জলবায়ু

আসামে বহু মানুষকে বন্যা থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করছে মাচাঙ ঘর

স্থানীয় একটি বেসরকারী সংস্থা বাড়ির প্রথাগত ডিজাইনে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে যা বিগত প্রায় সাতটি বন্যার ধকল সইতে সক্ষম হয়েছে

বন্যার দিনগুলোতে রতন পাথুরি নিজ বাড়ির বারান্দায় বসে দেখতে পেতেন তার বাড়ির নিচে বন্যার পানি কেমন ঘুরপাক খাচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি দেখতে গত আগষ্টে আসামের গোলাঘাটে দ্য থার্ড পোল সরেজমিনে দেখতে পায় ধাঁনসিড়ি নদীর ভয়াবহতা। এবারের প্রবল বন্যায় ধাঁনসিড়ি নদীর পানিতে ডুবে যায় রতন পাথুরিদের গ্রাম নিকোরি। ভয়াবহ এই বন্যায় ক্ষতি এড়াতে গ্রামের বাসিন্দারা তাদের গবাদী পশু আশেপাশের উঁচু স্থানে সরিয়ে নেয়, অনেককেই বাধ্য হয়ে যেতে হয় আশ্রয় কেন্দ্রে। রতন পাথুরি বলেন, এটি আমাদের প্রতি বছরেরই স্বাভাবিক ঘটনা। প্রতি বছরই  বর্ষা মৌসুমে ধাঁনসিড়ি ফুলে-ফেঁপে উঠে। তবে এ বছর বন্যার সময় আমরা নিজেদের বাড়িতেই ছিলাম এবং স্বাভাবিক অবস্থাতেই ছিলাম।

প্রতি বছর ব্রক্ষ্মপুত্র ও এর শাখা নদীগুলোতে বন্যার ঘটনা ঘটে। ধাঁনসিড়ি নদীটি ব্রক্ষ্মপুত্র নদীরই একটি উপনদী। পাশের প্রতিবেশী রাজ্য নাগাল্যান্ড থেকে উৎসারিত হয়ে ৩৫২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে নদীটি ব্রক্ষ্মপূত্রের দক্ষিণ পাড়ের এসে মিলিত হয়েছে। এই গতিপথে পরিভ্রমনের সময় নদিটি আসামের নিমাঞ্চল যেমন গোলাঘাট অতিক্রম করেছে । প্রতিবছর সেখানে বর্ষা মৌসুমে নদীর পানিতে বন্যার সৃষ্টি হয়।

Raw material is transported via the river. With its tropical monsoon climate, the valley of Assam experiences heavy rainfall and is flooded almost every year. (Image ©SEEDS)
বাঁশের মতো আরো বিভিন্ন কাঁচামাল এই নদীতে পরিবহন করা হয়। ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ুর কারনে আসামে প্রচুর পরিমানে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে যার কারনে প্রতি বছরই এখানে বন্যা সংঘঠিত হয়। (ছবি © SEEDS)

বিপজ্জনক আবাসন

পাথুরি বলেন, সাম্প্রতিক সময়গুলোতে বন্যা আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিমানে সংঘঠিত হচ্ছে এবং তা ক্রমে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। আসামে গত ২৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা সংঘঠিত হয় ২০১৭ সালে। এখানে ছোট ও বড় আকারের বন্যা তা যেমনই ঘটে থাকুক না কেন, আসামের বাসিন্দাদের প্রতিবছরই বন্যার কারনে পানিবন্দী থাকতে হয়।

এই ধরনের প্রাকৃতিক পরিবর্তনের  অন্যতম প্রভাব হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী জলাবদ্ধতা। এর অন্যতম প্রধান কারনগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে নদীর পাড়ের বেড়িবাঁধ নির্মান। এসব বাঁধ ভারী মৌসুমে নদীর পানি ধরে রাখতে পারেনা। ফলে নদী পাড়ের প্লাবনভূমি বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। এতে আরো যে বড় সমস্যা হয় তা হচ্ছে এই বাঁধগুলোর কারনে বন্যা শেষে অতিরিক্ত পানি আবার নদীতে ফিরে যেতে পারেনা। নদীর ধারে প্লাবনভূমিতে নির্মিত প্রথাগত ঘরবাড়িগুলো বন্যার এই পানি মোকাবেলা করতে সক্ষম নয়, ফলে সামান্য বন্যা হলেই ধ্বসে পড়ে।

