়েই দেখা যায়নি। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে আমাদের দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি সেখানে বিশুদ্ধ পানির সংকট প্রতিদিনই বাড়ছে।“ চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে পড়া খাইরুল ইসলাম বলেন, উপকূলীয় এসব এলাকায় অবিলম্বে স্থানীয়দের জন্য বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে সেখানে অবিলম্বে ব্যাপক ভিত্তিক গণস্বাস্থ্য সংকট তৈরি হবে। চলতি বছর বাংলাদেশ রিসোর্স কাউন্সিল ফর ইন্ডেজেনাস নলেজ (বারসিক) পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে উপকূলে বসবাসকারী সব ধরনের বয়সের মানুষের মধ্যে প্রধান শারীরিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে চর্ম রোগ, পাকস্থলী ফুলে যাওয়া, হ্রদরোগ, ক্লান্তি ও গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ সংক্রান্ত সমস্যা। নারীদের প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে রয়েছে মূত্রনালীর সংক্রমন, অনিয়মিত ঋতুস্রাব এবং গর্ভকালীন খিঁচুনি। এর মধ্যে মূত্রনালীর সংক্রমন ও গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ সংক্রান্ত সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, যা পরবর্তীতে গর্ভকালীন খিঁচুনীতে পরিণত হতে পারে। আর এই সমস্যা গুলো দিন দিন বেড়েই চলেছে।
পানির নমুনা পরীক্ষা
স্বাস্থ্যগত এসব সমস্যার সাথে সাধারণত যে পানি পান করা হয় তার কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না তা জানতে দ্য থার্ড পোল খূলনা ও সাতক্ষীরার আটটি ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে। এই নমুনাগুলো সেখানকার পুকুর, রিভার্স অসমোসিস প্লান্ট (এক ধরনের পানি বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া), নলকূপ এবং পন্ড স্যান্ড ফিল্টার (পুকুরে বিশেষ প্রক্রিয়ায় পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট যা সরকার ও বেসরকারী সংস্থা দ্বারা স্থানীয়দের মধ্যে প্রদান করা হয়েছে) থেকে সংগ্রহ করে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) গবেষণাগারে পাঠানো হয় পরীক্ষা করার জন্য।
এই পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় কমপক্ষে ৬টি নমুনাতে লবনের পরিমান পাওয়া যায় ১ থেকে ৮.৮ পিপিটি; অন্য দুটি নমুনায় এর মাত্রা ছিল ০.১ পিপিটির কম (বাংলাদেশে খাবার পানিতে লবনের মাত্রা ০.১ পিপিটিকে স্বাভাবিক মাত্রা হিসেবে মনে করা হয়)।
কমপক্ষে ৬টি নমুনায় ক্লোরাইডের উপস্থিতি পাওয়া যায় প্রতি লিটারে ৩৯০ থেকে ৯,১৩২ মিলিগ্রাম। বাংলাদেশ সরকার ২০২০ সালে পানিতে ক্লোরাইডের স্বাভাবিক মাত্রা সর্বোচ্চ ২৫০ এমজি/লিটার নির্ধারণ করে।
৬টি নমুনায় টোটাল ডিসলভড সলিডস (টিডিস) বা পানিতে দ্রবীভূত পদার্থের মাত্রা ছিল ৬৮৭ থেকে ৮,৯৯৬ মিলিগ্রাম/লিটার। এই পরীক্ষার মাধ্যমে পানিতে দ্রবীভূত অবস্থায় জৈব ও অজৈব পদার্থের উপস্থিতি নিরুপন করা হয়। বাংলাদেশে টিডিএস-এর গ্রহনযোগ্য মাত্রা মাত্র ৫০০ মিলিগ্রাম/লিটার।
ক্যালসিয়াম কার্বোনেট-এর উচ্চ মাত্রা (CaCO3) গর্ভবতী নারীদের কিডনি মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে সক্ষম। পাশাপাশি শরীরে এই রাসায়নিকের উচ্চ মাত্রা ত্বকে মারাত্বক জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে। আমাদের এই পরীক্ষার জন্য সংগৃহীত প্রায় অর্ধেক নমুনায় ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের মাত্রা নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি পাওয়া যায়। বাংলাদেশে এর স্বাভাবিক মাত্রা ৩০০ মিলিগ্রাম/লিটার। বাংলাদেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আসলে উপকূলীয় অঞ্চলে নিরাপদ পানির সংকটের ফলে আজ সেখানে স্থানীয়দের মধ্যে নানা ধরনের শারীরিক স্বাস্থ্যগত সমস্যার প্রাদূর্ভাব বাড়ছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, যেহেতু ওই অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির সংকট, তাই সেখানকার সবাই প্রয়োজনের চেয়ে যৎসামান্য পানি পান করেন। আর এজন্য নারীরা তাদের ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারেন না। চিকিৎসক ও অন্যান্য পরীক্ষায় দেখা গেছে এই সমস্যাগুলো মিলে প্রায় সবারই মূত্রনালীর সংক্রমন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারন শরীরে যথেষ্ট পানির অভাব হলে মূত্রথলিতে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া অপসারিত হতে পারেনা।
