নকশী -কাঁথাটি বিছাইয়া সাজু সারারাত আঁকে ছবি,
ও যেন তাহার গোপন ব্যথার বিরহিয়া এক কবি
জসীমউদ্দিন, নকশী কাঁথার মাঠ
১৯২৯ সালে বাংলার পল্লী কবি জসীমউদ্দীন তাঁর “নকশী কাঁথার মাঠ” কাব্যগ্রন্থে যে ‘গোপন ব্যাথার’ কথা লিখেছিলেন, আজ ১০০ বছর পরেও সেই বেদনার কথা যেন মূর্ত হয় সুই-সুতোয় গাঁথা নকশী কাঁথার প্রতিটি চিত্রের বাঁকে বাঁকে। গ্রাম বাংলার নারীদের ব্যবহৃত পুরোনো শাড়িতে সুই আর সুতোয় বোনা সূচিকর্মের এই বিশেষ শিল্পটি বহু শতাব্দী ধরে বাংলার নারীদের সুখ-দুঃখ প্রকাশের একটি মাধ্যম।
৬০ বছরের বৃদ্ধা শম্ভারীর জীবনটি কেবলই শুধু দুঃখ আর চরম কষ্টের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছেন। সুই – সুতো আর সেলাইয়ের মাধ্যমে নকশী কাঁথার ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলার মতো শত গল্প রয়েছে তার জীবনে। জানতে চাইলে এই প্রতিবেদককে শম্ভারী বলেন, “আমার নামের অর্থ হচ্ছে একজন ধনী নারী”। এরপর প্রমত্তা যমুনার দিকে তাকিয়ে বলেন, “একসময় আমার যা ছিল, তা সবই ভাসিয়ে নিয়েছে এই নদী”।
বৃদ্ধা শম্ভারীর বাড়ি ছিল বাংলাদেশের জামালপুর জেলার দক্ষিণ গিলাবাড়ি গ্রামে। গত ২০ বছরে তিনবার প্রমত্তা যমুনা কেড়ে নিয়েছে তার বাড়ি। গ্রাস করেছে শেষ সহায়-সম্বলটুকু। কিন্তু জীবন চলে তার আপন গতিতে। তাই কিছুটা ভালো থাকার আশায় চলে যান নদীর অন্য পাড়ে। নদীর এই পাড়েও ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। একটা সময় ছিল যখন সে সুই-সুতোয় নকশী কাঁথা সেলাইয়ের কাজ করে কিছুটা অর্থ উপার্জন করতেন। কিন্তু এখন আর আগের মতো দৃষ্টিশক্তি নেই। তাই আয়-উপার্জন বলতে গেলে থিতিয়ে পড়েছে।
গ্রাম বাংলার নারীরা, বিশেষ করে যারা নদী তীরে এবং নদীর বুকে ছোট-বড় চরে বসবাস করে, তারা প্রায় ৫০০ বছর ধরে নিজেদের জীবন সংগ্রাম, দু:খ-বেদনা, আকাঙ্ক্ষা এবং অনুভূতিকে নকশী কাঁথায় সেলাই করে ফুটিয়ে তোলার কাজটি করে আসছে। নিজেদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব আর পাড়া-প্রতিবেশীরা একত্র হয়ে বেশ কিছু পুরানো শাড়ি একসাথে নিয়ে একটি যৌথ শিল্পের চর্চা করত। তারা তাদের অবসরের সময় যৌথভাবে সূঁচিকার্যের এই শিল্প চর্চা করতো।
এই শিল্পকর্মের মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের চারপাশের সবকিছুর দৃশ্য আর গল্প ফুটিয়ে তুলতো। এই ধরনের চিত্রকর্মের মধ্যে বিশেষ করে স্থান পেত পাখি, নৌকা, গাছপালা, বেদে আর কৃষকদের জীবনের গল্প। কখনও কখনও নকশি কাঁথায় অতিপ্রাকৃত, পৌরাণিক ও ধর্মীয় কাহিনীও ফুটিয়ে তোলা হতো। আবার নারীরা অনেক সময় তাদের একাকী জীবনের কষ্টের কথাও ফুটিয়ে তুলতেন কারুকাজের মধ্য দিয়ে। বিশেষ করে স্বামী বা সন্তান যখন কাজের খােঁজে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ যাত্রা করতো, তখন নারীর একাকীত্মের বেদনা, আবার আপনজনের গৃহ প্রত্যাবর্তনের তীব্র আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশও এই শিল্পকর্মে ফুটিয়ে তুলতো। শত বছর ধরে চলে আসা নকশী কাঁথার এসব উপজীব্য এখনও বহমান রয়েছে।
“অন্যান্য সব ধারার লোকশিল্পের মতো নকশী কাঁথার এই শিল্পটি পরিবর্তিত হয়েছে পরিবেশ-পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে, তবে পরিবর্তনের মধ্য দিয়েও এই শিল্পটির যেমন অনন্য স্বকীয়তা রয়েছে, তা যেন আরো বিকশিত হয়েছে,” নকশী কাঁথা শিল্প নিয়ে এমন মন্তব্য করেন পারভীন আহমেদ। তিনি একজন সমাজ কর্মী, গবেষক এবং শিল্পকলার বিশিষ্ট অনুরাগী। তিনি তার “লিরিক্যাল এম্ব্রয়ডারি” (নান্দনিক সূচিকর্ম) বইতে এভাবেই নকশী কাঁথাকে বিশ্লেষণ করেছেন।