বেড়িবাঁধ নির্মান এবং প্লাবনভূমিতে ক্রমবর্ধমান কংক্রিট দালানকোঠা ও বসতির গড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে এই অববাহিকা দুর্যোগের জন্য আদর্শ স্থানে পরিণত হচ্ছে
মানু গুপ্ত, সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ইকোলজিকাল ডেভেল্পমেন্ট সোসাইটি

বেসরকারী মানবিক সংস্থা সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ইকোলজিকাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (এসইইডিএস) এর সঙ্গে যুক্ত স্থপতিদের মতে, আসাম প্রাকৃতিকভাবেই অত্যন্ত বন্যা, ঘুর্ণিঝড় ও ভূমিকম্প প্রবন এই অঞ্চল। এসব দুর্যোগের সময় প্রানহানিসহ সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি যেমন বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে থাকে। 

এর অনেকগুলো কারন রয়েছে, যেমন – ভূমি ব্যবহারের অনুমতি লংঘন করে নদীপাড় ও প্লাবনভূমিতে ইমারত নির্মান, দুর্যোগের পূর্বাভাসের অভাব এবং দূর্বল দুর্যোগ প্রস্তুতি যেমন – বেড়িবাঁধ। সেক্ষেত্রে বলা যায় এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে বৃহত্তর এমন সব সমস্যারই একটি অংশ।

Flooded houses in
২০১৭ সালে সংঘঠিত বন্যার সময় আসামের মরিগাঁও জেলায় প্রায়ং নিমজ্জিত একটি বাড়ির পাশে নৌকা চালিয়ে পাড় হচ্ছে কিছু মানুষ। (ছবি: এলামি)

এসইইডিএস-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা অংশু শর্মা বলেন, দেশের সামগ্রীক আবাসন ব্যবস্থার প্রায এক শতাংশই প্রতি বছর দুর্যোগের কারনে বিনষ্ট হয়। দেশীয় এই সংস্থাটি ভারতীয় উপমহাদেশে ১৯৯৪ সাল থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রশমন নিয়ে কাজ করে আসছে। ২০১৭ সাল থেকে সংস্থাটি আসামে ব্যাপকভাবে কাজ করছে।

এসইইডিএস-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা অংশু শর্মা বলেন, আমরা সারা ভারতবর্ষেই দেখতে পাচ্ছি জনগন এমন এমন স্থানে বাড়িঘর নির্মান নির্মান করছে যেসব স্থানে তারা অতীতে নির্মানের জন্য ব্যবহার করতো না। তিনি বলেন, বেড়িবাঁধ নির্মান এবং প্লাবনভূমিতে ক্রমবর্ধমান কংক্রিট দালান কোঠা ও বসতির গড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে এই অববাহিকা দুর্যোগের জন্য আদর্শ স্থানে পরিণত হচ্ছে।

এই পরিস্থিতি আরো অবনতির আশংকা রয়েছে। ২০২০ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, এ মুহুর্তে বিজ্ঞানীদের ধারণা আমামে ব্রক্ষ্মপুত্র অববাহিকায় ভয়াবহ বন্যার মাত্রা ২৪ থেকে ৩৮ শতাংশের উপরে বর্ধিত হতে পারে।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যামন্ট-দোহেত্রি আর্থ অবজারভেটরি পোস্ট ডক্টোরাল গবেষক বিজ্ঞানী এবং উপরে উল্লেখিত গবেষণার মূখ্য গবেষক মুকুন্দ পি রাও বলেন, ব্রক্ষ্মপুত্রের উজানে আমরা শতবর্ষী গাছের রিংগুলো পরীক্ষা করে দেখেছি। এর মাধ্যমে আমরা এই অববাহিকায় বৃষ্টিপাতের ধরণ বুঝার চেষ্টা করেছি। আমাদের গবেষণায় দেখো গেছে যে আমরা একবিংশ শতাব্দীতে আরো তীব্র বর্ষা মৌসুমের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। এর পাশাপাশি বৈশ্বিক উঞ্চায়নের ফলে হিমবাহ গলছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে বর্তমানের চেয়ে আরো ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার  আশংকা রয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা, আসামে একই সময়ে এক মাচাঙ ঘর