সমস্যা পুরাতন হলেও ঝুঁকি নতুন
সুপেয় পানির সংকট এখানকার জন্য নতুন নয়। ২০০৮ সালে ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডন এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ যৌথভাবে একটি গবেষণা পরিচালনা করে। তাতে দেখা যায় দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে উপকূলীয় এলাকায় বসবাসরত জনগনের মধ্যে গর্ভকালীন খিচুনী ও উচ্চ রক্তচাপের আক্রান্ত হওয়ার মাত্রা অনেক বেশি।
দাকোপ উপজেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান গত কয়েক বছরে গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপে ভোগা রোগীদের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বাড়ছে। এই হাসপাতালটি প্রায় ১৬০,০০০ এর বেশি মানুষকে চিকিৎসা প্রদান করে থাকে। ২০১১ সালে গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে ১৩৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। আর ২০১৯ সালে উপজেলায় এই ধরনের রোগীর সংখ্যা ছিল ২০২ জন।
এই হাসপাতালের মেডিকেল ও ফ্যামিলি প্ল্যানিং (পরিবার পরিকল্পনা) বিষয়ক কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক নিজামী বলেন, গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয় তবে যে হারে এই সমস্যা বাড়ছে সেটি বেশ উদ্বেগজনক। গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, এমনকি এটি মা ও শিশুর জীবনকে হুমকির মধ্যেও ফেলে দিতে পারে।
তাঁর মতে, নারীরা খাবার পানির মাধ্যমে অতিরিক্ত পরিমানে সোডিয়াম ক্লোরাইড গ্রহন করছেন, এটিও এই সমস্যা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারন। উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে গর্ভকালীন খিঁচুনী। এর ফলে গর্ভবতী নারীদের কিডনি ও যকৃৎ মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যা প্রান সংহারের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। হাসপাতালের তথ্য থেকে জানা যায়, গত ২০১২ সালে গর্ভকালীন খিঁচুনী সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৬, আর ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ৫৪। একই হাসপাতালের গাইনী বিভাগের কনসালট্যান্ট সন্তোষ কুমার মজুমদার দ্য থার্ড পোলকে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে এ ধরনের রোগীর চাপ বাড়তে থাকে। এই সময়ে এই অঞ্চলে পানিতে লবণাক্ততার পরিমান অনেক বেশি থাকে।
সমাধানের প্রচেষ্টা
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড-এর পরিচালক আনোয়ার জাহিদ মনে করেন এই অঞ্চলে প্রচুর সংখ্যক গভীর পানির সংরক্ষণাগার স্থাপন করা জরুরী। তবে তাঁর মতে এসব বিশুদ্ধ জলাধারগুলোর পাশ থেকে চিংড়ি চাষের প্রকল্প সরিয়ে নিতে হবে।
সরকার ও বেসরকারী সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত বেশ কিছু প্রকল্পের মাধ্যমে বিকল্প পানির উৎস সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। জাতিসংঘের গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের আওতায় বাংলাদেশ সরকার ব্যাপক পরিসরে বৃষ্টির পানি সংরক্ষনের মধ্য দিয়ে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ব্র্যাক ও ওয়াটারএইড বাংলাদেশসহ আরো বেশ কয়েকটি বেসরকারী সংস্থা উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টির পানি ও রিভার্স অসমোসিস প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সুপেয় পানির যোগান বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তবে রিভার্স অসমোসিস প্রক্রিয়ায় অনেক পানিদূষণ হতে হয়ে থাকে যা পক্ষান্তরে পরিবেশের জন্য মারাত্বক ক্ষতির কারন হতে পারে।
তবে এই ধরনের সমাধান এখন পর্যন্ত সার্বিক ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে অল্প সংখ্যক মানুষের জন্য সুফল বয়ে আনছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে যারা বিশুদ্ধ পানি কিনে ব্যবহারের সক্ষমতা রাখেন তাদেরকে শহরের মানুষের চেয়ে কমপক্ষে 8০ গুন বেশি মূল্য দিয়ে তা কিনতে হয়।