জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বের ৪৬টি দেশ ও প্রায় এক বিলিয়ন জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্বকারী সংঘ এলডিসি (লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রি)। স্বল্পোন্নত এসব দেশের অনেকেই জলবায়ু পরিবর্তনে কোনো ভূমিকা না রাখলেও এদের অনেকেই আবার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মারাত্বকভাবে ক্ষতির শিকার। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতির মুখে থাকা এসব দেশকে সহায়তার দিকটিকে গুরুত্ব দিতে এবারের জলবায়ু সম্মেলনে এলডিসিভূক্ত দেশগুলোর সংস্থাটির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তার সুযোগ, অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার বিষয়গুলো নিশ্চিত করা একটি চ্যালেঞ্জ হওয়ায় এই সম্মেলনে এলডিসিভূক্ত দেশগুলোর গঠনমূলক ভূমিকা থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে এবছর কপ-২৬ সম্মেলনে এলডিসিভূক্ত দেশগুলোর সভাপতিত্ব করবে ভূটান। সারাবিশ্বে কার্বন নেগেটিভ দেশ হিসেবে পরিচিত ভূটান। দেশটি যে পরিমান কার্বন নি:সরণ করে থাকে তার চেয়ে বেশি কার্বন শোষণ করে থাকে। ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তি অনুযায়ি দেশটি অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কার্বন নিরপেক্ষ থাকার প্রতিশ্রুতি এখনও বহাল রেখেছে। আর সেই প্রতিশ্রুতির ধারাবাহিকতায় দেশটি বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমন হ্রাসে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সব ধরনের আন্দালনে নিজেদেও নেতৃত্ব বজায় রেখে চলছে।
এলডিসিভূক্ত দেশগুলোর এই সংস্থার সভাপতি সোনাম পি ওয়াংড়ি, যিনি ভূটানের জাতীয় পরিবেশ কমিশনের সেক্রেটারি। এটি হিমালয় কন্যা দেশটির পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ সংস্থা। গুরুত্বপূর্ণ এই সংস্থার প্রধান হিসেবে ওয়াংড়ি ভূটানের পরিবেশগত মান নিয়ন্ত্রণ, জাতীয় পরিবেশ কৌশল এবং ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি) সংক্রান্ত যাবতীয় কৌশলপত্র প্রনয়নে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন।
এবারের কপ-২৬ সম্মেলনে এলডিসিভূক্ত দেশগুলোর অবস্থানকী হতে পারে তা নিয়ে সোনাম পি ওয়াংড়ির সঙ্গে কথা বলেছে দ্য থার্ড পোল। পাশাপাশি স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে সহায়তার ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতা, আর্থিক মহায়তা, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রতি সহমর্মিতার ক্ষেত্রে তিনির কী ভাবছেন তা নিয়ে কথা হয়।
দ্য থার্ড পোল: এবারের কপ-২৬ সম্মেলনে উন্নত দেশগুলো অর্থাৎ বিশ্বের সবচেয়ে বড় কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোর উচ্চাকাঙ্ক্ষা বিষয়ে এলডিসিভূক্ত দেশগুলো কী চাইছে এবং কীভাবে নিজেদের দাবীগুলো আদায় করতে পারে?
