আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করার সিদ্ধান্তের নিয়ে দক্ষিণ এশীয় প্রজাতির জন্য নতুন একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী বাণিজ্য সম্মেলন। ১৪ থেকে ২৫ নভেম্বর পানামা সিটিতে অনুষ্ঠিত, বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদের বিপন্ন প্রজাতির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংক্রান্ত কনভেনশনের এটি ছিল 19তম সম্মেলন যা কপ-১৯ নামে পরিচিত। ২২ বছর বিরতির পর এই কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো এবার ল্যাটিন আমেরিকায় আলোচনায় বসলো।
এবাররে সম্মেলনে মূল সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে হাঙ্গর প্রজাতির ব্যাপক সম্প্রসারনের কারনে নতুন করে আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবস্থায় এই প্রজাতিটির বাণিজ্যে নিয়ন্ত্রণ আরোপ, যার অর্থ হচ্ছে এখন থেকে হাঙ্গরের পাখনার বাণিজ্যিক ব্যবহারে নিয়ন্ত্রন আরোপ, ২২ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো গানের পাখিদের জন্য প্রথম নতুন সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহন এবং সরীসৃপ এবং উভচর প্রাণী যেগুলো পোষা প্রণী হিসেবে ক্রয়-বিক্রয় করা হয় তার উপরে বিধিনিষেধ আরোপ করা।
CITES বা বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদের বিপন্ন প্রজাতির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংক্রান্ত কনভেনশন হল একটি বৈশ্বিক চুক্তি যা প্রথম স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। ১৮৩টি দেশসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই কনভেনশনের স্বাক্ষলকারী। CITES এর লক্ষ্য হচ্ছে এর পরিশিষ্টে অন্তর্ভুক্ত সব ধরনের বন্য প্রানী এবং উদ্ভিদ প্রজাতি যাতে বিলুপ্তির পথে না যায় তা নিশ্চিত করতে এগুলোর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রন বা নিষিদ্ধ করা।
এর পরিশিষ্ট – ১-এ সবচেয়ে বেশি হুমকির সম্মুখীন বন্য প্রাণী এবং উদ্ভিদের নাম তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। আর এই ধরনের প্রজাতির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সাধারণত নিষিদ্ধ। আর পরিশিষ্ট-২ এ এমন সব প্রজাতিগুলোকে তালিকাভূক্ত করা হয়েছে যেগুলো বাণিজ্য দ্বারা হুমকির সম্মুখীন হতে পারে যদি নিয়ন্ত্রিত না হয়। এই প্রজাতির বাণিজ্যের অনুমতি তখনই দেয়া হয় যখন রপ্তানিকারক দেশ নিশ্চিত করে যে নমুনাগুলি বৈধ এবং টেকসই উপায়ে সংগ্রহ করা হয়েছে।
গান পাখিদের জন্য নতুন সুরক্ষা
এবারের CITES কপ ১৯-এ অংশ নেয়া সরকারী প্রতিনিধিরা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুটি গান গাওয়া পাখির আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উপরে কঠোর নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর একটি হচ্ছে সাদা রঙের শ্যামা, যা দক্ষিণ ভারত থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত পাওয়া যায়। এটি CITES-এর পরিশিষ্ট-২ তে যুক্ত করা হয়েছে, যার অর্থ হলো এর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রিত হবে। আর অপরটি হচ্ছে খড়ের মাথাওয়ালা বুলবুল, যার আবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিক্ষিপ্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে। এটি পরিশিষ্ট ২ থেকে পরিশিষ্ট ১-এ স্থানান্তরিত হয়েছে, অর্থাৎ এখন থেকে এই পাখিটির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষিদ্ধ করা হলো।
উভয় প্রজাতির পাথিরই যথেষ্ট বাণিজ্যিক চাহিদা রয়েছে, বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়ায়। বুলবুল একটি অত্যন্ত সুন্দর পাখি যেটি আনন্দদায়ক গানের জন্য বিখ্যাত। আর একারনেই হয়ত এই পাখিটি এখন পৌছে গেছে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। আর একই অবস্থা ।শ্যামা পাখির, এর সংখ্যা এখন অনেক হ্রাস পেয়েছে।
এই সম্মেলনে মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি দলের প্রধান ছিলেন ডা. ফারাহ শামিন মোহাম্মদ আশ্রে। এই দলটি উভয় প্রস্তাবের সহ-প্রবক্তা ছিলেন। দ্য থার্ড পোলকেফারাহ শামিন বলেন, এই অঞ্চলে একটি বিশাল পাখির ব্যবসা রয়েছে এবং এটি এখন মালয়েশিয়ার পাখিদের প্রভাবিত করছে। এই ঘটনা [চোরাচালানকৃত পাখি] প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ঘটছে, এবং আমরা তা দেখতে পাচ্ছি। এই তালিকাটি সেই বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করারই প্রথম পদক্ষেপ। সাম্প্রতিক প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ি ইউরোপের পাখির বাজারে সাদা-কাঁটা শামা পাওয়া গেছে। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রেঞ্জের বাইরে। এর অর্থ হচ্ছে পাখিটি এরই মধ্যে বাণিজ্যের হুমকিতে রয়েছে।
হুমকির মুখে ভারতীয় সরীসৃপ প্রজাতি
স্থানীয় সরীসৃপদের কঠোরভাবে সুরক্ষার লক্ষ্যে ভারত এবারের কপ ১৯-এ তিনটি প্রস্তাব পেশ করেছে। জয়পুর ইন্ডিয়ান টিকটিকি, লাল-মুকুটযুক্ত কচ্ছপ এবং লেইথের সফটশেল কচ্ছপ – এই তিনটি প্রজাতি পৃথিবীতে আর কোথাও বেঁচে নেই। পরিশিষ্ট ২-তে জয়পুর ইন্ডিয়ান টিকটিকির নাম অন্তর্ভূক্ত করার জন্য ভঅরত সুষ্পষ্ট প্রস্তাব দেয়। এর অর্থ হচ্ছে এই প্রাণিটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য অনুমতির প্রয়োজন হবে – এবং উভয় কচ্ছপ প্রজাতিই পরিশিষ্ট – ২ থেকে পরিশিষ্ট – ১এ স্থানান্তর করার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে যার অর্থ এই ধরনের প্রজাতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য এখন থেকে নিষিদ্ধ হলো। ভারতের এই প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। জয়পুর ভারতীয় টিকটিকি ভারতের ইষ্টার্ণ ঘাটের কয়েকটি স্থানে বাস করে এবং এটি অত্যন্ত সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা গিয়েছে যে এটি পোষা প্রাণী হিসাবে বিক্রি হচ্ছে। আর কচ্ছপের উভয় প্রজাতিই গুরুতরভাবে বিপন্ন, এবং অবৈধভাবে পোষা প্রাণী, খাদ্য এবং ঔষধ হিসাবে আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রয় হচ্ছে।
মিঠা পানির কচ্ছপদের অধিকতর সুরক্ষার জন্য এই সম্মেলনে আনা মোট ১২টির মতো প্রস্তাব ছিল ভারতের। খোলা আলোচনার সময় কচ্ছপ সম্পর্কিত সবগুলো প্রস্তাব সমর্থন করার আহ্বান জানিয়ে, ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটির আন্তর্জাতিক নীতির ভাইস প্রেসিডেন্ট স্যু লিবারম্যান বলেন, কচ্ছপ বিশ্বের সবচেয়ে হুমকির সম্মুখীন মেরুদণ্ডী গোষ্ঠীর প্রাণীর মধ্যে একটি। লিবারম্যান বলেন, “কেবলমাত্র বাণিজ্যের স্বার্থে অস্থিতিশীল এবং অবৈধভাবে এই প্রাণীগুলো শিকার করার কারনে এই প্রজাতিগুলো দিন দিন বিলুপ্তির দিকে ধাবিত হচ্ছে। আর বিপন্ন প্রানীদের এই ধরনের হুমকি থেকে রক্ষা করতেই মূলত CITES কাজ করে। এসময় ভারতের ১২টি প্রস্তাবই সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।