যদিও একটি সামান্য গ্রামীন সম্প্রদায়ের পক্ষে বড় বড় সমস্যা মোকাবেলা করা অনেকটাই দূরহ, কিন্তু তাদের পক্ষে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পদক্ষেপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা কিন্তু মোটেই কঠিন কাজ নয় – ঠিক যেমন তারা যে সব বাড়ি ঘরে বসবাস করে সে সমন্ধীয় সমস্যা সামাধান করা। আদিবাসী সম্প্রদায় মিসিং সবসময়ই নিমাঞ্চলবা নিচু এলাকায় বসবাস করে আসছে। আর সেজন্যই তাদের ঘরবাড়িগুলো এসব এলাকায় বসবাস করার জন্য বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অভিযোজন করা হয়েছে, যা বন্যা মোকাবেলায় অনেকটাই সক্ষম। স্থানীয় ভাবে চাঙ ঘর হিসেবে পরিচিত এই সাধারণ বাড়িগুলো বাঁশের মাচাঙ ও মাটির ভীতের মাধ্যমে উঁচু করে বানানো হয়। এটি অস্থায়ী এক ধরনের ব্যবস্থা যা মোটামুটি পাঁচ বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। আসামের যেসব স্থানে ঘন ঘন বন্যা হয় সেখানে এই ধরনের ঘরবাড়ির স্থায়িত্বকাল আরো কিছুটা কমে এসেছে।

পাথুরি একজন স্থানীয় ঘর নির্মাতা যিনি বাঁশ নিয়ে কাজ করেন। তিনিও একসময় এ ধরনের বাড়িতে বসবাস করতেন। তিনি বলেন, আসলে ঘন ঘন বন্যা হলে পাটাতানের নীচে বাঁশ ও মাটিতে পচন ধরে। কারন দীর্ঘ সময় বাড়ির ওই অংশ পানির নিচে থাকে। তিনি আরো বলেন, ২০১৭ সালের বন্যায় অন্যান্য অনেকের মতোই আমার বাড়িতেও বন্যার পানি প্রবেশ করেছিল। সে সময় আমরা পরিবারের সবাই মিলে নৌকায় চড়ে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছিলাম। 

চাঙ ঘর ২.০

এসইইডিএস এর অংশু শর্মা বলেন, ২০১৭ সালের বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করার সময় আমরা দেখতে পেয়েছি যে একই জেলার ভিতরে কিছু কিছু স্থানে অন্যান্য স্থানের চেয়ে বেশি বন্যা হয়েছে। তিনি জানান ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যখন বৃষ্টিপাতের ও বন্যা মৌসুম শুরু হয় তখন থেকে স্থানীয় নির্মান প্রতিষ্ঠান ও কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এসইইডিএস বন্যা সহনীয় উন্নত চাঙ ঘর নিয়ে কাজ করে আসছে, যাতে এই ধরনের ভৌগলিক অঞ্চলে সহজেই ব্যভহার করা যায়।

অংশ শর্মা বলেন, আমারা আমাদের নির্মান এলাকায় বন্যার ধরন নিয়ে গবেষণা করেছি এবং তার ভিত্তিতে ওই এলাকায় চাঙ ঘরগুলো কমপক্ষে তিন ফুট উঁচু করে নির্মান করেছি।

Stilt house, Assam, India,
বাড়ির মালিক নিজের মতো করে তার বাড়ির মূল অংশে যে কোনো ধরনের পরিবর্তন, পরিমার্জন ও সাজাতে পারেন(ছবি: © এসইইডিএস/সিদ্ধার্থ ভেল)

ভারতীয় বহুজাতিক কোম্পানী গোদরেজ ও স্থানীয় এক অংশীদারে সাথে এসইইডিস আসামে কাজ করে যাচ্ছে। এই প্রকল্পের  আওতায় তারা স্থানীয় নির্মান কর্মী যেমন রতন পাথুরিদের নিয়ে আগামী বছরের মধ্যে তারা ৮০টি এই ধরনের বাড়ি নির্মানের পরিকল্পনা করেছে।

এই বাড়িগুলো বাঁশের তৈরি কলামের মাধ্যমে কংক্রিটের ভিতের উপরে নির্মান করা হয়। বাড়ির মালিক চাইলে ঘরের পাটাতান কিছুটা উচু করে নিতে পারেন। এছাড়া আড়াআড়ি করে রাখা বাঁশের ভিত্তির ফলে এই ঘরগুলো বন্যার পানি ও ভূমিকম্পের ধাক্কা মোকাবেলায় অনেকটাই সমক্ষম।