সোনাম পি ওয়াংড়ি: দেখুন, বর্তমানে এনডিসিতে উল্লেখিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ি বৈশ্বিক উঞ্চতা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে তা কোনোভাবেই নিশ্চিত করা সম্ভব নয়, এমনকি প্যারিস চুক্তির যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে অর্থাৎ ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তা-ও নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা সবাই জানি যে এই বিষয়গুলো আমাদেরবর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জীবন ও জীবিকার জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ। এবারের কপ-২৬ সম্মেলনে সকল পক্ষকে অবশ্যই নতুন এনডিসির মাধ্যমে আরো অধিকতর কার্বন নির্গমন হ্রাসের প্রতিশ্রুতি প্রাদন করতে হবে। আর এই প্রতিশ্রুতিকে অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় বৈশ্বিক যে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে তাতে তাদের ন্যায্য অংশগ্রহনের বিষয়টি প্রতিফলিত হতে হবে, পাশাপাশি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের লক্ষ্যে যে প্রচেষ্টা রয়েছে তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। আর এতে অবশ্যই উন্নত বিশ্ব অর্থাৎ বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোকেই নেতৃত্ব দিতে হবে।
প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর কার্বন নির্গমন হ্রাস সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি। চুক্তি সই করা সবগুলো দেশের প্রতি পাঁচ বছর পর পর এই প্রতিশ্রুতি হালনাগাদ করার কথা।
প্যারিস চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে সকল পক্ষ এই মর্মে সম্মত যে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় নিজেদের প্রচেষ্টা হিসেবে প্রতি পাঁচ বছর পর পর তারা নিজেদের এনডিসি প্রকাশ করবে। এবারের সম্মেলনে আমরা দেখতে চাই যে এনডিসির জন্য একটি পাঁচ বছর অন্তর সময়কাল নির্ধারণ করা যেটি প্যারিস চুক্তির পাঁচ বছরের সময়কালকে অনুসরণ করবে এবং এই লক্ষ্যমাত্রা যাতে সামনের দিনগুলোতে আরো বাড়ে সেটি নিশ্চিত করা।
স্বল্পকালীন নানা পদক্ষেপের পাশাপাশি সকল দেশ যাতে এই শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে জাতীয়ভাবে নির্গমন হ্রাসের মাধ্যমে ‘শূণ্য কার্বন’ পর্যায়ে পৌছাতে পারে সে বিষয়গুলো এনডিসিতে উল্লেখ করতে হবে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ধরে রাখতে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্ত:রাষ্ট্রীয় প্যানেল (আইপিসিসি) তার কৌশলপত্রে এটি বেশ পরিস্কারভাবেই নির্ধারণ করে দিয়েছে।
দ্য থার্ড পোল: মহামারির কারনে যে বিলম্ব হয়েছে তার ফলে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন এক ধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে যেসব প্রতিশ্রুতি ছিল তা অনেকটাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। এবারের গ্লাসগো সম্মেলনে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এবং সবচেয়ে বড় কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলো তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা আবারো প্রমান করতে পারবে বলে মনে করেন? এলডিসিভূক্ত দেশগুলোর সাথে সংহতির শর্তে তাদের কী ধরনের নতুন প্রস্তাবনা নিয়ে আসা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
সোনাম পি ওয়াংড়ি: এটা সহজেই বলা যায় যে বৈশ্বিক সংহতি ও সহযোগিতা ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা যথাযথভাবে করা সম্ভব নয়। প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় আগে (একটি প্রতিশ্রুতি করা হয়েছিল) বলা হয়েছিল যে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে প্রতি বছর (জলবায়ু তহবিল হিসেবে) ১০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়া হবে। অথচ যে সহায়তা পাওয়া গেছে তা মোটেও পর্যাপ্ত তো নয়ই বরং সহায়তার এই অর্থ মূলত ঋণ আকারে দেয়া হচ্ছে, এই প্রক্রিয়ায় অভিযোজনের চেয়ে প্রশমনের ক্ষেত্রে জোর দেয়া হচ্ছে। আর যেটুকু অর্থই দেয়া হচ্ছে তা এলডিসিভূক্ত দেশগুলোর যে মাত্রায় পাওয়া উচিত সেভাবে পৌছাচ্ছে না। আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে বিশের ধনী দেশগুলো একটি বিশ^াসযোগ্য পরিকল্পনা প্রনয়নের লক্ষ্যে তাদের দীর্ঘদিনের এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিবে। এটি আসলে কোনো অর্থ সহায়তার পরিমানের বিষয় নয়, এটি মূলত তাদের হারাতে বসা বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনার বিষয়।
যেহেতু এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ শুরু হবে পরবর্তী তহবিল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারনের মধ্য দিয়ে, তাই আমরা দেখতে চাই যে (প্রতি বছর একশ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের যে প্রতিশ্রুতি) পূর্বের করা সেই প্রতিশ্রুতিকে মূল ভিত্তি ধরে সকলের সাথে সকলের অংশগ্রহনের আগ্রহ। পাশাপাশি আমরা চাই উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রকৃত চাহিদা নিরুপনে বিজ্ঞানকে মাথায় রেখে যেন পরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
দ্য থার্ড পোল: এবারের কপ-২৬ সম্মেলনে এলডিসিভূক্ত দেশগুলোর সাথে সংহতিকে ঘিরে আস্থা পুনরুদ্ধার করতে উন্নত দেশ এবং বড় বড় নির্গমনকারীদের ব্যর্থতার সম্ভাব্য ফলাফল কী?