হাঙ্গরের পাখনার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট আইনের পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত
কপ ১৯ এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে ছিল হাঙ্গর ও রে (এক ধরনের সামুদ্রীক মাছ) মাছকে পরিশিষ্ট-২এ সংযুক্ত করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে এই প্রজাতির প্রাণী আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাণিজ্যের জন্য বিধি নিষেধ আরোপিত হবে।
পানামা, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কাসহ আরো ৩৭টি দেশ ৫৬ প্রজাতির হাঙ্গরকে (চারচারহিনিডে পরিবার) পরিশিষ্ট ২-এ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেয়। এতে বলা হয় যে এই প্রজাতির প্রায় ৬৮ শতাংশই বিলউপ্তির হুমকিতে রয়েছে যার মধ্যে অন্যতম নীল হাঙ্গর এবং রিফ হাঙ্গরের মতো সুপরিচিত প্রজাতি। সারাবিশ্বে হাঙ্গরের যে বাণিজ্য বিদ্যমান তার ৮৫.৫ শতাংশই রিকুয়েম হাঙ্গর ঘিরে হয়ে থাকে। উল্লেখিত প্রস্তাবে ১২টি বিশেষভাবে বিপন্ন প্রজাতির কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয় যে যেহেতু হাঙ্গরের পাখনা এবং মাংস সনাক্ত করা খুব কঠিন, তাই এই প্রজাতিগুলিকে কার্যকরভাবে সুরক্ষিত করার জন্য এই প্রজাতির সব ধরেনর হাঙ্গরের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করা অতীব জরুরী।
জাপান এবং অন্যান্য দেশের বিরোধিতা সত্ত্বেও এবং নীল হাঙ্গরকে বাদ দেয়ার জন্য পেরু থেকে পরামর্শ দেয়া হয়। তবে পানামায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অংশ নেয়া সবগুলো দেশ সব ধরনের রিকুয়েম হাঙ্গরের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের পক্ষেই ভোট দেয়। এছাড়াও ভোটের মাধ্যমে এই তালিকায় যুক্ত হয় হ্যামারহেড হাঙ্গর পরিবার। পাখনার জন্য এই প্রজাতির হাঙ্গরের বাণিজ্য হয়ে থাকে। এদেরকে পরিশিষ্ট-২ তে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এই উভয় পরিবারের বেশিরভাগ প্রজাতিকে বিপন্ন বলে মনে করা হয়।
পানামার পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র উপদেষ্টা এবং কপ ১৯ এর প্লেনারির সভাপতি শার্লি বাইন্ডার বলেন, আমরা অত্যন্ত খুশি কারণ সারাবিশ্ব এখন হাঙ্গর সংরক্ষণের জন্য দাবী তুলেছে। এটি প্রকৃতির একটি বড় শিকারী যা আমাদের বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখে। এটি উপকূলীয় সম্প্রদায়গুলোর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
হংকং ভিত্তিক বেসরকারী সংস্থা ব্লুম অ্যাসোসিয়েশন মেরিন প্রোগ্রাম ডিরেক্টর স্ট্যান শিয়া দ্য থার্ড পোলকে বলেন, এবারের কপ সম্মেলন সামুদ্রিক প্রানী সংরক্ষণকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে, শুধুমাত্র তালিকার সাথে নয় বরং এটি বাস্তবায়নে প্রক্রিয়াও পরিস্কার করা হয়েছে। এখন CITES-এ আরও প্রজাতি তালিকাভুক্ত হওয়ায়, আমরা লেনদেন কতটা হচ্ছে তার নির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত পেতে পারি যার ফলে গবেষকরা এর বাণিজ্য সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাবেন। এরপর আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে কিভাবে এই বিধিনিষেধ যখাযথভাবে বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ করা যায় যা হতে হবে টেকসই এবং আইনী বাধ্যবাধকতাপূর্ণ।
এবারের কপ ১৯-এর যতো অসফল প্রস্তাব
তবে এই কপ সম্মেলনে -এ আনা সব প্রস্তাবই গৃহীত হয়েছে তা নয়। ভারত এবং নেপাল পরিশিষ্ট ২ থেকে উত্তর ভারতীয় রোজউড (ডালবের্গিয়া সিসু) প্রজাতিটি মুছে ফেলার প্রস্তাব দেয়। এর অর্থ হচ্ছে এই প্রজাতির বৃক্ষ থেকে তৈরি পণ্যগুলো কোনো অনুমতি ছাড়াই আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবসা করা যেতে পারে। দক্ষিণ এশীয় বৃক্ষের মধ্যে অনেকগুলোই হুমকির মুখে পড়েনি। তবে ২০১৬ সালে ডালবার্গিয়া জেনাস পরিশিষ্ট ২-এ অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেসময় CITES সংশ্লিষ্টরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে রোজউডের প্রজাতির মধ্যে পার্থক্য করা কিছুটা কঠিন হওয়ায় এগুলো সুরক্ষায় কার্যবর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এর বাণিজ্য নিয়ন্ত্রন করা প্রয়োজন। কারন এগুলো অধিক ব্যবহারে এখন হুমকির সম্মুখীন।
পানামায় ভারতের আরেকটি প্রস্তাবে যথেষ্ট যুক্ততর্কের অবতারনা হয়। আর সেটি ছিল ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ প্রজাতি নিয়ে যার নাম নর্থ ইন্ডিয়ান রোজউড। এটি একজাতীয় সুগন্ধিযুক্ত বৃক্ষ যা থেকে আসবাবপত্র তৈরি করা হয়। ভারতের বক্তব্য, এর সাথে হুমকিতে থাকা অপর একটি বৃক্ষের সাদৃশ্য থাকার কারনে এই প্রজাতির বৃক্ষকে CITES-এর নিয়ন্ত্রনের মধ্যে রাখা হয়েছে। অথচ এটি হুমকিতে থাকার মতো কোনো বৃক্ষ নয়। নর্থ ইন্ডিয়ান রোজউডের উপরে বিধিনিষেধ থাকায় এই বৃক্ষটির উপরে নির্ভরশীল মানুষ যারা কুটিরশিল্পের সাথে জড়িত তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে দাবি করে ভারত। কিন্তু এই দুই প্রজাতির বৃক্ষের মধ্যে পার্থক্য নিরুপন করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য এবং যারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত তাদের এই বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান নেই বলে মন্তব্য করে ইইউ এবং কানাডা। যথেষ্ট যুক্ততর্কের পর ভারতের এই প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে বাতিল হয়ে যায়।
সম্মেলনে থাইল্যান্ডের আনা একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে বাতিল বলে গন্য করা হয়। এটি ছিল সিয়ামিজ ক্রোকোডাইল (এক ধরনের কুমির) সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব। এই ধরনের কুমির বেচাকেনা ও আমদানী-রপ্তানীর কারনে বন্য কুমিরের উপর কোনো প্রভাব পড়বে না বলে দাবী করে থাইল্যান্ড। তবে থাইল্যান্ডের এই প্রস্তাবটি পুরোপুরি ভোটে নাকচ হয়ে যায। বলা হয়, এই ধরনের প্রানীর সংখ্যা প্রাকৃিতকভাবে এতটাই স্বল্প যে প্রজাতিটি টিকিয়ে রাখতে বিধিনিষেধ বা নিয়ন্ত্রন থাকাটা প্রয়োজন।
বনরুইয়ের আঁশ ব্যবহার নিষিদ্ধের আহ্বান
২০১৬ সাল থেকেই সব ধরনের প্যাঙ্গোলিন প্রজাতিকে CITES-এর পরিশিষ্ট-১-এ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে যার অর্থ হচ্ছে এই প্রানী বা এর শরীরের যে কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বাণিজ্যিক ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। প্যাঙ্গোলিন বা বনরুই বিশ্বের একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী যাদের মাংস এবং আঁশ উভয়ের জন্যই হত্যা করা হয় এবং এটি চীনে ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
চীনে, প্যাঙ্গোলিনের আঁশ এখনও বৈধভাবে প্রথাগত ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। শুধুমাত্র ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে প্রায় ৬০০,০০০ প্যাঙ্গোলিন অবৈধভাবে লেনদেন হতে পারে মনে করা হয়। এর অর্থ হচ্ছে এই ধরনের অবৈধ শিকার বা ব্যবহার বন্ধে যেসব বিধিনিষেধ রয়েছে তা কার্যকর নয়। এ ব্যাপারে জোর উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাজ্য প্যাঙ্গোলিন বা বনরুইয় উপর CITES রেজোলিউশনে এর যে কোনো বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের আহ্বান জানায়। পাশাপাশি যেসব দেশে বনরুই রয়েছে সেসব দেশকে স্থানীয় বাজারে এর বিক্রি বন্ধসহ চোরা শিকার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনেরও আহ্বান জানানো হয়।
চীন এই প্রস্তাবের বিরোধীতা করে বলে যে স্থানীয় বিষয়গুলো CITES এর সুযোগের বাইরে রাখা উচিত। তবে শেষ পর্যন্ত বনরুইয়ের ব্যাপারে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত ভোটের মাধ্যমে গৃহীত হয়।
CITES তালিকার মানদণ্ড: কীভাবে সিদ্ধান্ত হয় কোন প্রজাতি রক্ষা করা হবে?
CITES কপ ১৯-এ অনেক বিষয় নিয়েই বিতর্ক হয় যা মূলত বিভিন্ন প্রজাতির সংরক্ষনের পাশাপাশি সাম্রগ্রীকভাবে কনভেনশনকে প্রভাবিত করে। এমনই একটি বিষয় এবারের সম্মলনে বেশ আলোচিত হয় যেটি ছিল CITES পরিশিষ্টে বিভিন্ন প্রজাতি অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করা।
বতসোয়ানা, কম্বোডিয়া, এসওয়াতিনি, নামিবিয়া এবং জিম্বাবুয়ে CITES-এর মানদণ্ড পরিবর্তনের প্রস্তাব করে। তাদের মতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য একটি প্রজাতির বিলুপ্তির প্রাথমিক চালক হতে পারে যেটি CITES পরিশিষ্টে অন্তর্ভুক্তির মাপকাঠি হতে পারে। পাশাপাশি জীবিকা এবং খাদ্য নিরাপত্তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে এমন কারনগুলোকেও CITES সুরক্ষার আওকায় আনা যেতে পারে বলে প্রস্তাব করা হয়।
অনেকেই এই ধরনের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে যুক্তি স্থাপন করে। তাদের মতে এটি হবে কনভেনশনের মৌলিক নীতির বিপরীত। কারন পরিশিষ্ট -১ এ সমস্ত বিপন্ন প্রজাতির জন্য প্রযোজ্য হবে যা “বাণিজ্য দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে” এবং সেই পরিশিষ্ট II অনিয়ন্ত্রিত বাণিজ্য দ্বারা হুমকির সম্মুখীন হতে পারে এমন সমস্ত প্রজাতি অন্তর্ভুক্ত করবে। শেষ পর্যন্ত, প্রস্তাবটি ভোটের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যান করা হয়; চীন, ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ এবং ভুটান সবাই এটি গ্রহণের পক্ষে ভোট দেয়।