নকশী কাঁথা বুননের প্রক্রিয়াটিতে এক ধরনের দলগত প্রচেষ্টা লক্ষ্যনীয়। যারা কাঁথা বুননের কাজ করেন, তারা বুননের জন্য প্রয়োজনীয় শাড়িগুলোকে একসঙ্গে ছড়িয়ে দেয়। এরপর তারা যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেয় শাড়ির মূল অংশটি কোন দিক থেকে শুরু করাহবে। এরপর খেজুর গাছের কাঁটা দিয়ে কাপড়টি একত্রে আটকে দেয়। সারা দেশেই খেজুর গাছ পাওয়া যায় বাংলাদেশে। কাঁটা দিয়ে শক্ত করে মাটির সাথে শাড়িগুলোকে আটকে দেয়া হয় যাতে ক্যানভাস হিসেবে শাড়িগুলো একত্রে ধরে রাখা যায়। এরপর শাড়ির কিনারাগুলির চারপাশে একটি দীর্ঘ সেলাই করা হয় যা পরে তুলে ফেলা হয়। এরপর নকশার একটি থিম বা বিষয় নির্ধারণ করা হয় যৌথভাবে। তারপর একটি কলম, পেন্সিল বা চকের টুকরো দিয়ে প্রাথমিকভাবে নকশাটি আঁকা হয়। আর তারপরই শুরু হয় সূচিকর্ম।
কুটির থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন
শম্ভারীর পাড়ার অল্পবয়সী নারীরা ঐতিহ্য পরিপূর্ণ এই শিল্পের চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ধীরে ধীরে এই শিল্পে পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে।
দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বচ্ছল এবং উচ্চবিত্তদের চাহিদার প্রেক্ষিতে গত ৪০ বছর ধরে নকশী কাঁথার প্রসার ক্রমাগত বাড়ছে । শাড়ি আর কামিজ থেকে শুরু করে পর্দা, বিছানার চাদর, টেবিলম্যাট এবং কুশন কভারের ডিজাইনও এখন নকশী কাঁথার কলা ফুটিয়ে তোলা হয়। কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট, একটি দাতব্য সংস্থা যা হস্তশিল্পসহ বিভিন্ন ধরনের কারুপণ্য বিক্রির মাধ্যমে আয়ের পথ সুগম করেছে। ২০২১ সালে তাদের দেয়া এক তথ্যে বলা হয়, বাংলাদেশে নকশী কাঁথার বাজার প্রতি বছরে প্রায় ১২০ কোটি টাকা (১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। এটি বছরে প্রায় ১৫% বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেসরকারী সংস্থা ব্র্যাক-এর সামাজিক উদ্যোগ আড়ং এবং কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের মতো প্রতিষ্ঠানের বিকাশের ফলে নকশী কাঁথার বাণিজ্যিক উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে।
বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন, বাংলাদেশ লোকশিল্প ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা এ কে এম আজাদ সরকারের মতে, দেশের প্রায় ৩০০,০০০ মানুষ এই শিল্পের সাথে জড়িত; আর এদের মধ্যে ৯৯% কর্মীই হচ্ছ নারী।
এই প্রতিবেদনটি লিখতে গিয়ে আমি বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রমন করেছি। আমি এই শিল্পের সাথে জড়িত অনেক নারীর সাথে কথা বলার সময় জানতে পেরেছি যে তারা এখন এই কাজ করে মোটামুটি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে, কেউ কেউ বলেছেন এর মাধ্যমে তাদের পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা আসতে শুরু করেছে। আর যেহেতু এই শিল্পের কেন্দ্রে রয়েছে নারীরা, তাই আর্থিক উপার্জনের সাথে সাথে পরিবার ও সমাজে নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহনের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, উত্তরণ ঘটছে নারীর ক্ষমতায়নের।