সোনাম পি ওয়াংড়ি: কপ-২৬ সম্মেলনে যে সিদ্ধান্তগুলো নেয়া প্রয়োজন তা জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপ নির্ধারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আসলে হয় প্রতিশ্রুতি ‘রক্ষা অথবা ভাঙ্গা’র মতো একটি মুহুর্ত। এবারের সিদ্ধান্তগুলো হয় আমাদের প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা এবং স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে আরো এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে অথবা এর মাধ্যমে নতুন কোনো ত্রুটির সৃষ্টি হতে পারে এবং তা এখনন পর্যন্ত গৃহীত প্রচেষ্টাগুলোকে দূর্বল করতে পারে। গ্লাসগো শীর্ষ সম্মেলনের ফলাফল অবশ্যই হতে হবে উচ্চাভিলাসী এবং ন্যায্য।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে ক্ষয়-ক্ষতি (লস অ্যান্ড ড্যামেজ) প্রতিনিয়তই আরো খারাপ হচ্ছে, বিশ্বের বড় নির্গমনকারী ও উন্নত দেশগুলো এখনই কোনো শক্ত পদক্ষেপ না নিলে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে আর্থিক সহায়তার হাত না বাড়ালে এই অবস্থা ধীরে ধীরে আরো নাজুক হতে বাধ্য।
এটি আসলে হয় প্রতিশ্রুতি রক্ষা অথবা ভাঙ্গার মতো একটি মুহুর্ত। এবারের সিদ্ধান্তগুলো হয় আমাদের প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা এবং স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে আরো এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে অথবা এর মাধ্যমে নতুন কোনো ত্রুটির সৃষ্টি হতে পারে এবং তা এখন পর্যন্ত গৃহীত প্রচেষ্টাগুলোকে দূর্বল করতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে এখনই কাজ করা এবং জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থতা অনিবার্যভাবে ভবিষ্যতে বিপর্যয় বয়ে আনাসহ আমাদের চড়া মূল্য দিতে হবে। নির্গমন কমাতে সকল পক্ষের সংহতি ও সহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তনে কারনে প্রয়োজনীয় অভিযোজনে সহায়তাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে সৃষ্ট সকল ধরনের পরিণতি একসাথে মোকাবেলা করাটা এমুহুর্তে একান্ত জরুরী।
দ্য থার্ড পোল: কোভিড – ১৯ মহামারী ও টিকার প্রাপ্যতার ঘাটতির কারনে এবারের কপ – ২৬ সম্মেলনে এলডিসিভূক্ত দেশগুলোর অংশগ্রহন কতটুকু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এবং তা কিভাবে কাটিয়ে উঠা সম্ভব?
সোনাম পি ওয়াংড়ি: আমরা সবাই জানি যে কোভিড – ১৯ এর বিস্তার রোধ করার প্রচেষ্টা সব ধরনের ভ্রমনকে কিছুটা জটিল করে তুলেছে, এবং এবারের সম্মেলনে এই ধরনের জটিলতা উতড়ে যাওয়া অনেকটাই কঠিন। বিষয়টি আমাদের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগজনক। এই সম্মেলনে এলডিসিভূক্ত দেশগুলোর প্রয়োজনীয় উপস্থিতি কম থাকার ঝুঁকি রয়েছে।
সম্মেলনে এলডিসিভূক্ত দেশগুলেঅর প্রতিনিধিদের অংশগ্রহনে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং এসব পদক্ষেপ নেয়ায় আমরা অত্যন্ত খুশী। আমরা মনে করি কপ – ২৬ সম্মেলনে অংশগ্রহনকারী ছাড়াও গ্লাসগোসহ এর বাইরে সবাইকে কোভিড – ১৯ এর ঝুঁকিমুক্ত রাখা প্রয়োজন। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সকল পক্ষের সমন্বয়ে একটি ন্যায্য ও অংশগ্রহনমূলক সম্মেলন। কারণ আমরা (স্বল্পোন্নত দেশসমূহ) জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলকে প্রতিনিধিত্ব করি। তাই সবার মনে রাখা উচিত যে বৈশ্বিক সংকট মোকবেলায় সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে দূর্বল ও ক্ষতির মূখে থাকা জনগোষ্ঠির প্রতিনিধিত্ব থাকা বাঞ্ছনীয়।
দ্য থার্ড পোল: বহু বছর যাবত উন্নত বিশ^ এলডিসিভূক্ত দেশগুলোর কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে কথা বলে আসছে। এলডিসিভূক্ত দেশগুলো কি এখনও এটিকে একটি প্রয়োজন হিসেবে বিবেচনা করছে নাকি এই মুহুর্তে জলবায়ু তহবিলই তাদের জন্য মূখ্য?