এ ধরনের একটি বাড়ির সবমিলিয়ে ২৩ ঘন মিটার স্থান দখল করে থাকে যা স্ফেয়ার হ্যান্ডবুক বা মানবিক সহায়তাকালীন সময়ে সার্বজনীন মানদন্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন। 

রতন পাথুরি বলেন, “এই বাড়িগুলো আমাদের আগের দিনের পুরোনোর ঘরগুলোর মতো নয়, এখন আমাদের নতুন ঘরগুলো একটি টয়লেট রয়েছে। বন্যার সময় এর ফলে আমাদের জীবন-যাপন আরো অনেক সহজ মনে হয়”।

Stilt house made from bamboo in Assa, India, SEEDS
আসামে মাচাঙ ঘর তৈরি করার সময় স্থানীয় নির্মান শ্রমিকরা প্রচুর পরিমানে বাঁশের ব্যবহার করে থাকে (ছবি: ©SEEDS)
Bamboo wall panels are made to decorate a stilt house, Assam, India, SEEDS
কমিউনিটির লোকজন বাঁশের তৈরি মাঁচা/পাটাতন তৈরি ও প্রতিস্থাপনে একসঙ্গে কাজ করে থাকে (ছবি: ©SEEDS)

স্থানীয়ভাবে পাওয়া অত্যন্ত মজবুত বাঁশ দিয়ে কমিউনিটির অংশগ্রহনের মাধ্যমে তৈরি এসব বাড়ি নির্মানে প্রতিটির জন্য ব্যয় হয় ৭৬০ মার্কিন ডলার। প্রথাগত চাঙ ঘরের নির্মান ব্যয়ের চেয়ে এটি প্রায় ২০ শতাংশ বেশি। এই ধরনের বাড়ির মূল কাঠামোটি তৈরি করতে সাধারনত সাত দিনের মতো সময় লাগে।

রতন পাথুরর মতো উমানন্দ পাথুরিও ২০১৭ সালের বন্যায় নিজের ঘর হারিয়েছে। তিনি এখন রতন পাথুরির বাড়ির পাশেই নিজে একটি চাঙ ঘর নির্মান করে বসবাস করছেন।

তিনি বলেন, আমার এই বাড়িতে আমার স্ত্রী, চার বছরের এক সন্তান এবং আমার বাবা-মার সঙ্গে আমি বসবাস করছি। এই নতুন বাড়িতে আমাদের সবার জন্যই যথেষ্ট স্থান রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে বাড়ির নিচে পাটাতনে তারা নিজেদের তাত বোনার যন্ত্র, গবাদি পশু ও নৌকা রেখে দেয়। আর বর্ষা মৌসুমে এই বাড়িগুলো এমনিতেই যত উঁচু তাতে বন্যার পানি ঘরে প্রবেশ করার কোনো সম্ভাবনাই থাকে না, ফলে বন্যার মধ্যেও তারা বাড়িতে শুষ্ক থাকে।

New design of stilt house, Assam, India,
বাঁশের  তৈরি গভীর ভীত, পানি সহনীয় কলাম এবং প্রথাগত নির্মান কৌশল ব্যবহার করে আড়াআড়িভাবে পাটাতন নির্মানের ফলে এই ঘরগুলো বন্যা ও ভূমিকম্প সহনীয় (ছবি: © SEEDS / Siddharth Behl)

A woman weaves underneath a stilt house, Assam, India,
বাড়ির নিচে উন্মুক্ত স্থানে বাসিন্দারা বিভিন্ন ধরনের কর্মকান্ড পরিচালনা করতে যেমন তাঁত বোনা, গবাদী পশু প্রতিপালন অথবা গড়–দামজাত করার মতো কোনো কর্মকান্ড (ছবি: © SEEDS / Siddharth Behl)

এই ধরনের বাড়িগুলো বন্যা সহনীয় হওয়ায় আশেপাশের আরো ১০টি গ্রামের বাসিন্দারা গত তিন বছর ধরে নতুন ডিজাইনের এই বাড়িগুলো নির্মান করে বসবাস করে আসছে বলে জানান ঊমানন্দ পাথুরি।

আরো প্রতিলিপিযোগ্য মাচাঙ ঘরের নকশা

যদিও এসইইডিএস-এর চাঙ ঘর ২.০ নির্মানের পর থেকে গত সাত বছরের বন্যার মধ্যেও ভালোভাবে টিকে রয়েছে তারপরেও সরকার এসব বাড়িকে কুটচা  বা অস্থায়ি বাড়ি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সরকারের এই সংজ্ঞায় অস্থায়ি বাড়ির বলতে বুঝানো হয় যেসব বাড়ির দেয়াল বা ছাঁদ পোড়ানো নয় এমন ইট, বাঁ, মাটি, ঘাস, খড় এবং অস্থায়ি কোনো বস্তু ও পাথর দ্বারা তৈরি।

ক্রংক্রিটের বাড়ির চেয়ে অস্থায়ি বাড়িকে সামাজিকভাবে একটু নিচুভাবে দেখা হয়। এছাড়াও আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কিছু কুটচা ঘর এতটাই হালকা যে সেগুলো নির্মানে ব্যাংকের কাছ থেকে কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা বা ঋণ পাওয়া যায় না।

এসব কিছু বিবেচনা করে এসইইডিএস এবং তার  সহযোগি সংস্থা প্রাইস ওয়াটারহাইস কুপার ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন আসামের গোলাঘাটের নিকোরি গ্রামে নতুন ধরনের একটি কমিউনিটি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মানের কাজ শুরু করেছে। অংশু গুপ্ত বলেন, “যেহেতু এটি তুলনামূলক বৃহত একটি নির্মানকল্প, আমরা এটি নির্মানের ক্ষেত্রে প্রথাগত বাঁশের সুপার কাঠামোকেই ব্যবহার করছি, তাবে এখানে বাঁশের পরিবর্তে কংক্রিটের ভীত ও কাঠামো ব্যবহার করছি যাতে এই দালানগুলো আরো মজবুত হয় এবং চাপ সামলানোর কআষমতা আরো বেশি থাকে।” নতুন এই ডিজাইনে আমরা পানির জন্য পাইপ লাইন সংযুক্ত করেছি। এই ডিজাইনের আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর আদলে একই ধরনের ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের অন্যান্য এলাকাতেও একই স্থাপনা নির্মান করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, “এই ধরনের ভীতের কারনে আরো উন্নত বাড়িঘর বা স্থাপনা নির্মন সম্ভব এবং তা স্থানীয় শিল্পশৈলী বজায় রেখেই করা সম্ভব।”

Inside a stilt house in Assam, India,
আসামের আবওহায়ার  জন্য আদর্শ এসব বাড়ি কারন এই বাড়িগুলোর বাঁশের তৈরি দেয়ালের মধ্য দিয়ে অনায়াসেই আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে (ছবি: © SEEDS / Siddharth Behl)

যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৃষ্টিপাতসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব বেড়েই চলেছে, তাই অপেক্ষাকৃত দরিদ্র ভৌগলিক অঞ্চলসমূহে বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলে বসবাস করা কমিউনিটির জন্য এ ধরনের স্বল্পব্যয়ে নির্মান করা যায় এসব বাড়ি এক ধরনের অভিযোজন ও প্রশমনের জন্য একটি বিরাট উদাহরণ।

বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় বাড়ির বারান্দায় বসে খেলছিল ঊমানন্দের ছোট্ট শিশু। তিনি বলেন, “এই বাড়িটি আসলেই খুব ভালো। আমি এখন খুব সুখেই আছি।”

A new design of stilt house withstands flooding in Nikori village, Golaghat district, Assam, SEEDS

আসামের গোলাঘাটের নিকোরি গ্রামে সদ্য নির্মিত একটি মাচাঙ ঘর যা বন্যা সহনীয় (ছবি: © SEEDS)

অনুবাদ:  মোর্শেদা আকতার পরী

Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.

Strictly Necessary Cookies

Strictly Necessary Cookie should be enabled at all times so that we can save your preferences for cookie settings.

Analytics

This website uses Google Analytics to collect anonymous information such as the number of visitors to the site, and the most popular pages.

Keeping this cookie enabled helps us to improve our website.

Marketing

This website uses the following additional cookies:

(List the cookies that you are using on the website here.)