জামালপুরের বাসিন্দা সাহেরা নকশী কাঁথার ব্যবসা করেন। তিনি বলেন, “আমার ব্যবসার শুরুতে আমি প্রতি মাসে প্রায় ১২,০০০ – ১৫,০০০ টাকা [১১৫ – ১৪৫ মার্কিন ডলার] আয় করতাম, কিন্তু এখন আমি ২৫,০০০ – ৩০,০০০ টাকা আয় করি [২৪০ থেকে ২৯০ মার্কিন ডলার]। সাহেরার অধীনে কাজ করা নারী কারিগরেরা প্রতিটি নকশী কাঁথার জন্য ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করেন (৩ থেকে ৪ মার্কিন ডলার)।
জামালপুরে, অনেক নারীর পক্ষে এটি সম্ভব হয়েছে কারণ তাদের রয়েছে প্রচুর নিয়মিত গ্রাহক। ব্র্যাকের আড়ং, আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনের (এএএফ) মাধ্যমে নকশী কাঁথা সংগ্রহ করে থাকে। তাদের রয়েছে জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রোডাকশন হাউস। এএএফ-এর সিনিয়র সেন্টার ম্যানেজার শ্যামল কুমার দাস এই প্রতিবেদককে বলেন, এক বছরে এটি প্রায় ৩,৬০০টি নকশি কাঁথা তৈরি করে।
“গ্রামীণ এলাকার নারীরা সমগ্র জামালপুর জেলা জুড়ে ৮৪টি সাব-সেন্টারে এএএফ-এর জন্য কাজ করে। শ্যামল দাস বলেন, এই সংস্থাটি তাদের কর্মীদের “চিকিৎসা ও অন্যান্য সুবিধা” প্রদান করে।
নারীরা এখনও সূচিকর্মের কাজটি একসঙ্গে করে থাকে, তবে তারা নতুন ফ্যাব্রিক ব্যবহার করে এবং পেশাদার শিল্পীদের ডিজাইন অনুসরণ করে।
যশোর, ময়মনসিংহ এবং রাজশাহীতে যারা কাজ করে তাদের সাথে কথা বলার সময় বুঝতে পেরেছি যে তারা এখনও যথেষ্ট পরিশ্রমের সাথেই এই কাজটি করে থাকে।
নকশি কাঁথার বাণিজ্যিক শিল্পী
কিছু নকশি কাঁথা এতটাই সুন্দর যে সেগুলো উত্তরাধিকারের পর্যােয় চলে যায়। কিন্তু বাংলাদেশের তাপ ও আর্দ্রতায় কটনের তৈরি কাপড় সংরক্ষণ করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্প ইতিহাসবিদ শাওন আকন্দ বলেন, “নকশী কাঁথার মতো শিল্প বাংলাদেশের আর্দ্রতায় স্বাভাবিকভাবেই টিকে থাকে না। আসলে আমাদের সংরক্ষণ প্রক্রিয়াগুলো বেশ প্রাচীন”।
এখন আরেকটি বড় শক্তি আছে যা মানুষকে তাদের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। সেটি হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। এর ফলে ঘন ঘন এবং ভয়াবহ বন্যা মানুষকে তাদের নদী তীরবর্তী বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য করে, এবং আর এর মধ্য দিয়েই অনেকেই এই শিল্পটি উত্তরাধীকারের মতোই দিনের পর দিন এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মের কাছে হাত বদল করছে।
কবিতা বেগম বর্তমানে যমুনা নদীর বুকে একটি চরে বসবাস করেন। ২০২০ সালে জামালপুরে বন্যায় আরো ২০০০ পরিবারের সাথে নদী ভাঙ্গনে নিজেদের বাড়ি হারিয়ে তারা বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ে।
শৈশবে, তিনি তার মা এবং খালাদের অবসর সময়ে নকশী কাঁথা বুননের কাজ করতে দেখেছেন। তারা মূলত শীতকালে গরম কাপড় হিসেবে এগুলো ব্যবহার করতেন। তিনি বলেন, “আমার বিয়েতে আমার মা একটি কাঁথা উপহার দিয়েছিলেন। তবে ১৫ থেকে ১৬ বছর আগে এক বন্যায় আমাদের বাড়ি ঘর হারিয়ে যায়। সেসময় আমরা কাঁথাটিও হারিয়ে ফেলি। সেই বন্যার পর আমরা বেঁচে থাকার তাগিদে আরেক স্থানে গিয়ে আবার ঘর বাঁধি। এখনও সেই কাঁথাটির নকশা মনে রাখতে পেরেছেন কবিতা বেগম। তিনি বলেন, মায়ের দেয়া সেই কাঁথাটিতে একটি কুঁড়েঘর, একটি ছোট নৌকা, পাখি, একটি নারকেল গাছ আর একটি কলা গাছের ছবি ছিল”।
নকশী কাঁথায় সূচিকর্মে এখন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও প্রতিফলিত হচ্ছে – বন্যা আর নদী ভাঙ্গনের ফলে গ্রামের মানুষদের বাড়িঘর, জমি এবং গবাদি পশু হারিয়ে যায়; আর কাঁথার চিত্রে তাই ফুটে উঠে বন্যার কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়ার যন্ত্রণার গল্প।