সোনাম পি ওয়াংড়ি: দেখুন, সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টি হতে হবে স্থায়িত্বশীল, এবং তা প্রধান করতে হবে বর্ধিত অর্থায়নের পাশাপাশি। সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টি নির্দিষ্ট দেশের চাহিদা ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পরিচালিত হতে হবে।
সক্ষমতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু তহবিল – উভয়ই আমাদের জন্য জরুরী প্রয়োজন। আমরা ঈপ্সিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যে প্রতিশ্রুতি করেছি তা বাস্তবায়নে আমাদের এনডিসি এবং ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান (এনএপি) প্রনয়ন এবং সম্পূর্ণরুপে বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি অন্যান্য জলবায়ু কর্মকৌশলগুলোও বাস্তবায়ন করতে হবে।
দ্য থার্ড পোল: ইউএনএফসিসি আলোচনায় অভিযোজনের উপরে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যদিও এলডিসিভূক্ত দেশগুলোর জন্য কতটুকু অভিযোজন সম্ভব তার একটি নির্দিষ্ট মাত্রা রয়েছে। এবারের গ্লাসগো সম্মেলন এবং তার বাইরেও লস অ্যান্ড ড্যামেজ (ক্ষয়-ক্ষতি) নিয়ে আপনারা কী আশা করছেন?
সোনাম পি ওয়াংড়ি: আমাদের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য বিশেষ করে যারা জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে সবচেয়ে বিপদাপন্ন তাদের কাছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে সৃষ্ট প্রভাবে দুর্যোগ প্রস্তুতি ও মোকাবেলায় অভিযোজন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বলা বাহুল্য যে আমাদের মতো দেশগুলো কার্বন নির্গমনে সবচেয়ে কম ভূমিকা রেখেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ইউনেপ অ্যাডাপটেশন গ্যাপ রিপোর্ট ২০২০ অনুযায়ি দেশগুলো পরিকল্পনায় অনেক এগিয়ে গেলেও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অর্থায়নে একটি বিরাট ফারাক রয়ে গেছে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট বন্যা, খরা বা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো বিভিন্ন দুর্যোগে সুরক্ষা প্রদানে সঠিক ও সময়োপযোগী অভিযোজন প্রক্রিয়াকে একটি বাস্তবিক কার্যকর পর্যায়ে আনার ক্ষেত্রেও কিছুটা ঘাটতি রয়ে গেছে। বর্তমানে, জলবায়ু তহবিলের মধ্য দিয়ে অভিযোজনের চেয়ে প্রশমনকে গুরুত্ব বেশি দেয়া হচ্ছে। আমাদের এখন অভিযোজনে অর্থায়ন প্রয়োজন। আমাদের এখন অবশ্যই একটি ভারসাম্য অর্জন করতে হবে।
বর্তমানে, জলবায়ু তহবিলের মধ্য দিয়ে অভিযোজনের চেয়ে প্রশমনকে গুরুত্ব বেশি দেয়া হচ্ছে। আমাদের এখন অভিযোজনে অর্থায়ন প্রয়োজন। আমাদের এখন অবশ্যই একটি ভারসাম্য অর্জন করতে হবে।
কিন্তু একই সাথে আমরা এটাও জানি যে কতটুকু অভিযোজন সম্ভব তার একটি মাত্রা বা সীমা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এরই মধ্যে আমাদের মতো দেশগুলো নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে পর্যুদস্ত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে আমাদের অর্থনীতি এবং আমাদের জনগণ ক্ষয়-ক্ষতির (লস অ্যান্ড ড্যামেজ) মুখোমুখি। এ মুহুর্তে ক্ষয়-ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সবচেয়ে প্রয়োজন সহযোগিতা যাতে আমরা কোনো জলবায়ু সৃষ্ট দুর্যোগ পরবর্তী ক্ষতি কাটিয়ে উঠে পূনর্গঠন ও পূণরুদ্ধার করতে সক্ষম হই। লস অ্যান্ড ড্যামেজ (ক্ষয়-ক্ষতি) মোকাবেলায় প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট অর্থায়ন। এবারের কপ – ২৬ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে এই আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতির অগ্রগতি আসতেই হবে।
অনুবাদ: মোর্শেদা আক্তার পরী