সাহেরা বেগমের মেয়ে এবং পুত্রবধূ এখন একটি দলে কাজ করে যারা নকশী কাঁথার ডিজাইনের ধরনে সালোয়ার, কামিজ, স্কার্ফ এবং অন্যান্য অনেক পোশাক তৈরি করার কাজ করে। তাদের দলনেতা উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে নতুন ফ্যাব্রিক, সুতো, সূঁচ এবং অন্যান্য সরঞ্জাম পেয়ে থাকে এবং তাদের কাছে প্রস্তুতকৃত পন্য বিক্রি করে। বর্তমানে, তাদের প্রতিদিন ৩০০ টাকা (প্রায় ৩ মার্কিন ডলার) প্রদান করা হয়; তারা তাদের নেতার সাথে আলোচনা করছে যাতে এটি প্রতিদিন ৫০০ টাকায় (৫ মার্কিন ডলার) উন্নীত করা যায়।
একটি উন্নত জীবনের আশায় সাহেরা বেগম এবং তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য রাজধানী ঢাকার পাশের জেলা গাজীপুর শহরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, যেখানে তারা পোশাক শিল্পে কাজ পাবার আশা করছেন। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান পোশাক শিল্পে তারা আরও ভাল বেতনের কাজ পাবেন বলে মনে করছেন।
পরিবর্তনশীল অনুশীলনের সাথে সাথে বদলে যায় শিল্পের রূপ
শিল্প ইতিহাসবিদ শাওন আকন্দ বলেন, নকশী কাঁথার বাণিজ্যিক উৎপাদন গ্রামীণ নারীদের গল্প বলার মাধ্যম হিসেবে এর মূল আকর্ষণকে কিছুটা হারিয়েছে। এটি এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যার ফলে নারীরা এখন নকশী কাঁথা প্রডাকশন হাউসে বাণিজ্যিক কারিগর এবং কর্মচারী হিসেবে কাজ করছে।
শহরে গ্রাহকদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে, নতুন ডিজাইনের আবির্ভাব হচ্ছে। বড় শহরের গ্রাহকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে কাঁথার ডিজাইনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে যথেষ্ট পেশাদারিত্বের মাত্রা বজায় রাখতে গিয়ে গ্রাম-বাংলার এই শিল্পের স্বতঃস্ফূর্ততার কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে এই শিল্পটির মধ্যে ঠিক যে অপেশাদার শৈলী ছিল যার জন্য একে অনেক বেশি জীবন্ত মনে হতো – এখন সেই ধরণটি যেন পাল্টে যাচ্ছে। দেশের বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা এই ধারণার সঙ্গ সহমত প্রকাশ করেন। অনেকটাই অপেশাদার হাতে যে অনবদ্য গল্প আগের দিনের নারীরা সেলাইয়ের মাধ্যমে তুলে ধরত – যেমন চলমান সেলাই, ক্রস সেলাই, সাধারণ এবং রৈখিক কাঁথা সেলাই, আজ পেশাদার ডিজাইনের আড়ালে সেই আবেদনটি স্মীত আর অপ্রচলিত হয়ে পড়ছে।
বাংলাদেশ লোকশিল্প ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা এ কে এম আজাদ সরকার বলেন, “আমাদের প্রতিষ্ঠান নকশী কাঁথা সংরক্ষণ, সংগ্রহ ও প্রদর্শনের কাজ করে। ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা নকশ কাঁথা সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ প্রদান করি যাতে স্থানীয় নারীদের ক্ষমতায়ন করা যায়।”
ক্রেতাদের কাছে পুরোনো দিনের সেই অপেশাদার, অপরিপক্ক হাতে আঁকা নকশার চাহিদা থাকলেও, এখনকার নকশী কাঁথার ডিজাইনে স্বতঃস্ফূর্ততার সেই চিত্রটি আর পাওয়া যায়না। অনেক কারিগরের মতে, এর ফলে একটি গতিশীল শিল্পের রুপ পাল্টে যেতে পারে।
তবে এখন কিছু নকশী কাঁথায় নদী ভাঙন ও বন্যা, বাস্তুচ্যুতিসহ বর্তমান বাস্তবতাকে তুলে ধরা হচ্ছে। তবে সেগুলো অবাণিজ্যিকভাবে সেলাই করা হচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এগুলো সংরক্ষণ করা হবে বলে মনে করেন অনেকেই।
কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে